টেরারিয়াম: কাঁচের পাত্রে বানিয়ে ফেলুন ছোট্ট এক অরণ্য

ছবি: সংগৃহীত

ইট কাঠের এই শহরে জঙ্গল কিংবা পাহাড়ের বিশালতায় হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই, চাইলেই মন ভরে নেওয়া যায় না বুনো গন্ধ। তবে টেরারিয়াম বা কাঁচের পাত্রে বাগান থেকে ঘরে বসেই পাহাড় আর সবুজের মেলবন্ধন উপভোগের সুযোগ খানিকটা পাওয়া যাবে।

 

টেরারিয়াম কী

ছোট আকারের গাছপালা, শৈবাল, ফার্ন, নানা বর্ণের পাথর, ছোট আকৃতির ডালপালা,আবার অনেক সময় ছোট ছোট জীবজন্তু ও পোকা-মাকড় দিয়ে সাজানো হয় এই টেরারিয়াম। এর কাঁচের জারগুলো অনেকটা গ্রিন হাউজের মতো কাজ করে। বাইরে থেকে সূর্যের আলো ভেতরে প্রবেশ করলে সহজে তা আর বের হতে পারে না। ফলে ভেতরের উদ্ভিদগুলো বেঁচে থাকে। গাছপ্রেমীদের জন্য নতুন এক আর্কষণ হলো এই টেরারিয়াম।

হাতের কাছে থাকা অল্প কিছু জিনিস দিয়ে বানানো যায় টেরারিয়াম। খুব একটা যত্নের প্রয়োজন হয় না বলে টেরারিয়াম বানাতে এবং ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে অনেকেই আগ্রহী।

সাধারণত ২ ধরনের টেরারিয়াম হয়ে থাকে-বদ্ধ ও উন্মুক্ত। বদ্ধ টেরারিয়ামে ট্রপিক্যাল প্ল্যান্ট যেমন মস, অর্কিড, ফার্ন, এয়ার প্ল্যান্ট ব্যবহার করা হয়। এটি ঢাকনা দিয়ে আটকানো থাকে, সপ্তাহে একবার খুলে মৃদু রোদে রাখতে হয়। এর ভেতরে নিজস্ব ইকোসিস্টেম তৈরি হওয়ার কারণে এটি আবদ্ধ অবস্থাতেও বেশ ভালোভাবে টিকে থাকে।

ছবি: সংগৃহীত

উন্মুক্ত টেরারিয়াম বানানো হয় সেসব উদ্ভিদ দিয়ে, যেসব উদ্ভিদের আর্দ্রতার প্রয়োজন হয় না। যেমন সাকুলেন্ট বা ক্যাকটাস জাতীয় গাছ। সরাসরি সূর্যের আলোর প্রয়োজন নেই এক্ষেত্রে।

কীভাবে বানাবেন

বেশকিছু সাধারণ উপকরণ দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন টেরারিয়াম। গ্লাস কনটেইনার, টুইজার, স্প্রে বোতল, ছোট পাথর, অ্যাকটিভেটেড চারকোল,  উপযোগী গাছ, পটিং সয়েল ও পছন্দমত বিভিন্ন ডেকোর আইটেম লাগবে। এই উপকরণগুলো আপনার কাছের নার্সারিতেই পাওয়া যাবে। কিংবা অনলাইনেও কিনে নিতে পারেন।

টেরারিয়াম বানানোর জন্য প্রথমেই ডিজাইন করে নেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টেরারিয়ামের জন্য বিশেষ ধরনের কাঁচের জার কিনতে পাওয়া যায়। তবে সেগুলো হাতের কাছে না থাকলে যেকোনো অ্যাকুয়ারিয়ামের দোকান থেকে পছন্দমত জার নেওয়া যেতে পারে। খানিকটা প্রশস্ত জার নিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।

ছবি: সংগৃহীত

তারপর জারের মাপ বুঝে পাথর বিছিয়ে দিতে হবে। কয়লা বা অ্যাকটিভেটেড চারকোল দিতে হবে, যা পাথরের স্তর থেকে পাতলা হবে। এটি জারের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করবে।তারপর পটিং সয়েল দিয়ে পানি স্প্রে করে একটু ভিজিয়ে নিয়ে সাবধানে প্ল্যান্টগুলো বসাতে হবে। অনেকে ঠিক মাঝে কাঠের ছোট কাণ্ড রেখে পাশে গাছগুলো সেট করে নেন। এতে টেরারিয়াম আরও সুন্দর দেখায়। তবে অবশ্যই গাছের কাণ্ড দেওয়ার আগে সেটা গরম পানিতে ভিজিয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।

এখন চাইলে পছন্দের মিনিয়েচার শো পিস বা রঙ্গিন পাথর দিয়ে সাজিয়ে নেওয়া যেতে পারে। তবে এগুলো পরিষ্কার করে নিতে হবে আগে। কারণ যদি অপরিষ্কার কোনো কিছু থাকে এর ভেতরে, তাহলে ফাঙ্গাস পুরো জিনিসটাই নষ্ট করে দিতে পারে। একটি টেরারিয়াম বানাতে খুব সময় না লাগলেও সেট সময় লাগে ১ থেকে ৩ মাস।

টেরারিয়ামের যত্ন

অতিরিক্ত রোদ বা বাতাস টেরারিয়ামের জন্য ক্ষতিকর। তাই এটি এমন স্থানে রাখতে হবে, যাতে অতিরিক্ত রোদ না লাগে। গাছ যদি বেশি বড় হতে থাকে, তখন ঢাকনা খুলে ছেঁটে দিতে হবে। এসব নিয়ম মানা হলে বছরের পর বছর টিকে থাকে টেরারিয়াম।

যারা গাছ ভালবাসেন আর ঘর সাজাতে ভালোবাসেন তাদের কাছে টেরারিয়াম এখন বেশ জনপ্রিয়। আর দেরি না করে এক টুকরো ছোট্ট অরণ্য বানিয়ে ফেলা যাক!

 

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

8h ago