যত্নে থাকুক পরিবারের প্রবীণ সদস্যরা

ছবি: সংগৃহীত

'এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান'। নতুন শিশুকে স্থান করে দিতে মানুষের বয়স বাড়ে, নবীন হয় প্রবীণ, আসে বার্ধক্য। পরিবারের প্রবীণ সদস্যরা আমাদের বটবৃক্ষ। এই বটবৃক্ষের ছায়াতলে দীর্ঘসময় থাকতে হলে দরকার পর্যাপ্ত সেবা, যত্ন ও মনোযোগ। এ যত্ন শুধু শরীরের খেয়াল রাখা কিংবা খাবারদাবারের নিয়মকানুন নয়, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্নও অনেক প্রয়োজনীয়।

চলুন দেখে নিই কী করে পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের যত্ন নেওয়া যায়-

সঙ্গ দিন

প্রবীণ বয়সে যে বিষয়টির অভাব সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয় তা হলো সঙ্গ দেওয়া বা সময় দেওয়া। প্রতিদিনের ব্যস্ততার কারণে অনেকেই ঠিকঠাক মতো পরিবারের প্রবীণ সদস্যের খোঁজ নিতে পারেন না বা সময় দেওয়া হয় না। এটি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। একাকিত্ব প্রবীণদের বিষণ্ন করে তুলতে পারে, যা পরে তাদের স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বয়স হতে থাকলে অভিজ্ঞতার ঝুলিতে অনেক গল্প জমা হয় যা তারা বলতে চান। কিন্তু এই গল্প শোনার সময় আমাদের হাতে থাকে না। প্রবীণদের সঙ্গ দিন, তাদের সঙ্গে গল্প করুন।

 

 

নমনীয় হোন

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মেজাজেরও পরিবর্তন হতে থাকে। কেউ কেউ অতিরিক্ত খিটখিটে হয়ে যান, আবার কেউ কথাবার্তা কমিয়ে ফেলেন, কারো আবার আচরণে ছেলেমানুষী ভাব চলে আসে। যে পরিবর্তনই আসুক না কেন, পরিবারের গুরুজন হিসেবে তাকে ভালো রাখার, তার পাশে থাকার দায়িত্ব আপনার। প্রবীণদের প্রতি নমনীয় হোন, তাদের প্রতি সহনশীল আচরণ করুন।

ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখুন

আপনার পরিবারের প্রবীণ সদস্য কখনো আপনার বাবা-মা কিংবা দাদা-দাদী, নানা-নানি অথবা অন্য সম্পর্কেরও হতে পারে।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মানসিক পরিবর্তন আসে। তাছাড়া জেনারেশন গ্যাপের কারণে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি না-ই মিলতে পারে। এজন্য বৃদ্ধরা যে কোনো সময় যে কোনো মন্তব্য করে ফেললে সে বিষয়ে প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে ক্ষমাশীল হোন। তার অনেক আচরণ হয়তো আপনার পছন্দ হবে না, তবুও তার সঙ্গে রাগ করবেন না বা বাজে আচরণ করবেন না। কারণ এক সময় প্রবীণরাও শিশুর মতোই হয়ে যান।

প্রাধান্য দিন

প্রবীণদের মন ভালো রাখার অন্যতম উপায় হচ্ছে তাদের গুরুত্ব দেওয়া, যেকোনো বিষয়ে তাদের মতামতের প্রাধান্য দেওয়া। বাড়ির বয়স্ক ব্যক্তিরা যদি বুঝতে পারেন তারা পরিবারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, এটি তাদের নিজেকে সুস্থ রাখার অন্যতম নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়। একটি শিশুকে বড় করতে যতটা স্নেহ প্রয়োজন হয়, বৃদ্ধ বা বয়স্ক ব্যক্তিরাও ততটা স্নেহ আর মনযোগের দাবিদার।

খাবারের বিষয়ে সতর্কতা

আপনার পরিবারের প্রবীণ সদস্য কী খাচ্ছেন, প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাচ্ছেন কি না কিংবা শরীরের ক্ষতি হয় এমন খাবার গ্রহণ করছেন কি না সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে দানা বাঁধতে থাকে নানা ধরনের রোগবালাই। এসব রোগের সঙ্গে খাবার গ্রহণেও সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়ে যায়। এই সীমাবদ্ধতা মেনে তার পুষ্টির চাহিদা পূরণ হচ্ছে কি না সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন।

বিনোদনের ব্যবস্থা

বয়স্ক ব্যক্তিদের মন প্রফুল্ল রাখা তাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাদের মন ভালো রাখতে বিনোদনের ব্যবস্থা করুন। কী তাদের মন ভালো রাখতে পারছে সে দিকে মনযোগী হোন। কেউ কেউ টেলিভিশন দেখতে পছন্দ করেন, কেউ কেউ আবার বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দিতে পছন্দ করেন, কেউ কেউ রান্নাবান্না করতে ভালবাসেন। তাদের পছন্দের দিকে লক্ষ্য রেখে বিনোদনের ব্যবস্থা করুন। মাঝে মাঝে সময় করে পরিবারের সবাই মিলে ঘুরতে যান। এতে তাদের মন ভালো থাকবে।

নিয়মিত চেকআপ করান

তাকে নিয়মিত চেকআপ করাতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ খাওয়াতে হবে, কোনো ব্যায়াম করতে হলে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। এই সময় বয়স্ক বাবা-মা হয়তো কখন কোন ওষুধ খেতে হবে তা ভুলে যেতে পারেন। নিজেরাই মনে রেখে তাকে নিয়ম করে ওষুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

মনে রাখতে হবে, আপনার বয়স্ক প্রিয়জনদের আগলে রাখার দায়িত্ব আপনারই। তারা আপনাকে শৈশবে যেভাবে আগলে রেখেছেন, তাদেরও আগলে রাখুন সেভাবেই ।

Comments

The Daily Star  | English

US enters Israel-Iran war. Here are 3 scenarios for what might happen next

Now that Trump has taken the significant step of entering the US in yet another Middle East war, where could things go from here?

26m ago