মি টাইম কী, কেন দরকার

মি টাইম
ছবি: সংগৃহীত

সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর কখনো কি আপনার মনে হয়েছে কিছুটা সময় নিজের জন্য দরকার বা নিজের সঙ্গেই সময় কাটানো দরকার? প্রত্যেকটি মানুষের কর্মস্থল, পরিবার, আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধবের বাইরেও নিজের জন্য কিছুটা সময় দরকার। এই সময়টি হবে একান্ত নিজের। 'মি টাইম' বলতে নিজের জন্য বরাদ্দ এই সময়টুকুকেই বোঝায়।

এই একান্ত সময়টি শুধু নিজের এবং নিজের যা ভালো লাগে তাই করতে পারেন এই সময়ে। বই পড়া, গান শোনা, ছবি আঁকা, ইয়োগা করা, রান্না করা, পছন্দের রেস্টুরেন্টে একা খেতে যাওয়া, এক কাপ চা হাতে বসে থাকা- আপনার যা ভালো লাগে তাই করতে পারেন মি টাইমে। প্রতিটি মানুষের মি টাইম কেন দরকার বা মি টাইমের কোন প্রয়োজনীয়তা আছে কি না তাই জানব আজ।

মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়া

শরীরের যত্নের পাশাপাশি মানসিকভাবে সুস্থ থাকাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নিজের সঙ্গে সময় কাটালে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে চিন্তামুক্ত হতে পারবেন। অফিসের বাড়তি চাপ বা বাড়ির কাজ এসব কিছুর বাইরেও নিজের জগতে মনোনিবেশ করার জন্য দিনের একটা পর্যায়ে নিজের জন্য কিছুটা সময় দরকার হয়। নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার জন্য মি টাইম খুবই প্রয়োজনীয়।

নিজেকে জানা

মি টাইম আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে। নিজের জন্য সময় ব্যয় করে আপনি নিজেকে ভালো চিনতে পারবেন। নিজের দক্ষতা সম্পর্কে জানতে পারবেন। প্রতিটি মানুষের নিজেকে খুব ভালো করে জানা উচিত। নিজেকে সময় না দিলে আমরা আমাদের দক্ষতা সম্পর্কে জানতে পারি না। নিজেকে জানার জন্য মি টাইম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টিতে আপনি নিজেই নিজেকে মূল্যায়ন করতে পারবেন। আত্মউপলব্ধির জন্যেও নিজের একান্ত সময় প্রয়োজন।

মনোযোগ বাড়ানো

একটানা কাজের মধ্যে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই আপনি কাজে মনোযোগ দিতে পারবেন না। মি টাইমে নিজেকে একটু সময় দিয়ে মানসিকভাবে চিন্তামুক্ত হলে কাজে মনোনিবেশ করা সহজ হবে। কাজ করতে করতে ক্লান্ত লাগলে নিজেকে জোর করে মনোযোগী করার চেষ্টা না করে একটু বিরতি নিন। বিরতিতে নিজেকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করুন। জোর করে একটানা কাজ করলে কাজের মান ভালো হবে না। তাই আশানুরূপ ফল পেতে নিজেকে সময় দিন।

কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য

প্রতিটি মানুষের কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনে ভারসাম্য প্রয়োজন। কাজ যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি নিজের জন্য সময় থাকাও গুরুত্বপূর্ণ। শুধু কাজ নিয়ে থাকলে ব্যক্তিগত জীবনে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। কাজ ও পারিবারিক জীবনের মাঝে নিজের জন্য আলাদা সময় ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করে। ফলাফল হিসেবে দুই জায়গাতেই একটি সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখতে পারবেন।

দক্ষতা ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধি

নিজের জন্য সময় থাকলে সেই সময়ে আপনি নতুন কিছু শিখতে পারবেন। ধরুন আপনি রান্না করতে পছন্দ করেন। মি টাইমে আপনি নিজের পছন্দ মতো নতুন কোনো রান্নার রেসিপি চেষ্টা করে দেখলেন এবং সফল হলেন। এভাবে বিভিন্ন রকম দক্ষতা আরও বাড়িয়ে তোলা যায়। দক্ষতা বাড়িয়ে তোলার সঙ্গে নিজেকে সৃজনশীল করে তোলার জন্যও মি টাইমের বিকল্প নেই। অবসর সময়ে নিজের যা করতে ভালো লাগে তা করতে পারেন।

সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা

মি টাইমে নিজের সঙ্গে সময় কাটিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারেন। মি টাইম আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। ফলে নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করতে পারবেন। আত্মনির্ভর হয়ে নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত নিতে শেখার পেছনে মি টাইম বিরাট ভূমিকা পালন করে।

নিজের সম্পর্কে সচেতন হওয়া

দিনের একটা অংশে নিজেকে সময় দেওয়ার অর্থ আপনি নিজেকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। এটি আপনার ব্যক্তিত্বকে দৃঢ় করবে। মানুষ যখন দেখবে আপনার কাছে নিজের মানসিক স্বাস্থ্য, আত্মবিশ্বাস, স্বাধীনতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তখন তারা আপনাকে সম্মান করবে। মি টাইম নিজেকে ভালবাসতে ও সম্মান করতে শেখায়। তার মানে এই নয় যে আপনি সবাইকে এড়িয়ে চলবেন। স্বাভাবিক নিয়মে সব কাজের পাশাপাশি নিজেকে সময় দেওয়ার ফলে আপনি নিজের সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠতে পারবেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

1h ago