বাংলাদেশিসহ ৫ শিক্ষার্থী বহিষ্কার, সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির ৮ শিক্ষার্থী অনশনে

সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির ৮ শিক্ষার্থী শনিবার বিকেল থেকে আমরণ অনশন শুরু করেছেন। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের নয়াদিল্লির চাণক্যপুরীর সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির ৮ শিক্ষার্থী আজ শনিবার বিকেল ৪টা থেকে আমরণ অনশন শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে স্কলারশিপের বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে কঠোর শাস্তির মুখে পড়েছেন ভারত ও বাংলাদেশের ৫ শিক্ষার্থী।

ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কার এই ৮ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ তলায় প্রশাসনিক কক্ষের সামনে আমরণ অনশন শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

এর আগে, গত ৪ নভেম্বর শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভারত ও বাংলাদেশের ৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মাস্টার্সের (ভারতীয়) শিক্ষার্থী সাহিল কুমার সিংঘ এবং সমাজবিজ্ঞান বিভাগের পিএইচডি শিক্ষার্থী উমেশ যোশিকে (ভারতীয়) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।

এছাড়া সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স শিক্ষার্থী অমর আহমেদ (ভারতীয়) ও আইন বিভাগের মাস্টার্স শিক্ষার্থী ভীম রাজকে (ভারতীয়) চলতি বর্ষের জন্য সাসপেন্ড করা হয়।

এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সুদীপ্ত দাসকে (অর্থনীতি বিভাগের পিএইচডি স্কলার) চলতি সেমিস্টারের জন্য সাসপেন্ড (সাময়িক বহিষ্কার) করেছে।

২০১০ সালে সার্কভুক্ত দেশগুলোর (সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কো-অপারেশন) মধ্যে একটি চুক্তির মাধ্যমে সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল মানসম্মত শিক্ষা দান।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই শাস্তির প্রতিবাদে গত শনিবার বিকেল ৩টা থেকে রোববার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৮টি দেশের প্রায় ৮০ জন শিক্ষার্থী ২৪ ঘণ্টার অনশন করেন। তবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাননি বলে অভিযোগ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের।

শিক্ষার্থীদের সাধারণ পরিষদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, শাস্তির আদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহার এবং পুনরায় সংলাপ শুরু না করলে আজ রাতেই ৮টি দেশের ৪০-৫০ শিক্ষার্থী এই আমরণ অনশনে যোগ দেবেন।

ভারতীয় শিক্ষার্থী  উমেশ যোশি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের দাবি পূরণে অনির্দিষ্টকালের অনশনে বসেছি। আমাদের ওপর থেকে বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত প্রশাসনের সঙ্গে আর কোনো আলোচনায় বসব না। দাবি পূরণ না পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাব।'

দ্য ডেইলি স্টারের কাছে আসা বহিষ্কার এবং স্থগিতাদেশে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পরিপন্থী ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য তাদের সাময়িক বরখাস্ত ও বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ।

এর আগে, গত ১৩ অক্টোবর থেকে শিক্ষার্থীরা মেধা বৃত্তি বৃদ্ধি এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার কাজে প্রতিনিধিত্বের জন্য শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন।

করোনা মহামারি এবং বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণে দিল্লিতে জীবনযাপনের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে শিক্ষার্থীরা মাস্টার্সের জন্য মেধা বৃত্তি ৫ হাজার রুপি থেকে বাড়িয়ে  ৭ হাজার রুপি এবং পিএইচডি শিক্ষার্থীদের জন্য ২৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে জিআরএফ (জুনিয়র রিসার্চ ফেলো) অনুযায়ী ৩১ হাজার রুপি করার দাবিতে এই আন্দোলন শুরু করেন।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ডে পর্যাপ্ত অর্থ নেই। তাই শিক্ষার্থীদের এই দাবি মানা সম্ভব নয়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এই আন্দোলন দমাতে প্রশাসন পুলিশ ডেকে ভয় দেখানোর কৌশল নিয়েছে। কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে পুলিশ এবং ডিটেনশন ভ্যান মোতায়েন করেছে, যা সাউথ এশিয়ান আইন-২০১৬ এর পরিপন্থী। আইন অনুযায়ী এসএইউ একটি আন্তর্জাতিক ইউনিভার্সিটি।

চলতি সেমিস্টারে জন্য সাময়িক বহিষ্কৃত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সুদীপ্ত দাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও প্রশাসন সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে আমাকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত। আমাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্যাম্পাস ছাড়তে বলা হয়েছে। যা আমার জন্য অসম্ভব।'

Comments

The Daily Star  | English

Export data gap balloons to $4b despite 2024 reset

The mismatch has prompted fresh calls among economists for investigations.

11h ago