গবেষণায় বয়স কমে গেল ইঁদুরের, মানুষের ক্ষেত্রেও কি সম্ভব?

যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের এক ল্যাবে ঘটেছে বিস্ময়কর এক ঘটনা। একটি বৃদ্ধ অন্ধ ইঁদুর তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছে। শুধু তাই নয়, একইভাবে তারুণ্য ফিরে পেয়েছে ইঁদুরটি। ফিরে পেয়েছে হারানো স্বাস্থ্য। কিডনি, মস্তিষ্কসহ তার সবকিছুই আগের চেয়ে বেশি সচল হয়ে উঠেছে।

একই ল্যাবে অপর একটি কম বয়সী ইঁদুরের চামড়া কুঁচকে প্রায় বৃদ্ধ হয়ে যায়। শরীরের প্রতিটি টিস্যুতেই সমস্যা দেখা দেয়। অর্থাৎ, ইঁদুরের বয়স বাড়ানো-কমানো সম্ভব হয়েছে ল্যাবেই। ল্যাবে এভাবে ইঁদুরের মতো মানুষের বয়সের ঘড়িটিকেও কি থামিয়ে দেওয়া সম্ভব? সম্প্রতি এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

গবেষণায় দেখানো হয়েছে, প্রাণীদেহে বার্ধক্য একটি পরিবর্তনযোগ্য প্রক্রিয়া। চাইলেই এই বার্ধক্য বিপরীত দিকে পরিবর্তন করা সম্ভব বলে মনে করেন হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের জেনেটিক্সের প্রফেসর সিনক্লেইয়ার এবং সেন্টার ফর বায়োলজি অব এজিং রিসার্চের সমন্বয়ক পল এফ গ্লেন।

তাদের মতে, মানুষের তারুণ্যও কম্পিউটারের মতো ব্যাকআপ হয়ে থাকে। সেটি পুনরায় সচল করা যায়। সিনক্লেইয়ার তার নতুন গবেষণায় এমনটিই জানিয়েছেন।

একটি পুরনো কম্পিউটার যেমন বিভিন্ন করাপ্ট ফাইলের কারণে ধীরে ধীরে কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, মানুষের দেহেও এরকম ঘটনা ঘটে। তাদের মতে, দেহের কোষগুলো ডিএনএর নির্দেশনা অনুযায়ী চলে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের কোষগুলো ডিএনএর নির্দেশনা আর মানতে পারে না এবং বার্ধক্যের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। একেই তারা 'ইনফরমেশন থিওরি অব এজিং' বলে অভিহিত করেছেন।

ডিএনএকে মানুষের দেহের হার্ডওয়ারের সঙ্গে তুলনা করলে, এপিজিনোমকে সফটওয়ার বলা যায়। মানুষের দেহে বার্ধক্যের পেছনে মূল কারণ জিন। এই এপিজিনোমই মানব দেহের জিনগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। ধীরে ধীরে সেই জিনগুলো নানা কারণে আর নির্দেশনা মেনে কাজ করতে পারে না।

তবে সিনক্লেইয়ারের মতে, একবার দেহের সেই পর্যায়ে টার্গেট করতে পারলে বয়স যতই হোক, তাতে কোনো সমস্যা হবে না। দেহে যদি কোনো রোগও থাকে, সেটাও সমস্যা করতে পারবে না। শরীর তার আগের অবস্থায় ফিরে আসতে সক্ষম হবে। তবে গবেষকরা এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেননি।

ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) পড়ার সময় সিনক্লেইয়ার এই গবেষণার ধারণা পান। ৩৯ বছর বয়সে তিনি যে ইঁদুর নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন, এখন তার বয়স ৫৩ হলেও সেই ইঁদুরটি তার হারানো যৌবনে ফিরতে শুরু করেছে।

তবে সিনক্লেইয়ার বলেন, 'যারা নিয়মমাফিক জীবনযাপন করেন, তাদের বার্ধক্যের প্রক্রিয়া কিছুটা ধীরে চলে। যারা অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করেন, তাদের বার্ধক্যের প্রক্রিয়াও দ্রুত চলে। এই গবেষণায় দেখা গেছে যে, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের জন্য মানবদেহের যে ক্ষতি হয় সেটা মেরামত করা সম্ভব।'

এই বিজ্ঞানীরা বলছেন, গবেষণা থেকে তারা যেসব তথ্য পেয়েছেন তা বার্ধক্যজনিত রোগের চিকিৎসায় বিশেষ অবদান রাখবে।

সূত্র: সিএনএন

গ্রন্থনা: আরউইন আহমেদ মিতু

Comments

The Daily Star  | English

Govt wants to make countrymen true source of power: CA

He also said his government's responsibility is to bind people into a larger family

44m ago