বইমেলা বিশেষ-৪

তরুণদের বিভ্রান্ত করে দাসে পরিণত করা হচ্ছে : আসিফ নজরুল

প্রতিদিনই নতুন নতুন বই আসছে অমর একুশে বইমেলায়। মেলার প্রথম দিনই প্রথমা থেকে প্রকাশ হয়েছে শিক্ষক ও গবেষক আসিফ নজরুলের উপন্যাস 'আমি আবু বকর'। নতুন বই, সমাজ ও বইমেলা নিয়ে তিনি তার ভাবনার কথা জানিয়েছেন দ্য ডেইলি স্টারকে।

'আমি আবু বকর' ইতোমধ্যে মেলায় সাড়া ফেলেছে। এই উপন্যাসে নতুন কী বার্তা আছে? 

আসিফ নজরুল: বইটি ইতোমধ্যে তৃতীয় মুদ্রণ শেষ হয়ে চতুর্থ মুদ্রণ প্রিন্ট হতে যাচ্ছে। কেন বেশি সাড়া- আমার ধারনা এটা প্লটের কারণে। প্লট সম্পর্কে আমি আগেই বলেছি। বিভিন্ন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের হলগুলোতে নির্যাতন করা হয়। সেরকম একটা নির্যাতনের বিষয় এখানে তুলে ধরা হয়েছে। জাতীয় রাজনীতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের ভূমিকা কেমন, তুলে ধরা হয়েছে। ছাত্রজীবনের প্রেম-ভালোবাসা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, বেদনা এগুলো এসেছে। এসব কারণে হয়তো পাঠকের আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।

তরুণদের নিয়ে অনেকেই হতাশা ব্যক্ত করেন, কিন্তু আপনার সঙ্গে তারুণ্যের সখ্যতা দারুণ। কিভাবে দেখেন তরুণদের? 

আসিফ নজরুল: আমি তরুণদের নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করি না। আমি মনে করি তরুণদের নিয়ে আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হতাশা রয়েছে। তরুণদের মাঝে পরিকল্পিতভাবে মাদক ও পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এটা বেশি হচ্ছে। এটা তরুণদের দোষ না। তরুণদের নিয়ে যারা ব্যবসা করে তাদের দোষ। কারিকুলাম নিয়ে যেগুলো হচ্ছে তাতে আমাদের শিশু কিশোরদের পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। তাদেরকে হতাশ করা হচ্ছে। এরাই তো তরুণ হবে।

তরুণরা রাজনীতি নিয়ে হতাশ কারণ তারা ভোট দিতে পারছে না। এই হতাশাগুলো সৃষ্টি করেছে বৃদ্ধ প্রজন্ম। আমি এদেরকে বলি মেয়াদউত্তীর্ণ প্রজন্ম। সমাজে ষাটোর্ধ কিংবা সত্তরোর্ধ্ব ব্যক্তিরা তরুণদের ভবিষ্যৎ জিম্মি করে রেখেছে। সমাজ তরুণদের বিভ্রান্ত করে তাদের দাসে পরিণত করছে। এটা মোয়াদউত্তীর্ণ প্রজন্মের দোষ। আমি আশা করি তরুণরা বুঝতে পারবে। তারা একদিন বিজয়ী হবে।

একুশে বইমেলা আমাদের সংস্কৃতি জাগরণে কতটা ভূমিকা রাখে বলে মনে করেন? 

আসিফ নজরুল : সাংস্কৃতিক জাগরণ তো একটা বড় ব্যপার। সাংস্কৃতিক জাগরণ শুধু বই দিয়ে হয় না। অনেক কিছু দিয়েও হয়। বইয়ের একটা বিরাট ভূমিকা থাকে। আমরা বাঙালি, বাংলা ভাষা, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন এগুলো ভালো বিষয়। সাংস্কৃতিক জাগরণ যেটা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জাগরণ, নয়া উপনিবেশবাদ যে বাংলাদেশে জেঁকে বসেছে, সামাজিক অনুষ্ঠানে বাংলা ভাষার প্রয়োগ নেই, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আগ্রাসনে প্রতিরোধে বইমেলার ভূমিকা গৌণ। কারণ আজকের লেখকরা এসব বিষয়কে এড়িয়ে যান। তারা সমাজ বাস্তবতা থেকে পাঠকদের বহুদূরে নিয়ে যাবার চেষ্টা করেন। কিন্তু পাঠকরা এসব পছন্দ করে না। সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক অর্থনৈতিক আগ্রাসন সম্পর্কে তারা জানতে চায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায়ই ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠে। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে অপরাধীদের যথাযথ শাস্তি হয় না। উচ্চশিক্ষার এই পরিবেশ নিয়ে কী বলবেন? 

আসিফ নজরুল: ধর্ষণের ঘটনার যথাযথ শাস্তি হয় না কারণ ধর্ষণের সাথে শক্তির সম্পর্ক আছে। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ও ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে থাকা শিক্ষকরা ধর্ষণের সঙ্গে অধিকাংশে জড়িত থাকলে তাদের শাস্তি হয় না। এমন একটা রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ক্ষমতাসীন এবং তাদের আশেপাশের লোকদের জন্য বিচার নেই। বিচার হলো দুর্বল লোকের জন্য। বিচার হলো ভিন্নমত এবং বিরোধীদলের জন্য। ফলে এমন একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যেটা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য না। এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। যদি রাষ্ট্র শাস্তি না দেয় সামাজিকভাবে আমাদের বয়কট করা উচিত।

আপনি সাংবাদিকতা করেছেন। বর্তমান সাংবাদিকতা ও শিক্ষকতার পেশা কতটা সম্মানের?

আসিফ নজরুল : আমি যখন সাংবাদিকতা করেছি তখন এই পেশা অত্যন্ত সম্মানজনক ছিল। এখন সে অবস্থা নেই। একটা রাষ্ট্রে যখন একনায়কতন্ত্র জাঁকিয়ে বসে তখন স্বাধীন সাংবাদিকতা থাকে না। সাংবাদিকতার সেই সম্মানটাও থাকে না। শিক্ষকতার ক্ষেত্রে এখনো স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আমি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান যে ম্যাজিট্রেসি ও সাংবাদিকতা ছেড়ে শিক্ষকতায় এসেছি। অন্তত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় অন্যান্য পেশার চেয়ে বেশি স্বাধীনতা আছে। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষকরাই এই স্বাধীনতাকে বিসর্জন দেন সামান্য প্রলোভনে কিংবা ভয়ে। কিন্তু স্বাধীনতা বিসর্জন না দিয়ে স্বাধীন মানসিকতা নিয়ে যে শিক্ষকতা করা যায় এটা আমার জীবনে দেখেছি।

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka slams desecration of nat’l flag in Kolkata

The government yesterday strongly condemned the desecration of Bangladesh’s national flag and the burning of Chief Adviser Prof Muhammad Yunus’s effigy in Kolkata as “deplorable acts”.

3h ago