অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপে বইমেলার আনন্দ ম্লান হয়ে যায়
চলছে অমর একুশে বইমেলা। প্রতিদিন মেলায় আসছে নতুন বই। এর মধ্যে প্রকাশ হয়েছে কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামালের গল্প সংগ্রহ-২ ও কতিপয় যতিচিহ্ন। প্রকাশ করেছে পাঠক সমাবেশ।
নতুন বই ও নিজের লেখালেখি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।
বইমেলাকে অনেকে প্রাণের মেলা বলে কিন্তু প্রায় দেখা যায় কাউকে না কাউকে মেলায় অংশ নিতে বাংলা একাডেমি বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। কীভাবে দেখছেন এটি?
আহমাদ মোস্তফা কামাল : বইমেলা তো প্রাণের মেলাই। অন্তত পাঠক-লেখক-প্রকাশকদের জন্য তো বটেই। তিন পক্ষের এরকম মিলনমেলা তো সারা বছরের অন্য কোনো সময় হয় না। কিন্তু আনন্দটা ম্লান হয়ে যায় যখন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এখন আর মেলাটি স্রেফ বইমেলা নেই, হয়ে গেছে রাজনীতির অংশ। আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে যেরকম অসহিষ্ণুতা, তারই প্রকাশ ঘটছে, সর্বক্ষেত্রে, এমনকি বইমেলায়ও। কোনো লেখককে বা প্রকাশককে মত প্রকাশে বাধা দেওয়া কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। হ্যাঁ, কোনো লেখা যদি সাম্প্রদায়িতাকে উসকে দেয়, উগ্রবাদকে উসকে দেয়, জাতিগত বিদ্বেষ ও দাঙ্গাকে উসকে দেয় তাহলে রাষ্ট্র ওই নির্দিষ্ট লেখাটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু সেজন্য কোনো লেখককে বা প্রকাশককে নিষিদ্ধ করতে পারে না। নব্বই দশকে এ দেশে তসলিমা নাসরীনের 'লজ্জা' এবং হুমায়ুন আজাদের 'নারী' বই দুটো নিষিদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু সেজন্য বই দুটোর প্রকাশনীকে নিষিদ্ধ করা হয়নি বা ওই লেখকদের অন্য বইগুলো বিক্রিতে বাধা দেওয়া হয়নি। এখন সেটাও হচ্ছে। বাংলা একাডেমি স্বায়ত্তশাষিত প্রতিষ্ঠান। অথচ সেখানে মন্ত্রণালয়ের প্রকাশ্য হস্তক্ষেপ ঘটছে। এসবই অগ্রহণযোগ্য এবং দুঃখজনক।
মেলায় বই প্রকাশ হয় আপনার। মেলা কেন্দ্রিক প্রকাশনাকে কীভাবে দেখেন?
আহমাদ মোস্তফা কামাল : মেলা ছাড়াও কিন্তু আমার বই প্রকাশ হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মেলার কথা মাথায় রেখে লিখি না বা পাণ্ডুলিপি তৈরি করি না। প্রকাশকরা মেলাকেন্দ্রিক বই প্রকাশ করেন কারণ তখন এক মাসে বেশ ভালো একটা বিক্রি হয় এবং কিছু ক্ষেত্রে তাদের লগ্নিটা উঠে আসে। পণ্য হিসেবে বই তো 'স্লো আইটেম', মানে ধীরে ধীরে বিক্রি হয়। আবার আমাদের দেশে বই বিপনন ব্যবস্থা খুবই খারাপ। সারাদেশে মানসম্পন্ন বইয়ের দোকান নেই। মেলার সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাঠকরা আসেন বই কিনতে। প্রকাশকরা হয়তো সেজন্যই বই প্রকাশের জন্য মেলার সময়টিকে বেছে নেন।
আপনি লেখায় দেখা যায়, জীবনের গল্প নিয়ে ভাবেন। প্রকাশ হয়েছে গল্পসংগ্রহ-২। এই সংকলন করতে কোন ধরণের গল্পগুলো নিয়েছেন?
আহমাদ মোস্তফা কামাল : গল্পসংগ্রহ-১ প্রকাশিত হয়েছে গত বছর, এবার হলো গল্পসংগ্রহ-২। ১৯৯৮ থেকে ২০১৯, এই একুশ বছরে আমার এগারোটি গল্পগ্রন্থগুলো প্রকাশিত হয়েছিল। গল্পগুলো ১৯৯২ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে লেখা। ওই বইগুলোর অধিকাংশই এখন আর পাওয়া যায় না। সেজন্যই সবগুলো গল্প নিয়ে দুই খণ্ডে গল্পসংগ্রহ বেরুলো। আরো কিছু অগ্রন্থিত গল্প রয়ে গেছে, অল্প হলেও বছরে দু-তিনটা গল্প লেখা হয়ই, সেগুলো নিয়ে পরে কখনো নতুন বই বেরুবে। এ বছর অবশ্য একটা প্রবন্ধের বইও বেরুচ্ছে 'কতিপয় যতিচিহ্নি' নামে। বৈঠকি ঢঙে আমার কয়েকজন প্রিয় লেখকের ব্যক্তি এবং শিল্পীসত্তাকে খুঁজে দেখতে চেয়েছি এই বইতে।
সৃজনশীল সবাই মানুষ নিয়ে কাজ করে। কিন্তু গল্পকারদের সঙ্গে কবিদের দূরত্ব দেখা যায়
আহমাদ মোস্তফা কামাল : আমার সঙ্গে দূরত্ব নেই। আমার কবিবন্ধুই বেশি, প্রচুর কবিতা পড়িও। গল্পকাররা কমবেশি সবাই কবিতা পড়েন।
Comments