‘মনের অজান্তে যাদের কষ্ট দিয়েছি, তাদের কাছে ক্ষমা চাই’
চলছে অমর একুশে বইমেলা। প্রতিদিন মেলায় আসছে নতুন বই। এর মধ্যে অনন্যা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে কথাশিল্পী ইমদাদুল হক মিলনের আত্মজীবনী 'যে জীবন আমার ছিল' বইটি । বইমেলা ও আত্মজীবনী নিয়ে তিনি কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।
একজন কথাশিল্পী কতটা নিজের কথা বলেন আর কতটা সমাজ থেকে নেন?
ইমদাদুল হক মিলন: কথাশিল্পের ক্ষেত্রে দুটি সমন্বয় হয় শিল্পীর লেখায়। আর লেখক সমাজেই বসবাস করে, সেখান থেকে উপাদান নেন। তবে আমার জীবনীভিত্তিক বা আত্মজৈবনিক উপন্যাস আগে প্রকাশ হয়েছিলো, সেগুলো দেখলে ভিন্নধারনা পাওয়া যাবে। ৪ পর্বের সেগুলো হচ্ছে- কেমন আছ সবুজপাতা, জিন্দা পাহাড় মায়ানগর, একাত্তর ও একজন মা। পরে ৪টি সংকলিত হয়েছে 'এমন জনম নামে'।
একুশের মেলায় 'যে জীবন আমার ছিল' প্রকাশ হয়েছে। এতে কি কি বিষয় এসেছে ?
ইমদাদুল হক মিলন: এটা আমার প্রথম আত্মজীবনী। আমার প্রথম লেখা প্রকাশ হয়েছে ১৯৭৩ সালে। চলতি বছর লেখক জীবনের ৫০ বছর। এতো বছরের পথচলা কেমন ছিল, সেটিও জানবেন পাঠকরা। সেই প্রসঙ্গে বইটি প্রকাশ করি। এতে জীবনের অনেক অংশ বলতে চেয়েছি। পাশাপাশি লেখকদের সঙ্গে নানান স্মৃতি, আড্ডা আনন্দ ঘটনা। তবে অন্য আত্মজীবনী যেমন হয়, তেমন ধারাবাহিকভাবে নয়। বইটা পড়তে গিয়ে কখনো আমার বর্তমানে, কখনো অতীতে চলে যাবেন পাঠক। আমার দেশ-বিদেশের জীবন, আমার সঙ্গে লেখকদের সম্পর্কের কথা পাওয়া যাবে। বিশেষ করে পাঠকরা নতুন করে পরিচিত হতে পারবেন বিভিন্ন লেখকদের সঙ্গে। চারপাশের ঘটনা, যাপিত জীবন ও বিশেষভাবে আমার লেখক জীবনের কথাই উঠে এসেছে।
বাংলাদেশের লেখকের আত্মজীবনীতে নিজেকে শুদ্ধ মানুষ হিসেবে উপস্থাপনের একটা চেষ্টা দেখা যায়। আপনার ক্ষেত্রে কি তাই ঘটেছে?
ইমদাদুল হক মিলন: যে জীবন আমার ছিল' মূলত আত্মজীবনী, আরেক অর্থে স্মৃতিকথা। আনন্দ বেদনার দুই জীবন তুলে ধরেছি। আমি সৎভাবে, ভালোভাবে সব ঘটনা তুলে ধরেছি। তবে বহু কিছু আছে একজন মানুষের-- যা প্রকাশ করা যায় না, 'শেল্ফ এডিট' করতে হয়। এটা সবাই করে, ফলে দেখুন কথাশিল্পী সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন অর্ধেক জীবন। বলা যায়, গোপন জীবন সামনে আনা যায় না, আনলে সেটা মানায় না। আনাকে সমাজ ভালোভাবে দেখে না। আর জীবনের সব কথা আনা উচিৎও না।
সব না আনলে এমন আত্মজীবনীকে আত্মজীবনী বলা যায় কিনা জানি না। তবে জীবনের এই প্রান্তে এসে 'কারো মনে কষ্ট দিয়েছেন, ক্ষতি করেছেন কি। এমন বিষয় ভাবায় আপনাকে?
ইমদাদুল হক মিলন: অনেক কথা হয়তো লিখিনি, তবে ভাবায়। আমি এই জীবনে মনের অজান্তে যাদের কষ্ট দিয়েছি, তাদের কাছে ক্ষমা চাই। নির্দ্বিধায় ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইব।
আপনার সবচেয়ে বড় উপন্যাস নূরজাহান। অনেকের অভিযোগ ছোট ঘটনা অনেক বড় করেছেন, শিল্পের নামে আপনি নিজের সঙ্গে বা পাঠকের সঙ্গে অবিচার করেছেন।
ইমদাদুল হক মিলন: কেউ কেউ একে ক্লাসিক উপন্যাসও বলেছেন, প্রশংসা করেছেন মুখে ও লিখে। আবার কেউ বলেছেন আমি অহেতুক সাধারণ ঘটনাকে টেনে বড় করেছি। আমি পাঠকদের সম্মান করি, তারা নিশ্চয় পড়ে মতামত দিয়েছেন। তবে আমি এটা বিশ্বাস করি আমি খেটেখুটে, পরিশ্রম করলে আরও ভালো উপন্যাস উপহার দিতে পারতাম।
মেলায় দেখেছি আপনাকে। এবারের মেলায়ও মানুষের চলাচলে অনেক কষ্ট হচ্ছিলো। দীর্ঘ সময় পেরিয়েও একুশে বইমেলার পরিচালনার স্থায়ী মান দাঁড়ায়নি কেন?
ইমদাদুল হক মিলন: সত্যি বলতে গত বছরেও কিছুটা ভাল ছিল। কিন্তু এবারে অনেক অগোছালো ছিল। স্টলগুলোর পাশে জায়গা কম বিশেষ করে প্যাভিলিয়নের পাশে খুবই সংকীর্ণ অবস্থা- শান্তি মত হাঁটাহাঁটি করা যায় না। এতে সবারই ঝামেলা হয় চলাচলে। কেন যে এমন হয় বুঝি না। আমার মনে হয় এতে আন্তরিকতা ও মেলার কাজের প্রতি কমিটির দরদী না হওয়া।
Comments