সোমেন চন্দ: আততায়ীর হাতে অকালে ঝরে পড়া বিপ্লবী গল্পকার

তাদের ২ জনের মধ্যে আদর্শগত দারুণ মিল পাওয়া যায়। তারা ছিলেন বামপন্থি ভাবধারায় বিশ্বাসী ও কমিউনিস্ট রাজনীতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তাদের সাহিত্যেও সেই বিশ্বাস ও ভাবধারাটিও সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
সোমেন চন্দ
সোমেন চন্দ (১৯২০-১৯৪২)। ছবি: সংগৃহীত

মাত্র ২২ বছরের জীবন তার। দিনের হিসেব করলে তারও কম। তবে এর মধ্যে তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তা অসামান্য। বাংলা ভাষায় প্রথম দাঙ্গার গল্প লেখায় পথিকৃৎ তিনি।

স্বল্পায়ুতে বাংলা সাহিত্যে বিপ্লব ঘটিয়েছেন ২ জন। কবিতায় সুকান্ত ভট্টাচার্য ও গদ্য বা কথাসাহিত্যে সোমেন চন্দ। তারা ২২-এর কোটা পেরোতে পারেননি। সুকান্ত চলে গেছেন ২০ বছর বয়সে। সোমেন চন্দ ২১ বছরের শেষভাগে।

তাদের ২ জনের মধ্যে আদর্শগত দারুণ মিল পাওয়া যায়। তারা ছিলেন বামপন্থি ভাবধারায় বিশ্বাসী ও কমিউনিস্ট রাজনীতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তাদের সাহিত্যেও সেই বিশ্বাস ও ভাবধারাটিও সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

১৯২০ সালের ২৪ মে ঢাকার কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যার তেঘরিয়া গ্রামে মাতুলালয়ে জন্ম নেওয়া সোমেন চন্দের কমিউনিস্ট রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে 'অগ্নিযুগের কথা' গ্রন্থে সতীশ পাকড়াশী লিখেছেন, '১৯৩৯ সালের মাঝামাঝি সোমেন তার দক্ষিণ মৈশুণ্ডী পাড়ায় আমাদের কমিউনিস্ট পাঠচক্রে যোগ দেয়। গোপনে ক্লাস হতো। সে সমস্ত মন-প্রাণ দিয়ে শুনত-বেশি প্রশ্ন করত না।'

সোমেন চন্দের জীবনে যে ২ জন সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছেন তাদের মধ্যে সতীশ পাকড়াশী একজন। অন্যজন রণেশ দাশগুপ্ত।

রণেশ দাশগুপ্তের সংস্পর্শ আমূল বদলে দিয়েছিল সোমেন চন্দকে। কেবল রাজনৈতিক বিষয়ই নয়, প্রগতি লেখক সংঘে যোগ দেওয়ার পর বলা যায়, কাদামাটির ছাঁচে ফেলে সোমেন চন্দকে গড়েছেন রণেশ দাশগুপ্ত।

রণেশ দাশগুপ্তের অনুপ্রেরণায় বাংলা সাহিত্য থেকে বিশ্বসাহিত্য, রবীন্দ্রনাথ থেকে মোপাঁসা, রোলাঁ, বারবুস, জিদ, মারলো, র‌্যালফ ফক্স সর্বত্রই বিচরণ করেছেন সোমেন চন্দ।

স্পেনের গৃহযুদ্ধে ফ্রাঙ্কোর জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিস্ট বাহিনীর বিরুদ্ধে রিপাবলিকানদের হয়ে লড়াই করা ক্রিস্টোফার কডওয়েল, র‌্যালফ ফক্স ও জন কনফোর্ডের আত্মদান সোমেনকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। প্রথম ২ জন ৩০-র কোটা অতিক্রম করলেও যুদ্ধে জন কনফোর্ড নিহত হয়েছিলেন ২১ বছর বয়সে। স্পেনের গৃহযুদ্ধে ফ্রাঙ্কোর সেনারা তুলে নিয়ে হত্যা করেছিল ফেদেরিকো লোরকাকেও। লোরকার মরদেহ শেষ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

তাদের আত্মদান নিয়েই সোমেন চন্দ লিখেছিলেন 'শুভদিনের সংবাদ শোন' শিরোনামের কবিতা। কবিতাটি এমন—'রালফ্ ফক্সের নাম শুনেছো?/ শুনেছো কডওয়েল আর কনফোর্ডের নাম?/ ফ্রেদরিকো গার্সিয়া লোরকার কথা জান?/এই বীর শহিদেরা স্পেনকে রাঙিয়ে দিল,/ সবুজ জলপাই বন হলো লাল,/ মার – বুক হল খালি –/ তবু বলি, সামনে আসছে শুভদিন।'

সোমেনের বিপ্লবী ধ্যান-ধারণায় তারা যে কতোটা উপস্থিত ছিলেন তা সহজেই অনুমেয়। স্পেনের গৃহযুদ্ধে তাদের নিহতের সংবাদ বেমালুম চেপে গিয়েছিল ব্রিটেনের গণমাধ্যম। কিন্তু, তাতেও সে সংবাদ আটকায়নি। সোমেনের লেখা যে ৩টি কবিতা শেষমেশ পাওয়া গিয়েছিল সেগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।

মৃত্যুর কয়েক মাস আগে বন্ধু অমৃতকুমার দত্তকে লেখা চিঠিতেও পাওয়া যায় সোমেনের সেই আদর্শিক মূল্যবোধ।

চিঠিতে সোমেন লিখেছেন, 'গত কয়েকদিন রেল-শ্রমিকদের নিয়ে বেশ ঝামেলায় ছিলাম। লেখার জন্য একটুও সময় পাই না। তবু লিখতে হবে, মেহনতী মানুষের জন্য, সর্বহারা মানুষের জন্য আমাদের লিখতে হবে।… র‌্যালফ ফক্সের বই পড়ে আমি অন্তরে অনুপ্রেরণা পাচ্ছি। কডওয়েলের বইটিও আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। এ না হলে কি মহৎ সাহিত্যিক হওয়া যায়? স্পেনের পপুলার ফ্রন্ট সরকারের সমর্থনে তাদের আত্মবিসর্জন ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।'

সোমেন চন্দের কর্মজীবন ৫ বছরেরও কম। এই সময়ের মধ্যেই লিখেছেন ২৪টি গল্প ও একটি অসম্পূর্ণ উপন্যাস। আবার এর মধ্যে মেডিকেল কলেজে ভর্তি। ভগ্ন স্বাস্থ্যের জন্য বেরিয়ে আসেন মেডিকেল কলেজ থেকে। সেখান থেকে বেরিয়ে প্রগতি লেখক সংঘ আর রাজনীতিতে পুরোপুরিভাবে যোগ দেন।

সোমেনের সাহিত্যের প্রথম দিকের গল্পগুলোয় শরৎচন্দ্রের প্রভাব লক্ষণীয়। যেমন 'রাত্রিশেষ', 'স্বপ্ন', 'গান' ও 'পথবর্তী'—এসব গল্পে শরৎচন্দ্রের নিগূঢ় ছাপ পাওয়া যায়। এটি নিজেও উপলব্ধি করেছিলেন সোমেন। এর ফলে তিনি খানিকটা অবসাদে ভুগছিলেন।

১৯৩৮ সালে লেখা বন্ধু নির্মলকুমার ঘোষকে চিঠিতে সোমেন লিখেন, 'বছর খানেক সেই নতুন দৃষ্টিভঙ্গির কোন পথ খুঁজে পেতাম না, এখন কতকটা পেয়েছি বলে মনে হচ্ছে।'

সোমেন ততদিনে যোগ দেন বামপন্থি রাজনীতিতে। 'সবুজ বাংলার কথা' সম্পাদক নির্মল কুমার ঘোষ ঘোর কমিউনিস্টবিরোধী থাকায় সোমেন তা তাকে বলতে পারেননি।

১৯ বছর বয়সে 'ইঁদুর' গল্প লেখা সোমেনের সঙ্গে আগের সোমেনের পার্থক্য সহজাত হিসেবেই ধরা দেয়। পরবর্তীতে ৬৭টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে 'ইঁদুর'।

ইঁদুর গল্পের সেই দুর্লভ সামগ্রী হিসেবে খ্যাত দুধের সঙ্গে মিশে যাওয়া আকাঙ্ক্ষা, অনটন, অভাব আর স্বপ্ন আজো বিদ্যমান। এই গল্পে ইঁদুরের উপদ্রবেও ইঁদুর ধরার কল কেনার সামর্থ্য না থাকায় মায়ের 'উত্তর' আর 'ভয়'—এ দুয়ে মিলে সোমেন যে শব্দের মেটাফোর ব্যবহার করেছেন তা বিস্ময়কর।

কমিউনিস্ট রাজনীতি ও পুঁজিবাদী প্রশাসনকে যথাক্রমে ইঁদুর ও ইঁদুর ধরার কল হিসেবে বিবেচনা করে এ গল্পে সমসাময়িক প্রেক্ষাপটের চরম বাস্তবতা তুলে ধরেছেন সোমেন।

সোমেনের গল্প প্রসঙ্গে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন, 'নিজস্ব একটি জীবনদর্শন না থাকলে সাহিত্যিক হওয়া যায় না। সোমেন চন্দ ছিল কমিউনিস্ট। সাহিত্যিক হিসেবেও তার রচনায় নানাভাবে ফুটে উঠেছে কমিউনিজমের জয়ধ্বনি।' তবে তা সোমেনের মৃত্যুর পরে।

তারও আগে ১৯৪০ সালে বন্ধু অমৃতকুমার দত্তকে লেখা চিঠিতে সোমেন লিখেছিলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যচর্চা প্রসঙ্গেও। চিঠিতে সোমেন লিখেছেন, 'মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বড় লেখক হতে পারেন, তাঁর লেখায় প্রগতির ছাপ আছে। তবে রাজনীতির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ মনে হয় ক্ষীণ, আর পড়া লেখাও কম।'

সোমেন জীবনে কলকাতা গিয়েছিলেন একবার। কলকাতা গিয়ে সোমেন চন্দ চেয়েছিলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে; কিন্তু তাদের সাক্ষাৎ হয়নি। সোমেনের সঙ্গে দেখা হয়নি তেমন কোন নামজাদা সাহিত্যিকেরই।

কলকাতায় গিয়ে সোমেন উঠেছিলেন 'সবুজ বাংলার কথা'-র সম্পাদক নির্মল কুমার ঘোষের বাড়িতে। সেখানেই তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল সুরেন্দ্রনাথ গোস্বামী ও বিনয় ঘোষের সঙ্গে। কলকাতাতেই তোলা হয়েছিল সোমেনের একমাত্র ছবিটি। সেই ছবিটিই এখন অব্দি সবেধন নীলমণি। ছবিটি তুলেছিলেন গৌরপ্রিয় দাশবন্ধু।

সোমেন চন্দের শক্তিমান কথাসাহিত্য যেমন বারবার আলোচনার দাবি রাখে ঠিক তেমনি আলোচনার দাবি রাখে তার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটিও। সোমেনের মৃত্যুটি সম্ভবত বাংলা সাহিত্যে সবচেয়ে পীড়াদায়ক মৃত্যু। যে হত্যাকাণ্ড হয়েছিল কেবলমাত্র আদর্শিক মতপার্থক্যে।

সোমেন চন্দের হত্যাকাণ্ডের দিনটি নিয়ে সরদার ফজলুল করিম আত্মস্মৃতিতে লিখেছিলেন, '১৯৪২ সালের ৮ই মার্চ ঢাকার বুদ্ধিজীবী, লেখক প্রভৃতি শহরে এক ফ্যাসিবাদবিরোধী সম্মেলন আহবান করেন। সম্মেলন উপলক্ষে শহরে খুবই উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং রাজনৈতিক মহল প্রায় তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। প্রথম যারা সম্মেলনের পক্ষে, দ্বিতীয় যারা সরাসরি বিপক্ষে, তৃতীয় যারা মোটামোটিভাবে তুষ্ণীভাব অবলম্বন করে নিরপেক্ষতার আবরণ নিয়েছিলেন। শেষোক্তদের মধ্যে প্রধানত কংগ্রেস মতবাদের অনুসারীরা ও দ্বিতীয় দলে ছিলেন জাতীয় বিপ্লবী, বিশেষত শ্রীসংঘ ও বিভিন্ন লোকেরা। যাই হোক, সম্মেলনের দিন সকালে উদ্যোক্তাদের অন্যতম তরুণ সাহিত্যিক সোমেন চন্দ আততায়ীর হাতে নিহত হন।'

এই আততায়ীরা কারা তা অনেকেরই জানা। সুভাষপন্থি বা ফরওয়ার্ড ব্লকের জাতীয়তাবাদীরাই তাকে হত্যা করেছে।

সোমেন চন্দের হত্যাকাণ্ড কি এড়ানো যেত? হয়তো যেত। আদর্শগত পার্থক্যে তখন ২ দলই বেপরোয়া। ২ দলই তখন গড়ছে ভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী লীনা নাগ অন্যদের নিয়ে তখন ঢাকায় গড়ছেন নারী শিক্ষা মন্দির। অন্যদিকে সোমেন চন্দ ও অন্যরা গড়েছেন প্রগতি পাঠাগার। এরও আগে ১৯৩১ সালে ইংরেজ সরকার লীনা নাগকে গ্রেপ্তার করেছিল। কারাগারে বিনা বিচারে আটক রেখেছিল ৭ বছর। জেল থেকে ফিরে ফের বামপন্থি রাজনীতিতে সক্রিয় হন লীনা নাগ। তার সম্পাদনায় বের হয় জয়শ্রী।

দাবি করা হয়—সুভাষপন্থি ফরওয়ার্ড ব্লকের কর্মীরাই ছুরিকাঘাতে হত্যা করে সোমেন চন্দকে। লীলা নাগের সঙ্গে সোমেন চন্দের পূর্ব-পরিচয় ছিল। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী লিখেছিলেন, 'অত্যন্ত পশ্চাৎপদ ঢাকা শহরে বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা করছিলেন, 'বুদ্ধির মুক্তি' আন্দোলনের বুদ্ধিজীবীরা; পাশাপাশি বুদ্ধদেব বসুরাও ছিলেন। দুই ধারা এক হয় নি। এক হওয়া সম্ভব ছিল না। লীলা নাগের ধারা আর সোমেন চন্দের ধারাও এক হয় নি, বরং এক পক্ষ আরেক পক্ষকে উৎখাত করতে চেয়েছে।' এই ২ ধারা একীভূত হবে না এবং হয়নি এটিই ছিল বাস্তব।

কিন্তু এর রেশ টানতে হয়েছিল সোমেন চন্দের মতো প্রতিভাবান সাহিত্যিকের নৃশংস হত্যাকাণ্ড দিয়ে। আদর্শিক মতবিরোধ কতটা চওড়া হলে এমন হত্যাকাণ্ড সম্ভব ছিল।

ফ্যাসিবাদবিরোধী সম্মেলনকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের মিছিল যখন ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের বটতলার কাছাকাছি পৌঁছায় তখন আততায়ীরা মিছিলটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাকিরা পালাতে পারলেও ছুরিকাঘাতে বিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সোমেন চন্দ। হত্যাকারীরা রড দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে। শাবল দিয়ে খুবলে নেয় চোখ, টেনে ছিঁড়ে ফেলে জিভ।

নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, সোমেন চন্দ উগ্র জাতীয়তাবাদের বলি। সুভাষপন্থি বা ফরওয়ার্ড ব্লক ও রেভ্যুলেশনারি সোশালিস্ট পার্টি যেমন বরাবরই স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে। ঠিক তেমনি অন্যদিকে কমিউনিস্টরাও বিপ্লবী চেতনায় মত্ত হয়ে ইংরেজ আর সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে বরাবরই লড়াই করেছে।

জাতীয়তাবাদীরা মনে করতো কমিউনিস্টরা দেশদ্রোহী। উগ্র জাতীয়তাবাদীরা মনে করতো কমিউনিস্টরা ঘরের শত্রু বিভীষণ। সুতরাং তাদের আগে নির্মূল করাটাই সর্বপ্রথম কর্তব্য।

সোমেন চন্দের মৃত্যুর কয়েকদিন পর ১৯৪২ সালের ২৩ মার্চ আনন্দবাজার পত্রিকায় বিবৃতিতে আবু সয়ীদ আইয়ুব, বুদ্ধদেব বসু, সুবোধ ঘোষ, অমিয় চক্রবর্তী, প্রমথ চৌধুরী, সমর সেন ও অন্যরা বলেছিলেন, 'পূর্ব হইতে চিন্তা করিয়া ও সম্পূর্ণ অকারণেই তাঁহাকে হত্যা করা হইয়াছে এবং সম্ভবত তাঁহার বিপক্ষ দলই এই কার্য করিয়াছে।'

এ সত্ত্বেও সোমেন চন্দের হত্যাকাণ্ড নিয়ে তখন যেমন কেউ পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর প্রয়োজন বোধ করেনি, ঠিক তেমনি পুলিশও স্ব-উদ্যোগী হয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তবে সোমেন চন্দের নৃশংস হত্যাকাণ্ড দারুণভাবে আলোড়িত করেছিল এক কিশোরকে। তিনি আর কেউ নন, ১৬ বছর বয়সী সুকান্ত ভট্টাচার্য। সুকান্ত কবিতায় লিখেছিলেন—

'বিগত শেষ-সংশয়; স্বপ্ন ক্রমে ছিন্ন,

আচ্ছাদন উন্মোচন করেছে যত ঘৃণ্য,

শঙ্কাকূল শিল্পীপ্রাণ, শঙ্কাকূল কৃষ্টি,

দুর্দিনের অন্ধকারে ক্রমশ খোলে দৃষ্টি

হত্যা চলে শিল্পীদের, শিল্প আক্রান্ত,

দেশকে যারা অস্ত্র হানে, তারা তো নয় ভ্রান্ত

বিদেশী-চর ছুরিকা তোলে দেশের হৃদ্‌ বৃন্তে

সংস্কৃতির শত্রুদের পেরেছি তাই চিনতে।'

 

সূত্র: সোমেন চন্দ/ হায়াৎ মামুদ

ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের লেখক শহীদ সোমেন চন্দ/ সম্পাদনা: সাধন চট্টোপাধ্যায়, সিদ্ধার্থরঞ্জন চৌধুরী

চল্লিশের দশকের ঢাকা/ সরদার ফজলুল করিম

সোমেন চন্দ রচনাসমগ্র/ ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ

বাংলা সাহিত্যে প্রগতির ধারা/ হায়দার আকবর খান রনো

সোমেন চন্দের একশ' বছর/ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

ahmadistiak1952@gmail.com

Comments