গুলেন বারি সিনড্রোমের কারণ ও লক্ষণ, বাংলাদেশে কী অবস্থা  

গুলেন বারি সিনড্রোম
ছবি: সংগৃহীত

গুলেন বারি সিনড্রোম বা জিবিএস হচ্ছে অটোইমিউন রোগ। এই রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন।

গুলেন বারি সিনড্রোম কী

ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, সাধারণত শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শরীরে প্রবেশ করা ক্ষতিকর কোষ, জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস শনাক্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু অটোইমিউন রোগ হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুল করতে থাকে এবং শরীরের সুস্থ কোষ, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আক্রমণ করতে থাকে।

গুলেন বারি সিনড্রোম সেরকমই একটি অটোইমিউন রোগ, যা স্নায়ুতন্ত্রের বর্হিঅংশকে আক্রমণ করে। স্নায়ুতন্ত্রের একটি হচ্ছে কেন্দ্রীয় অংশ, যা মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ড নিয়ে গঠিত। আর মস্তিষ্ক এবং মেরুদরণ্ডর বাইরের স্নায়ুতন্ত্রের অংশ হচ্ছে পেরিফেরাল বা প্রান্তিক স্নায়ুতন্ত্র।

গুলেন বারি সিনড্রোমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুল করে পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্রের ওপর আক্রমণ করে। এতে পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় এবং স্নায়ুগুলো ধীরে ধীরে অবশ হয়ে যায়।

কেন হয়

গুলেন বারি সিনড্রোম কেন হয় তার সরাসরি কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে দেখা যায় যদি কোনো ধরনের শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাস, কোভিড-১৯ সংক্রমণ, পেটের পীড়া, এডিস মশার সংক্রমণ, জিকা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হলে গুলেন বারি সিনড্রোমের লক্ষণগুলো বোঝা যায়। অর্থাৎ এই সমস্ত রোগ দেখা দিলে বা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের পরে কোনো কোনো সময় গুলেন বারি সিনড্রোম প্রকাশ পেতে পারে।

লক্ষণ

ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, গুলেন বারি সিনড্রোমের উপসর্গ প্রথমে পায়ে দেখা যায়। পা অবশ অনুভূত হয়, অবশ ভাব ধীরে ধীরে শরীরের ওপর দিকে উঠতে থাকে। একসময় হাতও অবশ হয়ে যায়। শরীর অসাড় লাগে, হাত-পায়ে দুর্বলতা ও ঝিমঝিম ভাব, হাঁটতে অসুবিধা হয়, চোখ বা মুখ নড়াচড়া করতে কষ্ট হয়, কথা বলা, খাবার চিবানো বা গিলে ফেলতে অসুবিধা হতে পারে।

এক পর্যায়ে হাত ও পায়ের মাংশপেশীতে তীব্র ব্যথা হতে পারে। প্রস্রাব ও মলত্যাগে অসুবিধা হতে পারে। শ্বাস নিতে কষ্ট হবে, হৃদস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে।

গুলেন বারি সিনড্রোমে আক্রান্ত ১০০ জনের মধ্যে ১ জন মারা যেতে পারেন, তবে ক্ষেত্রবিশেষে এটি বাড়তেও পারে। বিশেষ করে আগে থেকেই যারা অন্যান্য রোগে ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে মৃত্যু ঝুঁকি বেশি।

চিকিৎসা

যেহেতু এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সঠিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি সেহেতু সরাসরি কোনো ওষুধ বা অস্ত্রোপচার নেই। তবে যত দ্রুত রোগ শনাক্ত করা যাবে এই রোগের সহায়তামূলক চিকিৎসা রয়েছে। রোগীর শ্বাসকষ্ট হলে রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া, ফুসফুসের বিভিন্ন চিকিৎসা করা যেতে পারে। হাত-পা অবশ হয়ে গেলে রক্ত চলাচল বাড়ানোর চিকিৎসা দিতে হবে, হৃদযন্ত্রে কোনো সমস্যা হলে তা স্বাভাবিক করার জন্য চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। অর্থাৎ এই রোগে যত ধরনের লক্ষণ দেখা দেয় সেই লক্ষণগুলোকে উন্নত করার জন্য রোগের অগ্রগতি কমানো ও রোগ উপশমের জন্য সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে রোগীকে।

যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বেশির ভাগ রোগী ৬ মাসের ভেতর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন। যদি সঠিক চিকিৎসা না নেওয়া হয় এবং যত বেশি দেরি হবে রোগের জটিলতা তত বাড়বে, রোগ দীর্ঘায়িত হবে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গুলেন বারি সিনড্রোম

ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, বাংলাদেশেও মাঝেমাঝে গুলেন বারি সিনড্রোমে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। প্রতিবেশী দেশ ভারতে বাড়ছে এই রোগীর সংখ্যা। দেশে গুলেন বারি সিনড্রোমের রোগী শনাক্তের দিকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া উচিত। যারা স্বাস্থ্যকর্মী আছেন মাঠপর্যায় থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত তাদের বিশেষভাবে সচেতন হতে হবে। মাঠপর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা যখন নিয়মিত রোগী পরিদর্শনে যান, যেমন-সন্তানসম্ভবা নারী, শিশুদের পরিদর্শনে যান বা কমিউনিটি ক্লিনিকে রোগীরা আসেন তখন তাদের গুলেন বারি সিনড্রোম সম্পর্কে জানাতে হবে। খোঁজ নিতে হবে পা অবশ হয়ে যাচ্ছে, হাঁটতে অসুবিধা হচ্ছে এই ধরনের কোনো লক্ষণ কারো আছে কি না।

লক্ষণ থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসতে হবে, পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে গুলেন বারি সিনড্রোম আছে কি না।

ভারতের মহারাষ্ট্রে গুলেন বারি সিনড্রোমে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা খুব দ্রুত বাড়ছে। ভারতের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা দরকার তারা এই রোগে আক্রান্তের পেছনে বিশেষ কোনো কারণ খোঁজে পেলেন কিনা তা জানতে হবে। রোগতাত্ত্বিক সম্পর্ক এই রোগীদের মধ্যে কি রয়েছে তা পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। তাহলে একইভাবে বাংলাদেশেও স্বাস্থ্যকর্মীদের সেভাবে পরামর্শ দেওয়া যাবে এবং রোগ শনাক্ত সহজ হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

IMF sets new loan conditions

The International Monetary Fund has set new performance criteria tied to Bangladesh’s $5.5 billion loan programme, requiring the country to significantly reduce both domestic and external arrears in the power and fertiliser sectors before the next tranche can be released.

7h ago