কারো কাছ থেকে মানসিক আঘাত পেলে কী করবেন

মানসিক আঘাত
ভিজুয়াল: রেহনুমা প্রসূন

মানুষের জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময়গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, যখন সে কারো কথায় বা কাজে মানসিকভাবে আঘাত পায়। সে সময় নিজেকে অসম্মানিত ও উপেক্ষিত মনে হয়। এই ধরনের মনোবেদনাকালে শুভাকাঙ্ক্ষী, পরিবারের সদস্য বা বন্ধুরা সাধারণত পরামর্শ দেয় সব ভুলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে। বিষয়টি কঠিন হলেও, আসলে এটিই সবচেয়ে ভালো পরামর্শ।

যখন কেউ আপনাকে কষ্ট দেবে তখন যা বলবেন এবং যা করবেন

যে আঘাত করছে তার কাছ থেকে দূরে থাকুন

এমন মানুষদের কাছ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করা উচিত যারা আপনার অনুভূতিতে আঘাত করে। যতক্ষণ আপনি এমন মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকবেন ততক্ষণ তাদের নেতিবাচকতা আপনার ওপর প্রভাব ফেলবে না। এসব মানুষকে এড়িয়ে যাওয়ার মাধ্যমে তাদের সঙ্গে নতুন করে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হওয়ার আর সুযোগ তৈরি হবে না। আপনাকে আঘাত দেওয়া ব্যক্তিটি যদি আপনার জন্য বিশেষ কেউ হয়ে থাকে, তাহলে দুজনের মধ্যে কিছুদিনের দূরত্ব তৈরি হলে তা অযথা বিবাদ এড়াতেও সাহায্য করবে।

অতীতকে দূরে রাখুন এবং বর্তমানে বাঁচুন

অতীতের কোনো ঘটনা বা আঘাত যেন আপনার বর্তমানকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে এসব বিষয় অতিক্রম করে যেতে হবে। আপনি যদি সবসময় অতীতের ভুলগুলোর কথা ভাবতে থাকেন কিংবা কে কবে আপনাকে আঘাত দিয়েছিল তা মনে করতে থাকেন তাহলে কখনোই বর্তমান সময়কে উপভোগ করতে পারবেন না। তারচেয়ে বরং জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর দিকে মনোযোগ দিন। ভবিষ্যতের সম্ভাবনাগুলোর দিকে তাকান, আপনার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং সেই দিকে চলতে থাকুন।

নিজেকে দোষারোপ বন্ধ করুন

নিজেকে কখনো ছোট ভাববেন না। যেকোনো খারাপ ঘটনার জন্য আপনি একাই দায়ী নন। একজন মানুষ দিয়ে তো আর কোনো সম্পর্ক পরিপূর্ণ হয় না। এটি সুন্দরভাবে চালিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব উভয়পক্ষের। যখন কেউ আপনার মনে আঘাত দেয়, ভেবে নেবেন না যে আপনারই ভুল। হতে পারে যে অপরপক্ষের মানুষটি আপনার জন্য সঠিক নয়। আবার কখনো আপনিও ভুল হতে পারেন। সেক্ষেত্রে নিজের দোষ স্বীকার করে নেওয়াই ভালো। অনিচ্ছাসত্বেও সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার চেয়ে দুজনের দুদিকে চলে যাওয়াই ভালো।

অন্যের দৃষ্টিভঙ্গিও বোঝার চেষ্টা করুন

যখন কারো সামনে আপনার নিজেকে ছোট বলে মনে হবে, তখন খেয়াল করে দেখুন যে এই ভাবনার উৎস কোথায়। অর্থাৎ খুঁজে বের করুন যে আপনার কি বুঝতে ভুল হচ্ছে নাকি সামনের ব্যক্তি ইচ্ছা করেই আপনাকে নিচু বোধ করাচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি সঠিক কারণটি ধরতে না পারছেন, ভেতরে ভেতরে কষ্ট পাবেন না। হতে পারে ওই ব্যক্তি আপনাকে আঘাত করার মতো কিছুই বলেননি। বরং আপনি নিজেই মনে মনে ভেবে নিয়েছেন যে সে আপনাকে ছোট বা আঘাত করা হচ্ছে।

নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন

ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ আপনাকে আঘাত করতে পারবে না যতক্ষণ না আপনি ভেতর থেকে তা অনুভব করছেন। অন্য কারও রাগের কারণে নিজের মানসিক শান্তি নষ্ট হতে দেবেন না। যেহেতু কেউ আপনাকে তৈরি করতে পারবে না, তাই কেউ যেন আপনাকে ভাঙতেও না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। যখন কেউ আপনাকে আঘাত দেয়, শান্ত থাকুন। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন। আপনি যা করতে ভালোবাসেন, যা করতে চান সেটাই করে যান।

প্রতিশোধ নয়

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যখন কেউ অন্যকে অপমান করে তখন অপর ব্যক্তিটি হন্যে হয়ে এই অপমানের জবাব দেওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে। এটা ভুল। নিজের শক্তিকে নেতিবাচক খাতে খরচ করবেন না। বরং নিজের শক্তি ও সময় বিনিয়োগ করুন উৎপাদনশীল কাজে। ইতিবাচক মানসিকতা ধরে রাখুন। অন্যকে হারিয়ে দিতে নয়, শান্ত থেকে নিজের জন্য কাজ করতে থাকুন। 

জীবনের ইতিবাচক দিকগুলোতে দৃষ্টি রাখুন

আঘাতের অনুভূতি জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটা কাটিয়ে উঠতে না পারলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন না। আপনার উচিত এসবকে জীবন থেকে ঝেড়ে ফেলা এবং পুরোনো ঘটনা ভুলে যাওয়া। বরং জীবনের ইতিবাচক দিকগুলো খুঁজে বের করুন এবং ইতিবাচক মানসিকতার মানুষদের সঙ্গে থাকুন।

সবাইকে একই রকম ভাববেন না

প্রত্যেকের জীবনেই কঠিন সময় আসে। জীবনের সমস্যা থেকে কোনো মানুষ মুক্ত নয়। তাই এটা ভেবে নেবেন না যে কখনো আপনার জীবন একেবারে নিখুঁত হয়ে যাবে। সেইসঙ্গে কারও সঙ্গে খুব সহজেই নিজেকে জড়িয়ে ফেলবেন না। যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি সেই ব্যক্তিকে বা তার আচরণকে ভালোভাবে বুঝতে না পারবেন তার সঙ্গে জড়াবেন না। অন্যের আচরণ বা চরিত্র বুঝতে না পেরে হুট করে জড়িয়ে গেলে সেইটা দিনশেষে আপনাকে আঘাতই দেবে।

কাকে মনে রাখতে হবে আর কাকে ভুলে যেতে হবে এটা বুঝতে পারলে জীবন অনেক সহজ হয়ে যাবে।

তথ্যসূত্র: লিংকডইন

গ্রন্থনা: শেখ সিরাজুম রশীদ

 

Comments

The Daily Star  | English

Polythene ban: A litmus test for will and eco-innovation

Although Bangladesh became the first country in the world to announce a complete ban on the use of polythene bags in 2002, strict enforcement of the much-lauded initiative has only started taking shape recently.

15h ago