খাবার টেবিলে যেসব শিষ্টাচার মেনে চলা উচিত

খাবার টেবিলে যেসব শিষ্টাচার মেনে চলা উচিত
ছবি: আনস্প্ল্যাশ

খাবার টেবিলে নির্দিষ্ট কিছু শিষ্টাচার মেনে চলাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পারিবারিক, সামাজিক কিংবা ব্যবসায়িক অনুষ্ঠানে শিষ্টাচারের অভাব আপনার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারে। এমনকি আশেপাশে যদি অপরিচিত মানুষজনও থাকে, তাহলেও শিষ্টাচার মেনে চলা উচিত। কারও কোনো আচরণে অন্য কেউ বিরক্ত হবেন, তা নিশ্চয়ই কাম্য নয়।

অনেকেই খাবার টেবিলের সঠিক শিষ্টাচার জানেন না। কারণ একেকজন একেক পরিবেশ ও প্রেক্ষাপটে বেড়ে ওঠেন।

কিছুদিন চেষ্টা করলেই অবশ্য এসব মৌলিক শিষ্টাচার আয়ত্তে আনা সম্ভব। এগুলো মনে রাখাও সহজ। অনেকে খাবার টেবিলে বসে চুইংগাম চিবুতে থাকেন, যা দৃষ্টিকটু। এ ধরনের অভ্যাস পরিহার করা উচিত। আরও যেসব বিষয় মাথায় রাখতে পারেন—

হাত ও মুখ ধুয়ে খেতে বসুন

আমরা সবাই ছোটবেলায় শিখেছি খাওয়ার আগে হাত ধুতে হবে। অন্যের সঙ্গে একই টেবিলে খেতে বসলে হাত-মুখ ধুয়ে পুরোপুরি পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি অবস্থায় আসুন।

মুখে খাবার রেখে কথা বলবেন না

মুখভর্তি খাবার নিয়ে কথা বলতে যাবেন না। আগে মুখের খাবারটি শেষ করুন, তারপর কথা বলুন। খাবার মুখে নিয়ে কথা বলার দৃশ্যটা অন্যের জন্য অপ্রীতিকর। আবার মুখভর্তি খাবার নিয়ে কথা বলার সময় খাবার মুখ থেকে ছিটকে পড়ার সম্ভাবনাও থাকে, যা বিরক্তিকর ও বিব্রতকর।

পানীয় গ্রহণের সময় শব্দ করবেন না

স্যুপ, ডাল, কফি, চা, জুস, লাচ্ছি এমনকি পানি পানের সময়ও অনেকে শব্দ করেন। অনুগ্রহ করে এ ধরনের শব্দ করবেন না। এ ধরনের শব্দ শিষ্টাচার-বহির্ভূত।

অন্যদের জন্য অপেক্ষা করুন

টেবিলে বসার সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া শুরু করে দেবেন না। অন্য সঙ্গী এবং সব খাবার টেবিলে দেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। আবার সবার আগে দ্রুত খাবার শেষ করে টেবিল থেকে উঠে যাবেন না। এটা কোনো খাবারের প্রতিযোগিতা নয়। টেবিলের সবার গতির সঙ্গে মিল রেখে খাবার খান।

হাড় বা কাঁটা বোনপ্লেটে রাখুন

হাড়, কাঁটা বা খাবারের অব্যবহৃত অংশ টেবিলের না ফেলে বোনপ্লেটে রাখুন। টেবিলে যদি বোনপ্লেট না থাকে, তাহলে সাইড প্লেটে (সবজি বা সালাদের প্লেট) রাখুন। যদি তাও না থাকে, তাহলে দায়িত্বরত ব্যক্তিকে টেবিলে বোনপ্লেট দেওয়ার জন্য অনুরোধ করুন।

প্লেট বা চামচ চাটবেন না

খাবার যতই মজার হোক, প্লেট বা চামচ চাটবেন না। খাবার অনেক মজা হয়েছে, এটা বোঝানোর জন্যও অনেকে এমনটি করে থাকেন। আপনার জিহ্বা সবসময় মুখের ভেতরেই থাকা উচিত, বিশেষ করে যখন অন্যদের সঙ্গে একই টেবিলে বসে খাবার খান। একা খাওয়ার সময় এমনটা করা যেতে পারে, কিন্তু অন্য কারও উপস্থিতিতে ব্যাপারটা বেশ দৃষ্টিকটু।

ঢেকুর তুলবেন না

খাওয়ার সময় ঢেঁকুর উঠলে অনুগ্রহ করে ওয়াশরুম বা বারান্দায় গিয়ে ঢেকুর দিয়ে আসুন। জনসম্মুখে কিংবা পেশাদার কোনো আয়োজনে ঢেকুর তোলাটা বেমানান।

হাত ও পা নিয়ন্ত্রণে রাখুন

অনেকে খাবার টেবিলে বসে পা ছড়িয়ে দেন। এতে টেবিলের নিচে অন্যদের পায়ের সঙ্গে লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং অন্যরাও তখন তাদের পা আরামে রাখতে পারেন না। হাতের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। অন্যদের সঙ্গে টেবিল ভাগাভাগি করার সময় নিজের হাত-পা সংযত রাখুন। এসব আচরণ অন্যদের বিরক্তির উদ্রেগ করে।

ফোনের দিকে মনোযোগ দেবেন না

বর্তমান বিশ্বে মোবাইল ফোন হচ্ছে সবচেয়ে বড় মনোযোগ বিনষ্টকারী। যখন অন্য মানুষের সঙ্গে খেতে বসবেন, তখন তাদের সঙ্গ উপভোগ করুন, তাদের সঙ্গে কথা বলুন। খাবার ও সঙ্গীদের দিকে মনোযোগ রাখুন।

চামচ দিয়ে অতিরিক্ত শব্দ করবেন না

চামচ, ছুরি, কাঁটাচামচ দিয়ে খাওয়ার সময় অনেকে বেশ শব্দ করেন। অনেকে আবার ছুরি বা কাঁটাচামচ দাঁতের সঙ্গে ঘষেন। এতে অন্যদের রুচি নষ্ট হয়। এসব করা থেকে বিরত থাকুন।

কাঁটাচামচ কোন হাতে ধরবেন?

এটা নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় থাকেন। কাঁটাচামচ থাকবে বাম হাতে, আর চামচ বা ছুরি থাকবে ডান হাতে। আবার যদি পাস্তা বা চাওমিনের মতো কোনো খাবার হয়ে থাকে, যেগুলোর জন্য একটি উপকরণ ব্যবহার করলেই হয়, সেক্ষেত্রে কাঁটাচামচ ডান হাতে দরতে পারেন।

ন্যাপকিন ব্যবহার করুন

রেস্টুরেন্ট বা কোনো অনুষ্ঠানে খাওয়া শুরু করার আগে ন্যাপকিনটি আপনার থাইয়ের ওপর রাখুন। খাওয়ার মাঝে হালকা করে মুখ মোছার জন্যও ন্যাপকিনটি ব্যবহার করতে পারেন। খাওয়ার মাঝখানে কাশি বা হাঁচি দিতে হলেও ন্যাপকিন ব্যবহার করুন।

টেবিল পরিষ্কারে সহায়তা করুন

রেস্টুরেন্ট বা কোনো অনুষ্ঠানে খাওয়া শেষে টেবিল পরিষ্কারে সহায়তার দরকার নেই। তবে বন্ধু বা আত্মীয়ের বাড়িতে গেলে এটি করতেই পারেন। বাড়িতেও আপনার সঙ্গীকে অথবা মাকে টেবিল পরিষ্কারে সহায়তা করুন। সন্তানকেও এ শিক্ষা দিন। বাসার অন্য কাজেও সহায়তা করুন।

উপরে উল্লিখিত পয়েন্টগুলো মৌলিক শিষ্টাচারের অংশ। বিশ্বায়নের এ যুগে আমাদেরকে প্রায়ই কাজ ও ঘোরাঘুরির জন্য বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে মিশতে হচ্ছে। তাই এসব সহজ ও মৌলিক শিষ্টাচারগুলো মেনে চললে সবার কাছে আপনার ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হবে।

অনুবাদ করেছেন আহমেদ হিমেল

Comments

The Daily Star  | English

Enforced disappearances: Eight secret detention centres discovered

The commission raised concerns about "attempts to destroy evidence" linked to these secret cells

4h ago