শীতে শ্রীমঙ্গলে ঘুরতে যাওয়ার মতো ৫টি স্থান

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত
ছবি: আসিফ হোসেন খান

শীতের প্রায় শেষ, তারপরও কুয়াশার চাদরে ঢাকা চায়ের রাজধানী যেন অপেক্ষা করে আছে অতিথি-পর্যটকদের জন্য। চা বাগানের জন্য বেশি জনপ্রিয় হলেও অন্যান্য বেশ কিছু দর্শনীয় স্থানের দেখা মেলে শ্রীমঙ্গলে।

প্রকৃতির আলিঙ্গনে ঘেরা এ এলাকার আশেপাশের মোট ৫টি স্থান নিয়ে খোঁজখবর থাকছে এ লেখায়। 

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত

ঠিক শ্রীমঙ্গলে নয়, তবে একই জেলার বড়লেখা নামক আরেকটি উপজেলায় রয়েছে এক মনোমুগ্ধকর জলপ্রপাত। সিলেট শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই স্থানে বাস, ট্রেন বা ব্যক্তিগত পরিবহনের মাধ্যমে যাওয়া যাবে। বড় বড় পাথর, ক্ষীণ জলস্রোত আর প্রশান্তিদায়ক সবুজে ঘেরা মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে প্রায় সারা বছরই থাকে পর্যটকদের আনাগোনা। তবে জলধারা উপভোগের পাশাপাশি এর পিচ্ছিল ঢালগুলোতে সাবধানে থাকতে হবে। প্রায় ২০০ ফুট উপর থেকে আছড়ে পড়া জলের স্রোত যে কাউকে আহত করতে সক্ষম।

বাইক্কা বিল

একাধারে পাখি, মাছ ও গাছগাছালির অভয়ারণ্য বাইক্কা বিল মূলত হাইল হাওরের অন্তর্ভুক্ত একটি অংশ। অগভীর এই হ্রদটিতে বিভিন্ন গাছপালার দেখা মেলে। সেইসঙ্গে রয়েছে স্থানীয় জলাভূমিও। এর অবস্থান শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারের মাঝপথে। বিলের ঘেরাটোপে প্রবেশ করতেই পাখিদের মন মাতানো কলকাকলিতে মন ভরে উঠবে। যেহেতু বাইক্কা বিলে মাছ ধরা নিষেধ, বিলে থাকা মাছের ঝাঁক প্রতি বছরই পাখিদের আকর্ষণ করে। শীতকালে এখানে পরিযায়ী পাখিরা ভিড় করে। তাই প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য অন্যতম পছন্দের জায়গা এই বিল। পাখি দেখতে আসেন অনেকে, বিজ্ঞানীদেরও দেখা যায় দূরবীন নিয়ে বসে পড়তে। ব্যক্তিগত গাড়িতে করে গেলে ঢাকা থেকে বাইক্কা বিল পৌঁছাতে ৩ ঘণ্টার কিছু বেশি সময় লাগবে। বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময় এখানে নৌভ্রমণের অনুমতি দেওয়া থাকে। 

মাধবপুর লেক

কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর চা বাগানের অভ্যন্তরে অবস্থিত এই লেকটি। জলপদ্মসহ বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদে পরিপূর্ণ এই স্থানটিতে বহু ধরনের পাখিদেরও আনাগোনা রয়েছে। একেক ঋতুতে মাধবপুর লেকের যেন একেক রূপ। কারও চোখে হয়তোবা তা ধরা দিতে পারে জল-উপকথার বিচিত্র প্রাণীর আকৃতিতে। 

শীতকালে মাধবপুর লেকের মোহনীয় চেহারা ধরা দেয় পর্যটকদের কাছে। এ সময়ে সাদা পেটের বগলা পাখিও দেখা যায়। শ্রীমঙ্গল থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই স্বপ্নালু এই হ্রদের দেখা মিলবে। 

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান

বছরের পর বছর যায়, তবু এ স্থানের জনপ্রিয়তা বাড়ে বৈ কমে না। সেই কবে 'অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেইস' এর ফিলিয়াস ফগ এসে পৌঁছেছিলেন লাউয়াছড়ার অভ্যন্তরের রেলপথে, আজও লোকে সেখানে বেড়াতে যায়। প্রায় সারা বছরই এখানে পর্যটকদের ভীড় লেগে থাকে। বিরল প্রজাতির পাখি, বাঁদর, হরিণ প্রভৃতি প্রাণীদের বাসস্থান এই উদ্যান। এদেরকে এক নজর দেখার পাশাপাশি হাইকিং ও ট্রেকিংয়ের জন্যও এ বন বেশ উপযোগী। তবে সেসময় স্থানীয় একজন গাইড সঙ্গে রাখলে ভালো হয়। 

শীতকালে শিশিরের অন্য এক জাদু ছড়িয়ে পড়ে এই রেইনফরেস্টে। হালকা কাদামাখা পথ দিয়ে একা একা হেঁটে যেতেও মন ছুঁয়ে যাবে প্রশান্তি। নাগরিক কোলাহল এড়িয়ে কিছুক্ষণের এই নির্জনতা সঙ্গী হবে হয়তো কাছেই ডেকে ওঠা একটা পাখির। প্রকৃতি ধরা দেবে চোখের সীমানায়। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান মৌলভীবাজার শহর থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং বাস বা ট্রেনের মাধ্যমে এখানে যাওয়া সম্ভব। 

ইকো রিসোর্ট

সম্প্রতি অবশ্য প্রাকৃতিক স্থানগুলোর পাশাপাশি পর্যটকদের মন কেড়ে নেবার জন্য ইকো রিসোর্টগুলোও কম যায় না। প্রকৃতিকে সঙ্গে রেখেই সুলভ মূল্য থেকে শুরু করে বিলাসবহুল সব রিসোর্ট গড়ে উঠেছে শ্রীমঙ্গলের আশেপাশে। 

স্বপ্নঘুড়ি নামের একটি ভ্রমণ দলের বুকিং ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রধান নাসরিন বিনতে হামিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইকো রিসোর্ট মূলত পরিবেশবান্ধব এবং শ্রীমঙ্গল শ্যামলিমা আর চা বাগানে পরিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় রিসোর্টগুলো খুব সহজেই এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে মানিয়ে যায়। এ ছাড়া, শ্রীমঙ্গলের পর্যটন ক্ষেত্রের উন্নয়নের সঙ্গে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি পরিবেশের গুণমান দীর্ঘস্থায়ী করতে। আর তাই, ইকো রিসোর্টগুলো আরও মনোযোগ আকর্ষণ করছে।'

নাসরিনের মতে, টিলাগাঁও ইকো ভিলেজ এবং বালিশিরা ইকো রিসোর্ট এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য এবং ঘুরতে যাবার মতো। এ ছাড়া দুসাই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা এবং নভেম ইকো রিসোর্টেও ঢুঁ মেরে আসা যায়। 

 

অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী

 

Comments

The Daily Star  | English

JnU second campus: Project stalled amid bureaucratic hurdles

The construction of Jagannath University’s long-awaited second campus in Keraniganj has stalled due to bureaucratic delays.

4h ago