চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের সেরা ৫ দর্শনীয় স্থান

ছবি: মহিউদ্দিন আহমেদ সাগর

কাজের ব্যস্ততা থেকে দূরে কয়েকদিনের ছুটি কাটানোর জন্য চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা অন্যতম আদর্শ জায়গা। কক্সবাজার বা সিলেটের মতো এতটা জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠতে না পারলেও মীরসরাইয়ের সবুজ পরিবেশ, নির্মল হ্রদ এবং মনোরম ঝরনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়। দর্শনার্থীরা দিন দিন এই উপজেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন।

মীরসরাইয়ের সেরা ৫টি দর্শনীয় স্থান হচ্ছে- 

ছবি: মহিউদ্দিন আহমেদ সাগর

বাওয়াছড়া লেক

বাওয়াছড়া লেক স্থানীয়ভাবে নীলাম্বর লেক নামেও পরিচিত। এটি মীরসরাই উপজেলার ওয়াহেদপুর গ্রামে ছোট কমলদহ বাজারের কাছেই অবস্থিত। ২ পাশের সুউচ্চ পাহাড় থেকে পানির অবিরাম লেকে গড়িয়ে পড়ার দৃশ্য ও শব্দ পর্যটকদের সব ক্লান্তি মুহূর্তেই দূর করে দেবে। এর সঙ্গে আছে অতিথি পাখির কলতান, যা পুরো পরিবেশকেই আরও মনোরোম করে তোলে।

যেহেতু সেখানে খুব বেশি পর্যটক যান না, তাই বাওয়াছড়া হ্রদে যাওয়ার জন্য সরাসরি সড়ক সংযোগ নেই। ফলে রোমাঞ্চকর যাত্রার জন্য জায়গাটির আকর্ষণ অনেক পর্যটকের কাছেই বেশি। বাসে গেলে প্রথমে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাই উপজেলার ছোট কমলদহ বাজারে নামতে হবে। এরপর সেখান থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার পূর্ব দিকে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত বাওয়াছড়া লেকে যেতে পারবেন। আর চট্টগ্রাম থেকে ছোট কমলদহ বাজারে আসতে আনুমানিক ৪৫ মিনিট সময় লাগতে পারে।

হ্রদের পাশের পাহাড়ি মনোরোম পরিবেশে নিরিবিলি হাঁটতে পারেন এবং কিছুটা হাইকিংয়ের জন্যও এটি আদর্শ স্থান হতে পারে।

ছবি: মহিউদ্দিন আহমেদ সাগর

নাপিত্তাছড়া ঝরনা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে নাপিত্তাছড়া ঝরনার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এখন অনেকের কাছেই পরিচিত। এই ঝরনায় যাওয়ার যে ঝিরিপথ আছে, তা নাপিত্তাছড়া ট্রেইল নামে পরিচিত। ঝরনায় পৌঁছানোর জন্য আঁকাবাঁকা পাহাড় বেয়ে বেশ কিছুটা উঠতে হবে। পাহাড়ে উঠার সময় আশেপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ঝরনার শব্দ আপনাকে বিমোহিত করে রাখবে। পাহাড় বেয়ে যখন ঝরনার কাছে পৌঁছাবেন, তখন অনেক ওপর থেকে পানি পড়ার যে দৃশ্য, তা আপনার সব কষ্ট ভুলিয়ে দেবে।

ঝরনার স্রোতে পা ভিজিয়ে বা পানির নিচে দাঁড়ালে আপনার মধ্যে যে অনুভূতি তৈরি হবে, তা অন্য কিছুর সঙ্গে তুলনীয় নয়। 

ছবি: মহিউদ্দিন আহমেদ সাগর

মুহুরী প্রজেক্ট ট্যুরিস্ট স্পট

মুহুরী নদীর আঁকাবাঁকা গতিপথইটিই এক অনন্য মনোরম দৃশ্য। দেশের বৃহত্তম মৎস্য অঞ্চল এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প হওয়ার পাশাপাশি এর মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এটিকে আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত করেছে। নদীর পানিতে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মনোরোম দৃশ্য পর্যটকদের দারণভাবে আকৃষ্ট করে। এই স্থানটির চারপাশে রয়েছে সবুজের সামরোহ এবং এখানে প্রায় ৫০ প্রজাতির পাখির বসবাস রয়েছে।  

খৈয়াছড়া ঝরনা

মীরসরাইয়ের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর কথা আসলে সম্ভবত খৈয়াছড়া ঝরনার নামই সবার প্রথমে আসে। খৈয়াছড়া এলাকার পাহাড়ে অবস্থিত বলে এর এমন নামকরণ করা হয়েছে। এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে পর্যটকরা এর নাম দিয়েছেন 'ঝরনার রানি'। এটি একটি ৯ স্তরের ঝর্ণা। প্রতিটি স্তর অন্যটির চেয়ে আলাদা ও মনোমুগ্ধকর।

ঝর্ণার পানি যখন নিচে পড়ে, তখন এক অভাবনীয় দৃশ্যের জন্ম হয়। তবে কাদাময় ও পিচ্ছিল পাহাড়ি পথ বেয়ে ওপরে উঠা কিছুটা কষ্টকর। তার উপর ঠান্ডা পানিও কিছুটা অস্বস্তি তৈরি করে।

ছবি: মহিউদ্দিন আহমেদ সাগর

মহামায়া লেক ও ইকো পার্ক

এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ (কাপ্তাই হ্রদ সবচেয়ে বড়)। মীরসরাইয়ের ঠাকুরদিঘী বাজার থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার পূর্বদিকে অবস্থিত এই লেকটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক আধার। লেকের স্বচ্ছ পানি এটিকে অন্যতম আকর্ষনীয় পিকনিক স্পটে পরিণত করেছে। পর্যটকরা চাইলে লেকে নৌকায় চড়ার চমৎকার অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারবেন।  রাতে ইকো পার্কে গিয়ে সময় কাটাতে পারেন।

শীতকাল বাংলাদেশের পর্যটন মৌসুম হলেও মীরসরাই যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে বর্ষা শেষ হওয়ার পর পর। তখন হ্রদগুলো পানিতে পূর্ণ থাকে আর ঝরনাগুলো সবচেয়ে আকর্ষণীয় রূপে থাকে।

অনুবাদ করেছেন আহমেদ হিমেল

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh lost over Tk 226,000cr for tax evasion: CPD

CPD estimated that around 50 percent of this amount has been lost to corporate tax evasion.

43m ago