কালিজিরার যত গুণ

কালিজিরার উপকারিতা
ছবি: সংগৃহীত

কালিজিরা একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং ঔষধি গুণসম্পন্ন বীজ, যা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বহুকাল ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কালিজিরার মধ্যে প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

আজকে জানব কালিজিরার উপকারিতা। জানিয়েছেন লাইফ ট্রাস্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পুষ্টিবিদ মাহিনুর ফেরদৌস।

তিনি বলেন, কালিজিরা প্রকৃতির এক আশ্চর্য উপাদান, যা পুষ্টিগুণ ও ঔষধি গুণে পরিপূর্ণ। এটি নিয়মিত পরিমাণমতো খেলে শরীরকে সুস্থ রাখা এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর করা সম্ভব।

কালিজিরার পুষ্টি উপাদান

কালিজিরার ছোট ছোট বীজের মধ্যে রয়েছে উচ্চমাত্রার পুষ্টি উপাদান, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্রতি ১০০ গ্রাম কালিজিরার মধ্যে প্রধান পুষ্টি উপাদানগুলো হলো:

ক্যালরি: ৩৪৫-৩৫০ ক্যালরি

প্রোটিন: ১৭-২১ গ্রাম

ফ্যাট (চর্বি): ৩৫-৪০ গ্রাম

স্যাচুরেটেড ফ্যাট: ৪-৫ গ্রাম

মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট: ১৪-১৬ গ্রাম

পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট: ১৮-২০ গ্রাম

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: ০.৩-০.৫ গ্রাম

ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড: ৫৮-৬০%

কার্বোহাইড্রেট: ৩৮-৪২ গ্রাম

আহারযোগ্য ফাইবার: ৫-৭ গ্রাম

ভিটামিন এ: ৩৮ আইইউ

ভিটামিন বি১ (থায়ামিন): ০.৪ গ্রাম

ভিটামিন বি২ (রাইবোফ্লাভিন): ০.১১ গ্রাম

ভিটামিন বি৩ (নিয়াসিন): ৪.৫ গ্রাম

ভিটামিন বি৬: ০.৫ গ্রাম

ফোলেট (ভিটামিন বি৯): ৬০-৭০ মাইক্রোগ্রাম

ভিটামিন সি: ২১-২২ মিলিগ্রাম

ভিটামিন ই: ৩.৩ মিলিগ্রাম

ক্যালসিয়াম: ৩৫০-৩৭০ মিলিগ্রাম

আয়রন: ৯-১২ মিলিগ্রাম

ম্যাগনেসিয়াম: ১৫০-২০০ মিলিগ্রাম

ফসফরাস: ৪০০-৫০০ মিলিগ্রাম

পটাশিয়াম: ৮০০-৯০০ মিলিগ্রাম

সোডিয়াম: ৮৮ মিলিগ্রাম

জিঙ্ক: ৫-৬ মিলিগ্রাম

সেলেনিয়াম: ২.৫ মাইক্রোগ্রাম

বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট:

থাইমোকুইনোন: ৩০-৪৮%

পলিফেনল ও ফ্ল্যাভোনয়েড: ০.৮-১.৫%

স্যাপোনিন ও স্টেরলস: ১-২%

এসব উপাদান কালিজিরাকে অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর এবং ঔষধি গুণসম্পন্ন করে তুলেছে।

কালিজিরার উপকারিতা

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি

কালিজিরায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও মিনারেল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত কালিজিরা খেলে ঠান্ডা, কাশি, জ্বর ইত্যাদি থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।

হজম শক্তি বাড়ায় ও লিভারের জন্য উপকারী

কালিজিরায় থাকা ফাইবার ও অন্যান্য উপাদান হজমক্রিয়া উন্নত করে এবং লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং পাকস্থলীর গ্যাস ও আলসার প্রতিরোধ করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

কালিজিরা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।

হার্টের সুস্থতা বজায় রাখে

ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকার কারণে কালিজিরা রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি রক্তনালিকে শক্তিশালী করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

চুল ও ত্বকের যত্নে উপকারী

কালিজিরার তেল চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে এবং মাথার ত্বকের সংক্রমণ দূর করে। এটি খুশকি প্রতিরোধ করে এবং নতুন চুল গজাতে সহায়ক। ত্বকের ব্রণ, দাগ ও র‍্যাশ দূর করতেও এটি কার্যকর।

ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে

কালিজিরার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণাগুণ সংক্রমণ ও ক্ষত দ্রুত নিরাময়ে সাহায্য করে। এটি ত্বকের প্রদাহ কমায় এবং দ্রুত ঘা শুকাতে সাহায্য করে। এতে থাকা প্রোটিন পেশি গঠনে সহায়তা করে এবং শরীরের কোষ মেরামতে সাহায্য করে

মস্তিষ্কের জন্য ভালো

কালিজিরার থাইমোকুইনোন নিউরোপ্রোটেকটিভ হিসেবে কাজ করে। এটি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং আলঝেইমার ও পার্কিনসন রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

বাত ও জয়েন্টের ব্যথা উপশমে সহায়ক

কালিজিরার প্রদাহনাশক বৈশিষ্ট্য আর্থ্রাইটিস, বাত ও জয়েন্টের ব্যথা উপশমে সাহায্য করে। এটি পেশি ও হাড়ের ব্যথা কমায়।

শ্বাসযন্ত্রের জন্য ভালো

এটি হাঁপানি, সাইনাসের সমস্যা ও ফুসফুসের সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। গলায় খুসখুসে কাশি বা ঠান্ডাজনিত সমস্যা দূর করতে কালিজিরা কার্যকর।

নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় উপকারী

প্রসব পরবর্তী স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে এবং মায়ের দুধ উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক।

কালিজিরা খাওয়ার নিয়ম

কালিজিরা কাঁচা, গুঁড়ো, মধুর সঙ্গে মিশিয়ে বা তেলে রূপান্তরিত করে ব্যবহার করা যায়। সাধারণত প্রতিদিন ১-৩ গ্রাম কালিজিরা খাওয়া নিরাপদ। তবে অতিরিক্ত গ্রহণ ক্ষতিকর হতে পারে।

সতর্কতা

Comments

The Daily Star  | English
Apparel Buyers Delay Price Increases Post-Wage Hike Promise

Garment exports to US grow 17%

Bangladesh shipped apparels worth $5.74 billion in the July-March period to the USA

8h ago