দত্তক নিতে গেলে যেসব আইনি জটিলতা মোকাবিলা করতে হয়

প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত

পরিবার গঠন ও পিতৃত্ব-মাতৃত্বের আনন্দ বহু প্রজন্মের লালিত ইচ্ছা। সন্তান ধারণের মাধ্যমে অনেক দম্পতি তাদের পরিবার সম্প্রসারণের যাত্রা শুরু করে। তবে বিভিন্ন কারণে অনেক পরিবার সন্তান দত্তক নিতে চান। এই প্রক্রিয়ায় অসংখ্য গৃহহীন শিশু নতুন বাবা-মা ও আশ্রয়ের খোঁজ পেয়েছে। আপনি যদি বাংলাদেশে কোনো শিশু দত্তক নিতে চান, তাহলে এই আর্টিকেলে উল্লেখিত ১০টি বিষয় মাথায় রাখতে পারেন। 

দত্তক পার্সোনাল ল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত

দত্তকের প্রক্রিয়া প্রত্যেকের পার্সোনাল ল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। পার্সোনাল ল হলো একটি নির্দিষ্ট ধর্মের আনুষ্ঠানিক ধর্মীয় বিধান দ্বারা পরিচালিত নিয়ম। বাংলাদেশে দত্তক নেওয়ার কোনো নির্দিষ্ট আইন নেই।

হিন্দু ধর্মে দত্তক

হিন্দু ধর্মের উত্তরাধিকার বিধিতে দত্তক সন্তান এবং বায়োলজিক্যাল সন্তানের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এ ছাড়া, হিন্দু ধর্মে দত্তক নেওয়াকে ভালোভাবে গ্রহণ করা হয়।

পার্সোনাল ল অনুসারে মুসলমানরা দত্তক নিতে পারেন না

মুসলিম আইনে সন্তান দত্তক নেওয়ার ব্যবস্থা নেই। যদিও গার্ডিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট- ১৮৯০ অনুসারে কোনো পিতামাতা চাইলে শিশুর অভিভাবকত্ব অর্জন করতে পারেন। অভিভাবকত্ব অর্জন করলে শিশুকে নিজের জিম্মায় রাখা যায়, তবে এটি মোটেও পরিপূর্ণ পিতৃত্ব-মাতৃত্ব নয়।  

খ্রিস্টান ধর্মেও দত্তক নেওয়ার ব্যবস্থা নেই

দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে মুসলিম ও খ্রিস্টান ধর্মের আইনগুলো প্রায় একইরকম। খ্রিস্টান বাবা-মাও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো শিশুকে দত্তক নিতে পারেন না। 

বাংলাদেশে সিভিল আইনের মাধ্যমে পিতামাতারা সন্তানের অভিভাবকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন

গার্ডিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট- ১৮৯০ অনুসারে কোনো পিতামাতা শিশুর অভিভাবকত্ব অর্জন করতে পারেন। অভিভাবকত্ব অর্জন করলে শিশুকে নিজের জিম্মায় রাখা যায়, তবে এটি মোটেও পরিপূর্ণ পিতৃত্ব-মাতৃত্ব নয়। অভিভাবকত্ব ও দত্তক এক ব্যাপার নয়। 

দত্তক সন্তান মুসলিম ও খ্রিস্টান আইন অনুসারে সম্পত্তির অধিকার পাবে না

মুসলিম ও খ্রিস্টান পরিবারে দত্তক সন্তানের তার অভিভাবকের সম্পত্তির ওপর কোনো অধিকার থাকে না। কিন্তু অভিভাবক যদি জীবিত অবস্থায় শিশুকে কোনো সম্পত্তি উপহার দেন, তাহলে সেটি যেকোনো উপায়ে কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। 

বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে

গার্ডিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট- ১৮৯০ অনুসারে শুধু বাংলাদেশি নাগরিকরা কোনো শিশুর অভিভাবকত্ব নিতে পারবেন। কারও যদি দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকে, তাহলে তার অন্তত একটি নাগরিকত্ব বাংলাদেশের হতে হবে। অন্যথায় অভিভাবক বা সন্তান কেউই এই আইনের এখতিয়ারভুক্ত হবে না।

আদালতের মাধ্যমে অভিভাবকত্ব অর্জন করতে হবে

কোনো শিশুর অভিভাবকত্ব শুধু আদালতের আদেশের মাধ্যমেই পাওয়া যেতে পারে। দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া শেষে আদালত রায় দেন। আইনি প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য আইনজীবী, আদালত ফি, বারবার আদালতে যাওয়া এবং আরও অনেক কিছু প্রয়োজন হবে। যদি সন্তানকে নিয়ে কোনো বিরোধ না থাকে, তাহলে আদালতের কয়েকটি অধিবেশনের মাধ্যমে এটা প্রমাণ করা সম্ভব যে, আগ্রহী অভিভাবক সন্তানের অভিভাবকত্ব  নেওয়ার যোগ্য। তবে যদি কোনো বিরোধ থাকে, তাহলে প্রক্রিয়াটি আরও দীর্ঘ হতে পারে। এমনকি রায় ঘোষণার পরও যে কেউ আপিল করতে পারেন, ফলে প্রক্রিয়াটি আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে। আইনগতভাবে অভিভাবকত্ব অর্জনের ক্ষেত্রে এসব সম্ভাব্য বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে।

বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে

শিশুর অভিভাবক তার বাবা-মায়ের মতো অধিকার ভোগ করতে পারেন না। একজন অভিভাবক কেবল আদালতের একজন প্রতিনিধি, যিনি সন্তানের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য নিযুক্ত হয়েছেন। এজন্যই একজন অভিভাবক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্র ছাড়া শিশুকে বিদেশ ভ্রমণে নিয়ে যেতে পারেন না।

সিভিল আইনের অপর্যাপ্ততা

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রচলিত সিভিল আইনে নাগরিকদের পার্সোনাল ল নির্বিশেষে দত্তক নেওয়ার কোনো বিধান নেই। এখন বিশ্বজুড়ে সন্তান দত্তক নেওয়াটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। ক্রমবর্ধমান বন্ধ্যাত্বের হার এবং আশ্রমে বাস করা অসংখ্য শিশু- উভয় সমস্যারই সমাধান হতে পারে যদি শিশুরা তাদের প্রয়োজনমত পরিবার খুঁজে পেতে পারে, যেখানে তারা যত্ন ও ভালোবাসার সঙ্গে থাকতে পারবে। বাংলাদেশের সিভিল আইনে এ সম্পর্কিত বিধান থাকা উচিত।

বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী মুসলিম। যেহেতু মুসলমানদের জন্য আইনগতভাবে দত্তক নেওয়া সম্ভব নয়, তাই বাংলাদেশে দত্তক নেওয়ার চর্চাটা খুব প্রচলিত নয়। দত্তক নিতে আগ্রহী পরিবার ও শিশুদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে এমন একটি আইন প্রয়োজন।

লেখক তাসনিম হক একজন আইন গবেষক (এলএলবি অ্যান্ড এমডিএস)

অনুবাদ করেছেন আহমেদ হিমেল

 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh trade deficit July-August FY25

Trade deficit narrows 2.6% in July-April

The country’s trade deficit narrowed by 2.60 percent in the first ten months of the current fiscal year compared to the same period a year ago, thanks to a rise in export earnings coupled with subdued imports..During the July-April period of fiscal year (FY) 2024-25, the trade gap was $18.

5h ago