নারীদের আত্মরক্ষার ৬ কৌশল
আমরা সবসময় আশা করি, আত্মরক্ষা প্রয়োজন এমন পরিস্থিতিতে যেন কাউকেই পড়তে না হয়। কিন্তু দ্রুতগতির এই বিশ্বে অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য সবসময় নিজেকে প্রস্তুতি রাখা জরুরি। কিছু কার্যকর আত্মরক্ষার কৌশল জানা থাকলে প্রয়োজনে কাজে আসতে পারে।
কারাতে অনুশীলনকারী হুমাইরা আক্তার অন্তরার অভিজ্ঞতা থেকে জানুন আত্মরক্ষার ছয়টি কৌশল, যেগুলো যে কেউ চাইলে শিখতে পারবেন। হয়তো জীবনের কোনো পর্যায়েই এসব দক্ষতা ব্যবহারের প্রয়োজন পড়বে না, তারপরও এই কৌশলগুলো জানা থাকলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
সচেতনতা সবচেয়ে বড় কৌশল
হুমায়রা বলেন, সবসময় আপনার চারপাশে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন এবং কৌশলী হোন। সবচেয়ে ভালো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হলো নিজের পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে সচেতন হওয়া। নিজের সহজাত প্রবৃত্তির ওপর ভরসা রাখুন। যদি কিছু খারাপ বলে মনে হয় তাহলে সেটি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন কিংবা কারও সহায়তা চাওয়া যায় কি না দেখুন। বিরূপ পরিস্থিতি এড়াতে সচেতন থাকাই সবচেয়ে বড় কৌশল।
ঘুষির কৌশল শিখুন
যখন শরীরী প্রতিরোধের বিষয় আসে, তখন ঘুষি কার্যকর কৌশল হতে পারে। এক্ষেত্রে হুমায়রার পরামর্শ হলো, কাউকে আঘাত করার ক্ষেত্রে মুখ, ঘাড়, নাক, গলার মতো স্পর্শকাতর অঙ্গগুলোকে টার্গেট করুন। এই স্থানগুলোয় দ্রুত একটি ঘুষি আক্রমণকারীকে এমন অবস্থায় ফেলবে যে আপনি সরে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় পাবেন।
মনে রাখবেন, আক্রমণকারীর এই স্পর্শকাতর অঙ্গগুলোয় হাতের তালু দিয়ে আঘাত করলে আপনার আঙুল তুলনামূলক সুরক্ষিত থাকবে।
গোড়ালি ও হাঁটু ব্যবহার করে লাথি
সুরক্ষিত থাকার আরেকটি কৌশলের ওপর হুমায়রা জোর দেন, যেখানে শরীরের নিচের অংশকে ব্যবহার করতে হবে।
তিনি বলেন, 'আপনার শরীরের নিচের অংশের শক্তিকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে হবে। হাঁটু দিয়ে আক্রমণকারীর কুঁচকিতে অথবা গোড়ালি দিয়ে পায়ে শক্ত একটি লাথি তাকে প্রতিহত করতে পারে। এতে দুই পক্ষের মধ্যে আপনার জয়ের পাল্লাই ভারী হবে।'
কুঁচকি বা কটিসন্ধি এলাকাটি শরীরের জন্য বেশ স্পর্শকাতর। ফলে সেই স্থান লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালালে বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সেখানে একটি তীব্র আঘাত আক্রমণকারীকে অবশ করে দিয়ে আপনাকে সরে যাওয়ার সুযোগ করে দেবে। একইভাবে আক্রমণকারীর পায়ের দিকে জোরে লাথি দিলে সেটিও তাকে ভারসাম্যহীন করবে, আপনি সরে যাওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ পাবেন।
আঙুলের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবহার
প্রতিরক্ষার অংশ হিসেবে আঙুলের সঠিক ব্যবহারের কথা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই। অথচ এটি হতে পারে দারুণ কৌশল।
হুমায়রা বলেন, 'আক্রমণকারী যখন খুব কাছ থেকে হামলার চেষ্টা চালাবে তখন তার চোখের দিকে আপানার আঙুল দিয়ে বলপ্রয়োগ করুন। এতে আক্রমণকারী বিভ্রান্ত হয়ে পড়বে, ফলে আপনি সরার সুযোগ পাবেন।'
এই পদ্ধতিকে আক্রমণকারীর মনোযোগ সরানোর সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি বলেও মনে করেন হুমায়রা।
চোখের কোটরে আক্রমণ করাটাও কার্যকর পদক্ষেপ। এতে আপনি তাৎক্ষণিক আক্রমণকারীর প্রতিক্রিয়া দেখতে পাবেন। ফলে সেখান থেকে সরার বা অন্য কারো সাহায্য প্রত্যাশার জন্য যথেষ্ট সময় পাবেন।
হাতের কবজি ধরে রাখলে যেভাবে মুক্ত হবেন
কেউ আপনাকে ধরে ফেললে সেই অনুভূতি ভীষণ ভয়ঙ্কর হতে পারে। কিন্তু এর থেকে মুক্ত হওয়ার নির্ভরযোগ্য উপায়ও আছে। যদি কেউ আপনার হাতের কবজি চেপে ধরে তাহলে সেখান থেকে মুক্ত হওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো নিজের হাতকে শক্ত করে আক্রমণকারীর হাতের বুড়ো আঙুলের দিকে ঘোরানো।
কারণ বুড়ো আঙুল মানুষের হাতের সবচেয়ে দুর্বল অংশ। ফলে যখন আপনি কবজি ঘোরাবেন তখন তার হাতের বাঁধন আলগা হয়ে যাবে। চাইলে এই কৌশলটি পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের সঙ্গে অনুশীলন করতে পারেন।
আত্মরক্ষার জন্য সঙ্গে কিছু জিনিস রাখুন
প্রতিদিন ব্যবহার করা হয় এমন জিনিস ব্যবহার করে সহজ কিন্তু কার্যকর আত্মরক্ষার কৌশলের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার ওপর জোর দেন হুমায়রা।
তিনি বলেন, 'সেটা হতে পারে কলম, মরিচের গুঁড়া বা পিপার স্প্রে, বিপদে ব্যবহারের জন্য ছোট ধারালো চাকু। এর প্রতিটিই আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় হাতিয়ার হতে পারে। এসব কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে নিয়মিত অনুশীলন করতে পারেন।'
সাধারণ এসব সামগ্রীই বিপদের সময় প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্রে পরিণত হতে পারে। আক্রমণকারীর শরীরের নরম অংশে ব্যবহারের জন্য কলম খুব ভালো বস্তু। অন্যদিকে, মরিচের গুঁড়া কারো চোখে ছিটিয়ে দিলে সাময়িকভাবে সে দৃষ্টি হারাবে, তার শ্বাসকষ্টও শুরু হতে পারে। যখন বিপদে পড়বেন তখন আপনার হাতে থাকা ছোট চাকুটিও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে আত্মরক্ষায়।
এসব কিছুর পরেও মনে রাখতে হবে যে, এ জাতীয় দ্রব্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই এর আইনি ও নৈতিক প্রভাব জেনে-বুঝে নিতে হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদনে বর্ণিত আত্মরক্ষার কৌশলগুলো শুধু ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আত্মরক্ষার জন্য শেখানো হয়েছে। দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি বুঝে এসব কৌশল ব্যবহার করতে হবে। আত্মরক্ষার কৌশলগুলোর যথাযথ প্রয়োগের নিশ্চিতে পেশাদার প্রশিক্ষকের কাছে অনুশীলনের পরামর্শ রইল।
অনুবাদ করেছেন শেখ সিরাজুম রশীদ
Comments