পুরান ঢাকার জন্মাষ্টমীর মিছিল

পুরান ঢাকার জন্মাষ্টমীর মিছিল। ছবি; সংগৃহীত

'শ্রাবণের একটি রৌদ্রচুম্বিত বিকেলবেলা। যেদিকেই তাকাই-না কেন রাস্তা-ঘাটে, ছাদে- কার্নিশে, বারান্দায়- রোয়াকে, দরজায়-জানালায়, গাছে- ল্যাম্প-পোস্টে সর্বত্রই কালো কালো বিন্দু। এক কোঠায় কালো বিন্দুর এক মহাসমুদ্র। গোটা ঢাকা শহর এক অস্বাভাবিক উত্তেজনায় আর উন্মাদনায় মেতে উঠেছে। আজ জন্মাষ্টমীর মিছিল বেরুবে। এমন জাঁকালো, এমন বিশালাকায় এবং অসাধারণ চমৎকারিত্বপূর্ণ একটি ঘটনা, এই উপমহাদেশে আর কোথাও কি দেখা যায়!...সক্রিয় অংশীদাররা হিন্দু হলেও আক্ষরিকভাবে এ-মিছিল সর্বজনীন।'

প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী পরিতোষ সেন তার আত্মস্মৃতি 'জিন্দাবাহারে' তুলে এনেছিলেন ঢাকার জন্মাষ্টমীর মিছিলের আখ্যান।

'আমাগো বাড়ি ছিল শুভাঢ্যা। বুড়িগঙ্গার ওই পাড়ে। তখন আমার বয়স আর কতো; আট নয়তো দশ। জন্মাষ্টমীর দিন সকাল বেলা আমরা গোপালের পূজা করতাম। ওইদিন বাড়ির বড়রা উপবাস থাকত। দুপুর বেলায় বাবার সাথে ভাইসহ নদী পার হইয়া নবাবপুর মোড়ে চইলা আসতাম। ওইদিন খেয়া পাড়ি দিতে পয়সা লাগত না। নদীর পাড়ে নৌকা ভিড়া থাকত। নবাবপুর যাইতে দেখতাম চারদিকে হাজার হাজার মানুষ। কে হিন্দু কে মোসলমান সেই বাছ-বিচার নাই। মুসলমানেরা কইতো 'গোপালের মিছিল'। ১৩ বছর বয়সে বিয়া হইছিল, বিয়ের পরে তো নদীর এই পাড়ে শ্বশুরবাড়িতেই চইলা আসলাম। তহন সব তো কাছেই।'

ঢাকার হারানো সেই জন্মাষ্টমীর মিছিলের কথা স্মরণ করতে গিয়ে গলায় আবেগ ধরে আসে পুরান ঢাকার মদনমোহন বসাক লেনের বাসিন্দা নব্বই ঊর্ধ্ব সুনন্দা চক্রবর্তীর। সুনন্দা চক্রবর্তীর কথার রেশ টানার আগেই ফিরে যাই পুরান ঢাকার সেই বর্ণিল অধ্যায়ে।

পুরান ঢাকার জন্মাষ্টমীর মিছিলের জন্ম ঢাকার রাজধানী হওয়ার পাঁচ দশকেরও আগে। ১৬১০ সালে সুবাহ বাংলার রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তর করেছিলেন সুবেদার ইসলাম খান। আর ঢাকায় জন্মাষ্টমীর মিছিল শুরু হয়েছিল তারও পাঁচ দশক আগে অর্থাৎ ১৫৬৫ সালে।

পুরান ঢাকায় জন্মাষ্টমী উৎসব ও জন্মাষ্টমীর মিছিলের সূচনা সম্পর্কে জানা যায় ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনের ঢাকার ইতিহাস নিয়ে লেখা গ্রন্থ 'ঢাকা সমগ্র' মারফত। ১৯১৭ সালে প্রকাশিত শ্রীভুবনমোহন বসাক প্রণীত একটি গ্রন্থের বরাত দিয়ে মুনতাসীর মামুন লিখেছেন ঢাকায় জন্মাষ্টমী উৎসবের সূচনা প্রসঙ্গে।

পঞ্চাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ঢাকার বংশালের নিকটবর্তী পিরু মুনশীর পুকুরের পাশে এক সাধু বাস করতেন। ১৫৫৫ সালের ভাদ্র মাসে রাধাষ্টমী উপলক্ষে বালক ভক্তদের হলুদ পোশাক পরিয়ে তিনি মিছিল বের করেছিলেন। তারও দশ বছর পর সেই সাধু ও বালকদের উৎসাহে রাধাষ্টমীর কীর্তনের পরিবর্তে শ্রীকৃষ্ণের জন্মোৎসব উপলক্ষে একটি মিছিল বের করা হয়। সেই মিছিলের মাধ্যমেই ১৫৬৫ সালে ঢাকায় জন্মাষ্টমীর মিছিলের পত্তন হয়েছিল।

পরবর্তীতে জন্মাষ্টমীর মিছিলের কর্তৃত্ব অর্পিত হয়েছিল নবাবপুরের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী কৃষ্ণদাস বসাকের ওপর। জন্মাষ্টমীর মিছিলের ইতিহাস নিয়ে লেখা এই ভুবনমোহন বসাক ছিলেন নবাবপুরের বসাক পরিবারের সদস্য। ১০৪৫ বঙ্গাব্দ তথা ১৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে কৃষ্ণদাস বসাকের মৃত্যুর পর নবাবপুরের বেশ কয়েকজন ধনাঢ্য ব্যক্তি নিজ নিজ উদ্যোগে জন্মাষ্টমীর মিছিল বের করতেন। এরই একজন ছিলেন উর্দু বাজারের গঙ্গারাম ঠাকুর। তিনি নবাবপুরের বসাকদের অনুকরণে যে জন্মাষ্টমীর মিছিল বের করতেন সেই মিছিল উর্দু রোড থেকে নবাবপুর পর্যন্ত আসত। তবে গঙ্গারাম ঠাকুরের মিছিল বেশিদিন চলেনি। কয়েক বছরের মধ্যেই এটি বন্ধ হয়ে যায়।

অন্যান্য মিছিলগুলো সাধারণত নবাবপুর থেকে রওয়ানা দিয়ে বাংলাবাজার হয়ে ঘুরে ফের নবাবপুরেই এসে পৌঁছাত। এক শতকের মধ্যেই জন্মাষ্টমীর অন্য মিছিলগুলো সমন্বিত হয়ে একটি মিছিলে রূপ নিয়েছিল। যা পরিচিত হয়েছিল নবাবপুরের মিছিল নামে।

অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুর দিকে পুরান ঢাকার পান্নিটোলার গদাধর ও বলাইচাঁদ বসাক ছিলেন অত্যন্ত প্রতিপত্তিশালী। নবাবপুরের জন্মাষ্টমীর মিছিল দেখে তাদেরও এমন মিছিল বের করার বাসনা জাগে। সে অনুযায়ী ১৭২৫ সালে তারা নিজ এলাকা ইসলামপুর থেকে জন্মাষ্টমীর মিছিল চালু করেন।

১৮৫৩ সালে নবাবপুর এবং ইসলামপুর দুই জায়গা থেকেই মিছিল বের হয়েছিল। মিছিলের একপর্যায়ে রায় সাহেব বাজারের কাছে জন্মাষ্টমীর মিছিল বের করা দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের খবর পৌঁছেছিল বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার সিসিল বিডনের কানেও। তখন সিসিল বিডন নিজে এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে বলেছিলেন একেক দল একেক সময়ে মিছিল বের করবে।

উনিশ শতকেই ঢাকার জন্মাষ্টমীর মিছিলের খ্যাতি পুরো ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। তখন কলকাতা, ত্রিপুরা, আসাম নিবাসীরাও জন্মাষ্টমীর মিছিল দেখতে ঢাকায় আসতেন। জন্মাষ্টমী উৎসব এবং জন্মাষ্টমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে ঢাকা পরিণত হতো মিছিল আর উৎসবের নগরীতে।

যেমন ছিল জন্মাষ্টমীর মিছিল

ফিরে যাই মদন মোহন বসাক লেনের বাসিন্দা সুনন্দা চক্রবর্তীর কাছে। সুনন্দা চক্রবর্তী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জন্মাষ্টমীর মিছিলের কথা এখনো আমার পাক্কা মনে আছে। বিয়ের আগে তো বাবা আর ভাইসহ বাড়ি থেকে আমরা এক দিন দেখতে আসতাম। বিয়ের পর দেখলাম মিছিল বাহির হইতো দুইদি ন। ওই দুইদিন কোর্ট, অফিস সব বন্ধ থাকত। একদিন মিছিল বাইর হতো নবাবপুর থেকে, আরেকদিন ইসলামপুরে। মিছিলে খোলা গরুর গাড়ির উপরে বিশাল চার তলা মঞ্চ আর গায়ে রাধা কৃষ্ণের মূর্তি গড়া। কাঠের গড়নের পাশে আবার নানান দেবদেবী। বিশাল হাতি সামনে তার উপরে সওয়ার একজন। কাঠ আর বাঁশ দিয়া মঞ্চ করা। চারদিক পিঁপড়ার মতো মানুষ আর মানুষ। মিছিলের সামনের দিকে গাজনের সঙের মতো কয়েকজন ছেলে বুড়া মুখোশ পইরা নাচতো। মিছিলের মধ্যে মানুষের হাতে হাতে দূর্বা- জবা আর কতো রকমের ফুল। সেই ফুল নিচ দিক থেকে মানুষ কৃষ্ণের মূর্তিতে ছুঁড়তো। সে মিছিলে কতজন যে হারায়ে যেত! আমার ভাইয়ের বয়স তখন ৯ বছর। একবার ও মিছিলে হারায় গেছিল; দুইদিন পর বাড়ি ফেরে। নবাবপুরের ওই মিছিল না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবা না ওই মিছিল কতো বড় আর কতো মানুষ!'

সুনন্দা চক্রবর্তীর কথার ফাঁকে আবার ফিরে যাই পরিতোষ সেনের লেখা আত্মস্মৃতি 'জিন্দাবাহার'-এ। কারণ সুনন্দা চক্রবর্তী যখন জন্মাষ্টমীর মিছিল দেখেছিলেন তখন তা শেষের বছরগুলো। সুনন্দা চক্রবর্তী নিজেও তা স্বীকার করে বলেন, 'আমার বিয়ার কয়েক বছর পরে তো দাঙ্গা শুরু হইলো আর সেই মিছিলও বন্ধ হইলো।'

'জিন্দাবাহার' এ পাওয়া যায় জন্মাষ্টমীর মিছিলের অপরূপ বর্ণনা। তিনি লিখেছেন, 'আসছে, ঐ আসছে' - সহস্র কণ্ঠের এই আওয়াজ, বাবুবাজারের দিক থেকে আকাশে ওঠে, একটি শব্দতরঙ্গের মতো আমাদের দিকে ভেসে আসে। কী উন্মাদনা। কী ঠেলাঠেলি। যতদূর চোখ যায়, শুধু রঙ আর রঙ থাকে-থাকে সাজানো। আক্ষরিকভাবে রঙের গাঙে যেন জোয়ার আসছে। হাতির পেছনেই কী অপরূপ এক দৃশ্য- গ্যালারির পর গ্যালারি। উচ্চতায় পাঁচ থেকে ত্রিশ ফুট। বহুযুক্ত - গোরুর গাড়ির ওপর বসানো। এ গাড়িগুলোকে টানছে জোড়া-জোড়া বলদ। এই গ্যালারির মাঝখানে একটি মঞ্চ। তার গর্ভগৃহে, খাঁটি সোনা কিংবা রূপোর চৌকি কিংবা সিংহাসন। সেখানে বৈষ্ণব দেবদেবীর মূর্তি। তার সামনে পৌরাণিক কাহিনীর মূকাভিনয় অথবা ভক্তিমূলক নাচ-গান চলে। কখনো-বা নিছক খ্যামটা নাচ। কী অসাধারণ এক জমজমাট ব্যাপার। অনেকটা প্রতিমার চালার আকারে, দুপাশ দিয়ে উঠেছে কাঠ কিংবা বাঁশের কাঠামো। তাতে নানা নক্সার রাংতা আর শোলার অলংকরণ। এই কাঠামোর একের-পর-এক নিশ্চল পুতুলের মতো, নানাভাবের, নানা জ্যান্ত মূর্তি, মেয়েদের পোশাকে। জরি, পুঁতি এবং চুমকির কাজে এবং কারবাইডের আলোর মালায়, এই পোশাকগুলো এমনই ঝলমল করে যে, চোখ ধাঁধিয়ে যায়। গ্যালারীর সারি পার হবার পরই, ঢেউয়ের পর ঢেউ- এর মতো, নৃত্যরত সঙ- এর দল আসে। তাদের মুখে কবিগান, কীর্তন, বিদ্রূপাত্মক সামাজিক ছড়া, জাতীয়তাবাদী গান। হাতে খঞ্জনি আর করতাল। বাদ্য এবং কণ্ঠসংগীতের কী নিখুঁত ঐক্য। মনে হয় একটিমাত্র কণ্ঠ, একটিমাত্র বাদ্যের ধ্বনি। তারপরেই রাজপুত বীরের বেশভূষায়, তলোয়ার উঁচিয়ে আসে অশ্বারোহীর দল। তাদের দু-পাশে সারি সারি রঙের ঝলমোল নিশান, অতিকায় মখমলের ছত্র, পাখা, চামর, বর্শা, আরো কত-কী। সঙ্গে আছে ঢাল- ঢোল- নাকারা শিঙা, এমন-কি ব্যান্ড পার্টিও। সামরিক সংগীতের গমগমে শব্দচাঞ্চল্যে আকাশ-বাতাস ভ'রে ওঠে। যেন কয়েকশো পাখোয়াজ একইসঙ্গে, একই বোলে বেজে উঠেছে। তারপর আরো সঙ, আরো ঘোড়া, আরো হাতি, আরো গ্যালারি- এক অন্তহীন, সচল, সাড়ম্বর, অদৃশ্যপূর্ব প্রদর্শনী।'

লেখিকা মনোদা দেবী ছিলেন গান্ধীবাদী সমাজ সেবিকা। স্বামীর মৃত্যুর পর ঢাকায় তিন বছর গান্ধীবাদী সমাজ সেবিকার ব্রত পালন করেছিলেন তিনি। এসময় তিনি দেখেছেন জন্মাষ্টমীর অপরূপ দৃশ্য। আত্মস্মৃতি 'সেকালের গৃহবধূর ডায়েরি'তে মনোদা দেবী লিখেছেন, ' জন্মাষ্টমীর এই মিছিল দেখিবার জন্য গ্রাম গঞ্জ তো ছিল, কলিকাতা থেকেও আত্মীয়স্বজনেরা আসিয়া বাড়িতে উঠিয়া তাঁহাকে আনন্দ মুখরিত করিয়া তুলিত, তা ছাড়া বুড়ীগঙ্গায় ছোট বড় নৌকা হইতে বাহির হইয়া মিছিল দেখিয়া পুনরায় নৌকায় ফিরিত। ঐ সব আরোহীরা জন্মাষ্টমীর মিছিলের দিন দৈনিক হিসাবে নৌকা ভাড়া করিয়া লইত। কখনও নির্দিষ্ট দিনে মিছল বাহির হইতোনা বৃষ্টির কারণে। কিন্তু তারা ঐ সব তুচ্ছ করিয়াও বহু অর্থ ব্যয়ে জন্মাষ্টমীর মিছিল দেখিবার আনন্দ উপভোগ করিতে ছাড়িত না।'

বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ ভবতোষ দত্তের জন্ম বিহারের পাটনায় হলেও তার কৈশোর কেটেছিল ঢাকায়। ১১ বছর বয়সে সপরিবারে ঢাকায় চলে এসেছিলেন তারা। ভবতোষ দত্ত তার লেখা স্মৃতিকথা 'আট দশক' এ জন্মাষ্টমীর মিছিলের প্রসঙ্গে লিখেছেন, 'জন্মাষ্টমীর মিছিলের খ্যাতি ছিল দূর ব্যাপ্ত। আশেপাশের গ্রাম ভেঙে লোক আসত দু'দিনের এই মিছিল দেখতে। একদিন নবাবপুরের আর অন্যদিনটিতে ইসলামপুরের। মিছিল বেরুতো সন্ধ্যার মুখে- যাতে বড় চৌকিগুলোতে আলোর খেলা দেখানো যায়। হাতিতে চড়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আগে আগে আসেন, তারপরে নিশান আর ঝালর, রূপোর আশাসোটা নানা রকমের সঙ যাতে থাকত বহু সাময়িক ঘটনা সম্বন্ধে ব্যঙ্গ এবং বিপক্ষ দল সম্বদ্ধে বক্রোক্তি। তারপর 'ছোট চৌকি' আর রথের মতো 'বড় চৌকি'। সবশেষে আবন্নার হাতি যার নাম 'রাজার হাতি'। শহরের সবচেয়ে বড় উৎসব।'

কেন হারালো ঢাকার জন্মাষ্টমীর মিছিল

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে জন্মাষ্টমীর মিছিল ছিল ঢাকার সার্বজনীন উৎসবের এক অনন্য রূপ। কিন্তু গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর বন্ধ হয়ে যায় জন্মাষ্টমীর মিছিল। মূলত ত্রিশের দশকে সাম্প্রদায়িক সম্পর্কের অবনতি এবং আর্থসামাজিক অবস্থার কারণে ঢাকার ধনাঢ্য হিন্দুরা ঢাকা ত্যাগ করে কলকাতায় যাওয়া শুরু করলে ঢাকার জন্মাষ্টমীর মিছিলের জৌলুস কমতে থাকে। কারণ এই ধনাঢ্য হিন্দুরাই ছিলেন জন্মাষ্টমীর মিছিলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। এছাড়া জন্মাষ্টমীর মিছিলে সাম্প্রদায়িক হামলাই ছিল জন্মাষ্টমীর মিছিল বন্ধ হওয়ার প্রধান কারণ। পরিতোষ সেনের জিন্দাবাহার গ্রন্থেও পাওয়া যায় শেষের বছরগুলোতে জন্মাষ্টমীর মিছিলে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা। 'একবার, এই মিছিল আমাদের পাড়ার মসজিদের সামনে দিয়ে যাবার সময় শত-শত মুসলমান, লাঠিসোটা, ইটপাটকেল হাতে নিয়ে এর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে হাজার-হাজার লোক দ্রুতগামী গাড়ির টোলার চাপা পড়ার ভয়ে মুরগীছানা যেমন দিকবিদিক-জ্ঞানশূন্য হয়ে ছোটে-ঠিক তেমনি করে পালাতে থাকে। বলাবাহুল্য এই দাঙ্গা লাগাবার প্রস্তুতি আগে থেকেই করা হয়েছিল সরকারি প্ররোচনায়।'

অথচ পঞ্চাশের দশকে পাকাপাকিভাবে বন্ধ হওয়ার পূর্বের ৪০০ বছরে মাত্র চারবার জন্মাষ্টমীর মিছিল বের হয়নি। প্রথমবারে বর্গীয় হাঙ্গামা বা বাংলায় মারাঠা হামলার ভয়ে। দ্বিতীয়বার বৃন্দাবন দেওয়ান রাজদ্রোহী হয়ে যেবার ঢাকা লুট করেছিল। তৃতীয়বার প্রথম ইঙ্গ-বর্মা যুদ্ধের সময়ে এবং চতুর্থবার সামাজিক দলাদলির কারণে।

সূত্র –

জিন্দাবাহার/ পরিতোষ সেন

ঢাকা সমগ্র ১/ মুনতাসীর মামুন

আট দশক/ ভবতোষ দত্ত

সেকালের গৃহবধূর ডায়েরি/ মনোদা দেবী

Comments

The Daily Star  | English

Manmohan Singh passes away at 92

Former Indian prime minister Manmohan Singh, the architect of India's economic reforms, passed away in New Delhi last night. He was 92.

1h ago