বিড়ালের কুস্তি: মারামারি নাকি খেলাধুলা

ছবি: সংগৃহীত

পোষা প্রাণীর জগতে অন্যতম স্থান দখল করে আছে বিড়াল। আদুরে, অত্যন্ত আরামপ্রিয় আর স্বভাবে দুষ্টু এই প্রাণীর মতিগতি বোঝা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে মানুষের জন্য। মেজাজ ভালো নাকি খারাপ, খুশিতে লাফাচ্ছে নাকি রাগে– এগুলো বোঝা মুশকিল হয়ে পড়ে।

যদি কারো কাছে একাধিক বিড়াল থেকে থাকে, তবে তাদের কুস্তি করতে দেখে প্রশ্ন জাগে, ওরা খেলছে না মারামারি করছে? এ প্রশ্নের উত্তর পাবেন মনোবিজ্ঞানের কয়েকটি কৌশল মাথায় রাখলে।

বিড়ালরা কখন খেলে এবং কখন একে অপরের ওপর আক্রোশে ফেটে পড়ে, এর মাঝামাঝি কোনো অবস্থানও তাদের মধ্যে আছে কি না– এই বিষয়টি বুঝতে গবেষক দল মোট ১০৫টি ভিডিও বিশ্লেষণ করেছেন। এতে বিড়ালের নিজস্ব যোগাযোগ ক্যামেরাবন্দী করা হয়। ভিডিওগুলোতে মোট ২১০টি বিড়াল ছিল।

বিশ্লেষণ পরবর্তী ফলাফল থেকে তারা সাধারণ কিছু আচরণের তালিকা বা ইথোগ্রাম তৈরি করেন, যা থেকে বিড়ালের আচরণ সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া সম্ভব। বিড়ালের অলস ভঙ্গিমায় বসে থাকা, কুস্তি করা, একে অপরকে ধাওয়া করা, অন্যান্য মিথস্ক্রিয়ামূলক আচরণ, জড়বস্তু নিয়ে খেলা করা এবং আওয়াজ করা। এই বিষয়গুলো থেকেই বিড়ালের আচরণ নির্ধারণ করা যায়।

বিড়ালের আওয়াজ

মারামারি করছে নাকি খেলাধুলা, এই দুটো বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য করতে অন্যতম ভূমিকা রাখে বিড়ালের আওয়াজ। যেমন ৪০ শতাংশ ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিড়ালরা যখন একে অপরের সঙ্গে  কুস্তি করে, তখন যদি সেটা মারামারি হয়– তবে গলা থেকে আওয়াজ বের হবে। এই আওয়াজটা বেশ রাগী রাগী, 'গরররর' জাতীয় শব্দ। অন্যদিকে খেলাধুলার সময় বা বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে তারা যখন একে অপরকে স্পর্শ করে বা কুস্তিতে লিপ্ত হয়, তখন এমন আওয়াজ হয় না। এ সময় আবার তারা কিছুক্ষণ পরপর বিশ্রামও নেয়, যা কিনা মারামারির সময় ঘটে না।

ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

আরেকটি বিষয়ও খেয়াল করা যেতে পারে। খেলাধুলার সময় বিড়ালরা একে অন্যকে ধাওয়া করে এবং ২ পক্ষই এতে অংশ নেয়। অর্থাৎ বিড়ালদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার অর্থ হচ্ছে, সব ঠিকঠাক আছে। অন্যদিকে মারামারির সময় বেশিরভাগ সময় এক পক্ষ আক্রমণ করে এবং অন্য পক্ষ পালিয়ে বেড়ায়। তখন দুর্বল পক্ষকে রক্ষা করাই হবে বিচক্ষণের কাজ।

শরীরী সংকেত

যদি  বিড়ালদের দেখে মনে হয়, তারা আরামে আছে এবং শরীরী ভাষায় আলস্য ছড়িয়ে পড়ছে– তাহলে কোনো পক্ষই রেগে নেই। কিন্তু যদি বিড়ালের কান একেবারে সোজা হয়ে যায় বা পেছনে বেঁকে যায়, লেজ ফুলিয়ে ফেলে– তবে মারামারি এড়ানো কঠিন হবে।

অনিশ্চয়তা

তবে অনেক সময় এত সহজে বোঝা নাও যেতে পারে। কারণ কখন যে তাদের খেলাধুলা মারামারিতে রূপ নেয়– তা হয়তো তারা নিজেরাও বোঝে না। এমনটাই দেখা গেছে গবেষণার ২৮ শতাংশ ভিডিওতে। আচরণ বেশ ক্রীড়াপূর্ণ মনে হলেও তা আক্রমণে রূপ নিতে খুব একটা সময় নেয়নি। অন্যের সঙ্গে মত না মিললে খেলার সময় কোন্দল বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, ঠিক যেমনটা মানুষের ক্ষেত্রে হয়। কে জানে, হয়তো মানুষের সঙ্গে থেকে থেকে বিড়ালরাও পরমত অসহিষ্ণুতায় ভুগছে!

একেক বিড়াল একেক রকম হয়। সাধারণ স্বভাবের বাইরেও প্রতিটি বিড়ালেরই নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে, যা তাদের মধ্যকার যোগাযোগকে প্রভাবিত করে। তাই তাদের হাবভাব বুঝতে না পারলে আরেকটু মনোযোগ দিতে হবে।

ঝগড়া থামাবেন যেভাবে

কখনো যদি বিড়ালের ঝগড়ার মাঝখানে গিয়ে পড়া হয়, তবে খেয়াল রাখতে হবে– কোনোভাবেই যেন ওই অর্থে 'মাঝখানে' না যাওয়া হয়! এতে করে ২ পক্ষের রাগের মুখোমুখি হতে হবে। টেনে-হিঁচড়ে সরিয়ে নেওয়াও ভালো বুদ্ধি নয়। এমন পরিস্থিতিতে বরং একটি বিড়ালের মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা যায় পছন্দের কোনো খেলনা বা খাবার দেখিয়ে।

তথ্যসূত্র:

১. https://www.rover.com/blog/how-do-cats-communicate-with-each-other/

২.https://www.psychologytoday.com/us/blog/animal-emotions/202302/are-cats-playing-fighting-or-unsure?fbclid=IwAR1JgBfz-ft08keSd877RZDcEZy7j4n2nVmaLU1PEEos7jbaPE79Iucpud8

 

 

 

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

13h ago