ঢাবি যে রবীন্দ্রনাথকেও উপড়ে ফেলতে পারে তা প্রতিবাদকারীদের জানা ছিল না
চলছে অমর একুশে বইমেলা। প্রতিদিন মেলায় আসছে নতুন বই। এর মধ্যে প্রথমা থেকে প্রকাশিত হয়েছে অধ্যাপক আসিফ নজরুলের 'সংবিধান বিতর্ক ১৯৭২: গণপরিষদের রাষ্ট্রভাবনা' বইটি । বইমেলা ও নিজের লেখালেখি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।
সংবিধান বিতর্ক ১৯৭২' বইটি বেশ বিক্রি হচ্ছে মেলায় অনেক। তার মানে সিরিয়াস বইয়ের বাজার ভালো হচ্ছে। কী কারণ থাকতে পারে বলে মনে করেন?
অধ্যাপক আসিফ নজরুল: এই বই মাত্র দুমাসে চারটি মুদ্রণ হয়েছে, এটা আশার সংবাদ। তবে সিরিয়াস বই প্রকাশ করলেই যে সিরিয়াস পাঠক হুমড়িখেয়ে কিনবেন তা না। তার জন্য থাকা চাই মানসম্মত ও গুরুত্বপূর্ণ কনটেন্ট। সম্ভবত সে বিষয়টাই আছে সংবিধান বিতর্ক বইতে। এতে গণপরিষদের আলোচনার প্রায় ১ হাজার পৃষ্ঠার কার্যবিবরণী পর্যালোচনা করা হয়েছে, যা আগে কেউ কোনোদিন করে নাই। আমি এটি করেছি এটা দেখার জন্য যে, আমাদের সংবিধান রচনার পেছনে উদ্দেশ্যটা আসলে কি ছিল। মুক্তিযুদ্ধ করে এসে জাতীয় নেতারা কী বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন তার প্রামাণ্য বিবরণ গণপরিষদের আলোচনায় আছে। আর আমি সেটা নিয়ে কাজ করেছি। পাঠকও তা গ্রহণ করেছেন।
সংবিধান রচনার পর বেশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আবুল মনসুর আহমদও প্রথম দিকে বিশ্লেষণ করেছেন। তার মতামত নজরে এসেছে কি?
অধ্যাপক আসিফ নজরুল: হ্যাঁ, আবুল মনসুর আহমদ ১৯৫৪ সালের পাকিস্তানের সংবিধান প্রনয়নের আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন যার উল্লেখ ১৯৭২সালের গণপরিষদের বিতর্কে রয়েছে। আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর বইটিতে তিনি নিজেই ১৯৭২ সালের গনপরিষদের বিতর্কের কিছু বিষয়কে এনেছেন। আনিসুজ্জামানের বিপুলা পৃথিবীতেও গণপরিষদ প্রসঙ্গ এসেছে। আমার বইতে তাদের লেখার রেফারেন্সও ব্যবহার করা হয়েছে।
যুক্তফ্রন্ট সরকারের একুশ দফার এক দফায় বাংলা একাডেমিকে গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার প্রস্তাব ছিল। সে বাংলা একাডেমি আজ কোন দিকে যাচ্ছে?
অধ্যাপক আসিফ নজরুল : আসলে সত্যি কথা হচ্ছে- বাংলা একাডেমির হবার কথা ছিল রাষ্ট্রীয় মানের জনগণের প্রতিষ্ঠান, এটা হয়ে গেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান। সরকারি লোকজন চালায়, তারাই আবার বই লেখে, আলাপ আলোচনা করে, পুরস্কার দেয়, দলীয় পারপাস সার্ভ করে। সত্যিকারের গবেষণা ততোটা করে না, জনগণের কাজেও আসছে না সেভাবে।
আপনি এক সময় সাংবাদিকতা করেছেন। এখন শিক্ষকতা করছেন, পাশাপাশি রচনা করছেন গল্প উপন্যাস। একুশের বইমেলায় লেখক হিসেবে যাওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল: এখনকার মেলা আগের মেলা থেকে ছোট ছিল, ধূলোবালিমাখা হলেও প্রাণ ছিল, ছিল আড্ডার মেজাজ। এখন সেটা নেই, কর্পোরেট হয়ে গেছে বইমেলা। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো নানান চেহারায় আসে মেলায়। এখন আর অতোটা ভালো লাগে না মেলা, তবে লেখক হিসেবে পাঠকের মুখোমুখি হতে খারাপ লাগে না।
সারাজীবন বাধার মুখে ছিলেন যে কবি, তিনি জেলে জুলুমের শিকার নজরুল। কিন্তু আজ প্রতিবাদ হিসেবে আসে রবীন্দ্রনাথ। তাতেও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ্য না হওয়ার কারণ কী?
অধ্যাপক আসিফ নজরুল: এটা একটা মজার বিষয়- অন্যায়ের বিপক্ষে ও শোষিত মানুষের জন্য কথা বলতে গিয়ে নজরুল ব্রিটিশ শাসকের রোষানলে পড়েছিলেন। বিদ্রোহ আর প্রতিবাদের প্রতীক হচ্ছে নজরুল, কোনভাবেই রবীন্দ্রনাথ নয়। তবু রবীদ্রপ্রেমীরা হয়তো এটা ভেবে তার ভাস্কর্য করেছিল যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিছু বলবে না। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে রবীন্দ্রনাথকেও উপড়ে ফেলতে পারে তা তাদের জানা ছিল না।
Comments