পড়াশোনার পর দীর্ঘ বিরতিতে চাকরি শুরু, কীভাবে মানিয়ে নেবেন

দীর্ঘ বিরতিতে চাকরি শুরু
ছবি: সংগৃহীত

শাফায়াত একটি স্বনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা করেছেন অনেকদিন। কিন্তু লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেননি। পরে যোগদান করেন একটি বেসরকারি কলেজে। এখানে তার চাকরি জীবন শুরু। কাজ করতে গিয়ে অল্প সময়েই বুঝতে পারলেন, ক্যারিয়ারের দৌড়ে অনেকখানি পিছিয়ে গেছেন।

সন্ধি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পড়তেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকানোর আগেই ঘর আলো করে আসে তার সন্তান। সবাই যখন ভালো ভালো চাকরিতে নিজেকে থিতু করছে, সন্ধি তখন সংসার ও সন্তান সামলাতেই ব্যস্ত। সব গুছিয়ে চাকরি বাজারে ঢুকতে ঢুকতে বয়সটা একটু বেড়েই যায়। সেখানে তার রিপোর্টিং বস তারই স্কুল জীবনের বন্ধু।

পড়াশোনা শেষ করে সবারই স্বপ্ন থাকে চাকরি জীবনে প্রবেশ করার। কিন্তু বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে অনেকের হয়তো সঙ্গে সঙ্গেই চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ হয় না। অনেকে আবার চাকরি করতে করতে বিভিন্ন ব্যক্তিগত কারণে বা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন।

পড়াশোনার পর লম্বা ব্যবধানে চাকরি শুরু করলে আপনি অনেকের থেকেই পিছিয়ে থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। পড়াশোনা শেষে লম্বা বিরতিতে চাকরিতে প্রবেশ করলে চাকরিক্ষেত্রে কীভাবে নিজেকে মানিয়ে নেবেন তাই নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মাহবুব আজাদ

মাহবুব আজাদ বলেন, পছন্দ অনুযায়ী চাকরি পেতে, আকস্মিক দুর্ঘটনা, চাইল্ড কেয়ারসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত কারণে পড়াশোনা শেষ হওয়ার অনেকটা পরে অনেকে কর্মজীবন শুরু করেন। কর্মক্ষেত্রে ঢোকার পরে তিনি দেখতে পান তার সহপাঠীরাই এখন তার বস। তখন মন খারাপ হতেই পারে। কিন্তু মানিয়ে নিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর লম্বা বিরতি নিয়ে কর্মজীবন শুরু করা বেশ চ্যালেঞ্জিং। সহপাঠী, জুনিয়ররা যেখানে ক্যারিয়ারে অনেকখানি এগিয়ে গেছেন সেখানে আপনার যাত্রা মাত্র শুরু। তাই নিজেকে আগে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে। মানসিকভাবে আপনার এই পিছিয়ে পড়াটাকে গ্রহণ করে নিন। নিজেকে বোঝান, সঙ্গত কারণে আপনাকে একটু পরেই শুরু করতে হয়েছে। যে কারণগুলোর ওপর আপনার কোনো হাত ছিল না। নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে আসুন।

এমনও হতে পারে আপনার সহপাঠী কিংবা বয়সে জুনিয়র আপনার রিপোর্টিং বস। কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সম্পর্ককে দূরে রাখুন। অফিসের নিয়মকানুন ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখুন। এটি মনে রাখতে হবে কর্মক্ষেত্রে বয়স নয়. অভিজ্ঞতাই মূল বিষয়। কখনো ভুল বোঝাবুঝি হলে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি সামলে নিতে হবে। অফিসে কোনো কাজে ভুল হলে তা ধরিয়ে দেওয়া হলে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করুন। তাছাড়া বাড়তি সুযোগ-সুবিধা চাওয়া বন্ধ করুন।

যেহেতু আপনার কর্মজীবনে প্রবেশ করতে একটু দেরি হয়েই গেছে, প্রতিযোগিতার দৌড়ে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে করে ফেলতে পারেন কিছু প্রফেশনাল কোর্স। যা আপনাকে একটু হলেও এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। যেমন আপনি যদি শিক্ষকতা পেশায় থাকেন তবে এমএড করে ফেলতে পারেন, আইটি সেক্টরে থাকলে বিভিন্ন স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্স / ডিগ্রি নিতে পারেন।

অন্যের অভিজ্ঞতা শুনুন। তারা কীভাবে মানিয়ে নিয়েছেন তা জানা আপনার জন্য সহায়ক হতে পারে। এই পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জকে স্বাগত জানান।

সবশেষে যোগ করতে চাই, নিজেকে কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করুন। পড়াশোনা শেষে  দীর্ঘ বিরতির পরেও আপনি আপনার কাজে যে সক্ষম, সেটি কাজ দিয়েই জানান দিন।

Comments

The Daily Star  | English
Gen Z factor in geopolitics

The Gen Z factor in geopolitics and the Bangladesh-US dynamics

Gen Z should keep in mind that the US cannot afford to overlook a partner like Bangladesh given the country’s pivotal position in South Asia’s economic landscape.

10h ago