রাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনুন এই রমজান থেকেই

ছবি: সংগৃহীত

আধ্যাত্মিকতা ও একাগ্রতা বৃদ্ধি এবং আত্মসংযমের জন্য রমজান সুন্দর এক সময়। তবে পবিত্র এই মাসে ক্ষুধা, তৃষ্ণা এবং প্রাত্যহিক জীবনযাপনের হঠাৎ পরিবর্তনের কারণে অনেকের জন্যই কঠিন হয়ে যায় মেজাজ ধরে রাখা। মনে রাখতে হবে, রাগ খুব সাধারণ আবেগের বহিঃপ্রকাশ। এই রাগ নিয়ন্ত্রণের সমাধান খোঁজাও জরুরি।

রমজানে রাগ নিয়ন্ত্রণের কিছু উপায় জানিয়ে দিচ্ছি আজ।

সহনশীলতা চর্চা

রাগ মোকাবিলার অন্যতম উপায় সহনশীলতার চর্চা এবং বোঝার চেষ্টা। নিজেকে অন্য ব্যক্তির জায়গায় রেখে তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়গুলোকে দেখা। তাদের আচরণের কারণ নিজেকে জিজ্ঞাসা করা এবং একইসঙ্গে সহানুভূতিশীল হওয়া। মনে রাখা দরকার, প্রত্যেকেই তাদের নিজস্ব সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে রমজান মাসে সদয় ও ধৈর্যশীল হওয়া জরুরি।

শান্তভাবে শ্বাস নিন

রাগ মোকাবিলার জন্য ধীর-স্থির হওয়ার রয়েছে বেশ কিছু অনুশীলন। তবে এরমধ্যে নিজের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী উপায়টি বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক চাপ কমানোর জন্য ২টি প্রচলিত পদ্ধতি হলো শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এবং ধীরে ধীরে পেশীকে শিথিল করা। ২টি ব্যায়ামই করা যায় অল্প সময়ের মধ্যে এবং শান্তভাবে। সুতরাং কাজের চাপের কারণে বা কোনো দাওয়াতে গিয়ে ‌যেখানেই বা যে কারণেই রাগ হোক না কেন, সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

মনে রাখতে হবে, স্থির হওয়ার কৌশলগুলো আয়ত্ত্বে আনতে প্রয়োজন অভিজ্ঞতা। এগুলো কার্যকরী কি না তা প্রথমে বিশ্বাস নাও হতে পারে অথবা ভাবতেই পারেন, এগুলো আপনার ক্ষেত্রে কাজ করবে না। তবুও অনুশীলনের মাধ্যমে একসময় রাগ নিয়ন্ত্রণের অন্যতম কৌশল হয়ে উঠতে পারে এসব।

উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি এড়িয়ে চলুন

রমজান মাসে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার অন্য উপায় হল যতটা সম্ভব এমন পরিস্থিতি এড়ানো, যেগুলো রাগিয়ে তোলে। এড়িয়ে যেতে হবে দ্বন্দ্ব, নেতিবাচক মানুষ, চাপের পরিস্থিতি।

ক্ষুধা, তৃষ্ণা বা ক্লান্তির অনুভূতি হতে পারে এমন পরিস্থিতিগুলোও এড়ানো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এগুলো নিজেকে করে তোলে আরও খিটখিটে এবং ক্রোধপ্রবণ। এসব পরিস্থিতির মধ্যে পড়লেও শান্তভাবে এবং সম্মানের সঙ্গে দ্রুত সরে আসতে হবে।

রাগ প্রকাশ করুন সুস্থ উপায়ে

সর্বোচ্চ চেষ্টার পরও অনেকেই রাগ মোকাবিলা করতে পারে না। এক্ষেত্রে রাগ দমন না করে বা লুকিয়ে না রেখে সুস্থ উপায়ে প্রকাশ করা গুরুত্বপূর্ণ। কোনো অনুশীলন বা ব্যায়াম করার মাধ্যমে, লেখালেখি বা বিশ্বস্ত বন্ধু বা পরিবারের সদস্যের সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমে রাগের ব্যাপারটা প্রকাশ করার চেষ্টা করুন। অন্য ব্যক্তিকে দোষারোপ বা আক্রমণ না করে সম্মানজনক উপায়ে আপনার রাগ প্রকাশ করা জরুরি। অনুভূতি প্রকাশের জন্য 'তুমি কেন এটা করেছ?' এমন না বলে 'আমি হলে এটা করতাম' এভাবে বলুন এবং অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গিও বোঝার চেষ্টা করুন।

কৃতজ্ঞ থাকুন এবং ইতিবাচক চিন্তা করুন

কৃতজ্ঞতা এবং ইতিবাচক চিন্তাভাবনার ওপর জোর দেওয়া রমজানের সময়ে রাগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। প্রতিদিন কিছু সময় নিয়ে ভেবে দেখুন, আপনার কৃতজ্ঞতার, ইতিবাচক চিন্তাভাবনার এবং অনুভূতির প্রতিফলন হচ্ছে কি না।

ইতিবাচক চিন্তাভাবনাকে উন্নীত করে এমন কৌশলে মনোনিবেশ করতে পারেন। জীবনের ভালো জিনিসগুলোতে মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে নিজের মানসিকতাকে রাগ থেকে দূরে সরিয়ে আরও শান্তিপূর্ণ এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

রমজান মাসে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা অন্তরের শান্তি এবং আত্মিক মর্যাদা বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য।

পরিশেষে গভীরভাবে শ্বাস নিন, সহানুভূতির চর্চা করুন, উত্তেজক পরিস্থিতি এড়িয়ে চলুন, স্বাস্থ্যকর উপায়ে রাগ প্রকাশ করুন এবং কৃতজ্ঞতা ও ইতিবাচক চিন্তাভাবনার দিকে মনোনিবেশ করুন। মনে রাখবেন, রাগ একটি স্বাভাবিক আবেগ হলেও তবে নেতিবাচক পরিণতি এড়াতে এর লাগাম টেনে ধরা গুরুত্বপূর্ণ।

অনুবাদ করেছেন তানজিনা আলম

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka, Delhi eager to take ties forward

Dhaka and New Delhi committed to advancing bilateral relationship for mutual benefit in the first high-level official talks since Bangladesh’s political changeover.

7h ago