টাকা জমানোর উপায়
দীর্ঘদিন ধরে টাকা জমানো বা সঞ্চয়ের চেষ্টা করছেন, কিন্তু পারছেন না! এই সমস্যা শুধু আপনার একার নয়, আমাদের অনেকের। গত দুই বছর যথাক্রমে ২০২১ ও ২০২২ সালে মানুষের ব্যক্তিগত সঞ্চয়ের হার কমেছে বলে ফোর্বসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ফোর্বস বলছে, বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের খরচ বেড়েছে। এ কারণে সঞ্চয়ের হার কমেছে। তাই এখন সঞ্চয়ের জন্য আরও বেশি সচেতন হতে হবে।
কেন টাকা জমানো উচিত?
আমাদের জীবনে অনিশ্চয়তার শেষ নেই। যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। এসব অপ্রত্যাশিত ব্যয়ের জন্য আগে থেকে পরিকল্পনা থাকা উচিত। যেমন- বাড়ি মেরামত, সন্তানের পড়ালেখা বা চিকিৎসা বিল। তাছাড়া জমানো টাকা বা সঞ্চয় থাকলে তা জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। নর্থওয়েস্টার্ন মিউচুয়ালের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা টাকা জমান তারা কম উদ্বিগ্ন থাকেন এবং তাদের ঘুমও অনেক ভালো হয়।
এছাড়া সঞ্চয়ের বড় সুবিধা হলো- যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যাতেও নিজেকে স্বাভাবিক রাখা যায়। আবার হঠাৎ করে চাকরি হারালেও জমানো টাকা হয়ে ওঠে বড় অবলম্বন। এসব কারণেই আমাদের টাকা জমানো উচিত বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
কীভাবে দ্রুত টাকা জমাবেন
হঠাৎ করে জীবনধারাতে পরিবর্তন না এনেও ধীরে ধীরে অর্থ সাশ্রয়ের মাধ্যমে দ্রুত টাকা জমানোর উপায় আছে। সেজন্য নিচের পরামর্শগুলো অনুসরণ করতে পারেন।
একটি বাজেট তৈরি
বাজেট হচ্ছে অর্থ সাশ্রয়ের প্রথম ধাপ। শুরুতে আয় এবং বর্তমান ব্যয়গুলোর তালিকা করতে হবে। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে ব্যাংক স্টেটমেন্টগুলোও প্রিন্ট করতে হবে। তারপর পুরো তালিকাটি দেখে কোথায় কতটা ব্যয় হয়েছে তা দেখে নিতে হবে। এবার পুরো ব্যয় আলাদা আলাদা শ্রেণিবিভাগ করে তালিকা করতে হবে। মানে কোন কোন খাতে ব্যয় হয়েছে তা নির্দিষ্ট ক্যাটাগরিতে লেখা।
ব্যয় কমানো
এরপরে কোথায় সবচেয়ে বেশি ব্যয় কমানো সম্ভব তা নির্ধারণ করতে তালিকাটি চিরুনি বিশ্লেষণ করতে হবে। যদি দ্রুত অর্থ সাশ্রয়ের প্রয়োজন হয়, তাহলে শুরুতে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়কে টার্গেট করতে হবে। যেমন- কেনাকাটা, ডাইনিং, চাঁদা, বিনোদন কিংবা উপহার কেনা। কারণ, চাইলেই এই ব্যয়গুলো কমানো সম্ভব। কিন্তু, বাড়ি ভাড়া বা নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারের ব্যয় কমানো সহজ নয়। তাই ওই অপ্রয়োজনীয় ব্যয় ছাটাই করে বাড়ি ভাড়া বা নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের সঙ্গে সমন্বয় করুন। তাহলে ব্যয় কমবে এবং টাকা জমানোও সহজ হবে।
আয় বাড়ান
ব্যয় কমানোর সময় যদি আয় বাড়ানো যায় তাহলে তো খুবই ভালো। কারণ, দ্রুত টাকা জমানোর অন্যতম উপায় হলো আয় বাড়ানো। যদিও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জন্য এটি সম্ভব নয়। তাই তাদের অন্যান্য উপায়গুলো ধারাবাহিকভাবে মেনে চলতে হবে।
জীবনযাত্রার অভ্যাস পরিবর্তন
মানছি এই ধাপটি কঠিন হতে পারে, কিন্তু এটি অত্যন্ত কার্যকর এবং ফলপ্রসূ উপায়। ধূমপান, রেস্টুরেন্টে খাওয়া, আবেগী কেনাকাটা কিংবা বাজি ধরার মতো ব্যয়বহুল অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এসব অভ্যাস ছাড়তে পারলে অনেক টাকা বাঁচানো সম্ভব।
একটি ভালো সেভিংস অ্যাকাউন্ট
বর্তমান অ্যাকাউন্টটি কতটা লাভজনক তা যাচাই করতে হবে। যদি লাভজনক হয়, তাহলে কতটা তাও যাচাই করতে হবে। যদি ফলাফল সন্তুষ্টজনক না হয় তাহলে খোঁজ-খবর নিয়ে আরও ভালো কোনো সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এ ব্যাপারে যাদের সেভিংস অ্যাকাউন্ট আছে তাদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। অথবা সরাসরি ব্যাংকে গিয়েও তথ্য নেওয়া যেতে পারে।
অফারে কেনাকাটা নিয়ন্ত্রণ করা
শপিংমল ও শপিংসেন্টারগুলো এড়িয়ে চলা ভালো। কারণ, এসব জায়গা আমাদের কেনাকাটা করতে প্রলুব্ধ করে। যেকোনো ব্রান্ডের আউটলেটের সামনে বিভিন্ন ছাড়ের বিজ্ঞাপন থাকে। এগুলো দেখে আমরা অপ্রয়োজনীয় জিনিসও কিনে ফেলি। তাই এগুলো এড়িয়ে চললে ব্যয় কমানো সম্ভব। বর্তমানে বিভিন্ন ব্র্যান্ড প্রচারমূলক ইমেইল পাঠায়। এগুলো মানুষকে প্রলুব্ধ করার কৌশল। তাই সবচেয়ে ভালো হয় এসব ইমেইল আনসাবস্ক্রাইব করে রাখা।
শেষ কথা টাকা জমানোর কোনো নিখুঁত উপায় নেই। তবে, উপরের পরামর্শগুলো মেনে চললে কিছুটা হলেও টাকা জমাতে পারবেন। আর টাকা জমানো কোনো বাজে অভ্যাস নয়, বরং ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমাদের সবার টাকা জমানো উচিত।
Comments