বিদেশে পড়তে যাওয়ার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি: কী নেবেন, কী নেবেন না

বিদেশে পড়াশোনা
ছবি: সংগৃহীত

বহির্বিশ্বে পড়তে গেলে প্রাথমিকভাবে কী কী নিয়ে যাওয়া উচিত এবং কোন জিনিসগুলো নিয়ে যাওয়ার আদৌ প্রয়োজন নেই, এ নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন থাকে। যেহেতু ভিনদেশে নিজ দেশের আবহাওয়া বা সংস্কৃতি থাকবে না, তাই নিয়ে যাওয়ার এই বিষয়টি নিয়ে দ্বিধা থাকাই স্বাভাবিক।

শীত পোশাক

প্রথমেই যে দেশের যে অঞ্চলে পড়তে যাচ্ছেন সেখানকার আবহাওয়া সম্পর্কে জেনে নিন। আমার নিজের সুযোগ হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকিতে পড়তে যাওয়ার। তাই যে কাজটা আমি করেছিলাম, কেন্টাকির লেক্সিংটন শহরের আবহাওয়া সম্পর্কে জেনে নিয়েছিলাম। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের একেক স্টেটের আবহাওয়া একেক রকম এবং একই সঙ্গে এই রোদ এই শীত অবস্থা থাকে।

প্রথমেই পোশাকের বিষয়টা আসে। খুব বেশি পরিমাণে অবশ্যই না, প্রাথমিকভাবে শীত সহ্য করে নেওয়ার মতো পোশাক, গ্লাভস, জুতা নেওয়াটা দরকার। একে তো অনেকেই যারা আমরা প্রথমে যাই, তাদের নিজস্ব গাড়ি থাকে না। আবার শুরুতেই গিয়ে দোকানপাট খুঁজে নেওয়ারও বিষয় থাকে। তাই ওজনের বিষয়টা মাথায় রেখে প্রাথমিক শীতপোশাক, জুতা নেওয়াটাই ভালো।

আবার এমনও দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে লোকে যাকে বসন্ত বলছে তা আমাদের বাংলাদেশিদের কাছে এক প্রকার শীত। এসব সময়ে পুরোদস্তুর পাফার, কোট না পড়লেও সবসময় হালকা শীতের পোশাক যেমন ডেনিমের জ্যাকেট রাখতাম।

আর যেহেতু প্রচুর হাঁটতে হয়, আবার ঠিক সময়ে খাবার সেরে নিয়ে ক্লাসরুমে থাকা চাই, তাই ফুটওয়্যার আরামদায়ক যেমন স্নিকার পড়তে দেখতাম প্রায় সবাইকে।

প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র

পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে হেলথ ইনস্যুরেন্স এবং বিভিন্ন মেডিকেল টেস্ট বেশ ব্যয়বহুল। একে তো ব্যয়বহুল, তার উপর আবার ডাক্তারের অ্যাপয়নমেন্ট নেওয়াটাও কিছুটা ঝামেলার। তাই যতটা সম্ভব বাইরে যাওয়ার আগেই ডাক্তারের পরামর্শে প্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়ে নিন। বিশেষ করে চোখ এবং ডেন্টাল ইনস্যুরেন্স বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্টুডেন্ট ইনস্যুরেন্সের আওতাধীন নয় এবং একই সঙ্গে প্রচুর ব্যয়বহুল। কিছু কমিউনিটি ক্লিনিক থাকে, কিন্তু সেগুলো সম্পর্কে জানা, চিকিৎসক ঠিক সময়ে পাওয়াটা কিছুটা সময়ের ব্যপার। আর যেহেতু কোনো ওষুধই চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া এসব দেশে কেনা যায় না, তাই ইমিগ্রেশনের সময় প্রেসক্রিপশন সঙ্গে রেখে প্রয়োজনীয় ওষুধ, অতিরিক্ত এক-দু জোড়া চশমা নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন ঝামেলা নেই। এক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসার একটা টুলবক্সও নেওয়া যায়।

নিত্যদিনের জিনিসপাতি

আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বললে, এমন কিছু আসলে নেওয়ার আসলে প্রয়োজন পড়ে না। যেমন ক্রোকারিজ নেওয়ার কোনো দরকার নেই। এতে বরং জায়গা আর ওজন দুটোই নষ্ট হয়। ডলার ট্রি, ওয়ালমার্টে এমনিতেই অল্প দামেই এসব কিনতে পাওয়া যায়।

তবে হ্যাঁ, একদমই যে কেউ নেয় না তা নয়। আমার কয়েকজন সহকর্মী একেবারে প্রাথমিক কিছু জিনিসপাতি নিয়ে গেছেন। এ ছাড়া, নিজের পছন্দের টাম্বলার, লাঞ্চবক্স, একটা-দুটো বেডশিট, কাঁথা চাইলে নিতে পারেন।  

দেশীয় জিনিসপত্র

বিদেশের মাটিতে যে জিনিসটার অনুপস্থিতি খুব করে টের পাওয়া যায়, তা হলো নিজ দেশের খাবার। যেহেতু বাঙালি, তাই খারাপ লাগাটা বোধ হয় একটু বেশিই ছিল। যদিও ভারতীয়, নেপালের দোকানে এই দক্ষিণ-এশীয় অঞ্চলের মশলাপাতি, সবজি পাওয়া যায় কিন্তু সেটা চাইলে পাওয়া যাবে এমনটা নয়। এ জন্য আমিসহ প্রত্যেক বাংলাদেশি, এমনকি প্রায় সব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে দেখেছি নিজ দেশের মশলা, রান্নার উপকরণ নিয়ে যেতে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য এয়ারলাইন্সগুলোর কিছু নিয়মকানুন আছে। সেগুলো মাথায় রেখে শুকনো রান্নার উপকরণগুলো নেওয়াই যায়।

লাগবে আরও যা যা

যাত্রার সময় যেহেতু বেশ দীর্ঘ একটা সময় হয়ে থাকে, তাই প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস যেমন, ফোন চার্জার, এডাপ্টার এগুলো হাতের কাছে ব্যাগপ্যাকে রাখা ভালো। যদিও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোয় এসব সুবিধা থাকেই। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সেটা কাজ নাও করতে পারে।

একইসঙ্গে দু-তিনটি বিমানবন্দরে চেক-ইন, ইমিগ্রেশন হয়ে থাকে, তাই হাতের কাছেই কোনো একটা ফাইলে অ্যাকাডেমিক কাগজপত্রের সঙ্গে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সঙ্গে রাখা ভালো। এতে বারবার ব্যাগ থেকে বের করার ঝামেলা থাকে না।

এখন যেহেতু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই বিভিন্ন গ্রুপে সেখানকার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ রয়েছে, তাই যে জায়গায় যাওয়া হচ্ছে সেখানকার কমিউনিটির কারো সঙ্গে আলাপ করে নেওয়াটা সব থেকে সুবিধার। এতে নেটওয়ার্কের পাশাপাশি নিজের নানান বিষয়েও আলোচনা করা যায়।

নাদিয়া রহমান: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকির শিক্ষার্থী।

 

Comments

The Daily Star  | English

5 dead bodies recovered from launch in Meghna

The incident had occurred on the Meghna river under Chandpur Sadar upazila in an area adjacent to Shariatpur

35m ago