পূজায় জয়াদ্রিতা চ্যাটার্জির ৩ রেসিপি

শুক্তো। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের চেন্নাইয়ের রেস্টুরেন্টে বাঙালি খাবার পরিবেশন করে ইতোমধ্যে প্রশংসা কুড়িয়েছেন হোম শেফ জয়াদ্রিতা রাগবেন্দ্র চ্যাটার্জি। 

জয়াদ্রিতার মা বাংলাদেশি ও বাবা ভারতীয়। এ কারণে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ উভয় সংস্কৃতির সঙ্গে তার সম্পর্ক একেবারে পারিবারিক। 

এবারের দুর্গাপূজায় ওপার বাংলার খাবারের স্বাদ জানান দিতে জয়াদ্রিতা রাগবেন্দ্র চ্যাটার্জির কয়েকটি স্পেশাল রেসিপি এখানে দেওয়া হলো।

দুধ শুক্তো

করলার এই খাবারটি অন্যদের মতো মুগ্ধ করবে আপনাকেও। 

উপকরণ
২৫০ গ্রাম মিষ্টি আলু, গাজর, আলু; আধা ইঞ্চি করে কাটা করলা বা উচ্ছে বা ঝিঙ্গা; ১/৪ চা চামচ মেথি; ১/৪ চা চামচ মৌরি; ১/৪ চা চামচ আদা; ১ চা চামচ পোস্তদানা বা তিল; ১/২ চা চামচ সরিষা; ২টি তেজপাতা; ১ কাপ মসুর ডালের বড়ি; ১ কাপ দুধ; সরিষার তেল। 

পদ্ধতি
সরিষার তেল অল্প ব্যবহার করার জন্য ওয়েল ব্রাশ করে সব সবজি আলাদা করে ভেজে নিতে হবে। সবজিগুলো যেন নরম থাকে সেজন্য আলু বা অন্যান্য শক্ত সবজি আগে সেদ্ধ করে নেওয়া যেতে পারে। একইভাবে বড়ি ভেজে নিতে হবে। সবজিগুলো ফ্রাইপ্যান থেকে তুলে অল্প পরিমাণ তেল এবং সব মসলা দুই মিনিট কষিয়ে নিতে হবে। তারপর একে একে ভাজা সবজিগুলো দিয়ে তেল না ছাড়া পর্যন্ত রান্না করতে হবে। 

মিশ্রণটি শুকিয়ে গেলে একটু তেল দেওয়া যেতে পারে। সবজিগুলো এমনিতেই মিষ্টি, তবে বাড়তি মিষ্টি করতে চাইলে এক চিমটি চিনি দিতে পারেন। সবজি থেকে তেল ছাড়লে দুধ দিয়ে দিতে হবে। তারপর আপনার প্রয়োজনমতো ঘন না হওয়া পর্যন্ত ফুটাতে হবে। 

কালোজিরা বেগুন দিয়ে ইলিশ

টকজাতীয় ক্ল্যাসিক ডিশের স্বাদ মিলবে এ খাবারে। 

উপকরণ
৪টি বড় গোল বেগুন; আধা কেজি ইলিশ টুকরো করে কাটা; ২-৩টি তেজপাতা; ১/২ চা চামচ হলুদ; ১ চা চামচ কাঁচা মরিচ বাটা; ১ চা চামচ লাল মরিচ গুঁড়ো; ১/৪ চা চামচ মেথি; ১ চা চামচ সরিষা বাটা; অর্ধেক লেবুর রস এবং ২টি টমেটো পিউরি; ১ চা চামচ রসুন বাটা ও পেঁয়াজ বাটা; ১ চা চামচ কালোজিরা; ২টি লেবু পাতা; আধা চা চামচ তিলের বীজ বাটা; সরিষার তেল (পছন্দ অনুযায়ী)। 

পদ্ধতি
প্রথমে লেবু পাতা ও এক চিমটি লবণ দিয়ে ইলিশ মাছ সেদ্ধ করে কাটা আলাদা করে ফেলতে হবে। এ ক্ষেত্রে কিছু সময় লাগতে পারে। তাই চাইলে কাটাসহ মাছের টুকরো সেদ্ধ করে মশলা যোগ করতে পারেন।

চামচ দিয়ে বেগুনের ভেতরের অংশ বের করে নিন। বাইরের শাঁস কিছুটা সরিষার তেল দিয়ে মেখে ১০ মিনিট ওভেনে বেক করুন। পেঁয়াজ ও রসুন বাটা ভাজুন এবং মসলা দিয়ে তেল না ছাড়া পর্যন্ত রান্না করুন। শেষে সরিষা ও তিলের বীজ বাটার সঙ্গে কালোজিরা দিয়ে ১ মিনিট রান্না করুন। 

তারপর মিশ্রণে বেগুনের ভেতরের অংশ দিয়ে তেল না ছাড়া পর্যন্ত রান্না করুন। কড়াইয়ে মিশ্রণ যেন লেগে না যায় সেজন্য টমেটো পিউরি দিতে হবে। শেষের দিকে তেল ছাড়ার ঠিক আগে মাছ দিয়ে দিতে হবে এবং সেদ্ধ করতে হবে। মাছের টুকরো বা সেদ্ধ মাছের মিশ্রণ দেওয়ার আগে যেন ভালোভাবে মসলা দিয়ে মাখানো হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। 

পরিবেশন 
বেগুনের খোসায় মাছের মিশ্রণ দিয়ে পূর্ণ করে পরিবেশনের আগে উপরে ধনেপাতা ছিটিয়ে দিলেই তৈরি কালোজিরা বেগুন দিয়ে ইলিশ।

নারকেল নাড়ু 

চিরচেনা রেসিপির ভিন্ন সংস্করণ

উপকরণ 
১ কাপ বাদামের ময়দা (বাদাম গুঁড়ো করা); ৩ কাপ নারকেল কুড়ো; ৩/৪ কাপ তালের গুড় বা আপনার পছন্দের যেকোনো গুড়; ১/৪ কাপ নারকেল দুধ; অর্ধেক চা চামচ মৌরি বীজ গুঁড়ো।

পদ্ধতি
একটি বড় পাত্রে উপকরণগুলো ধীরে ধীরে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণ খুব বেশি তরল যেন না হয় সেজন্য অল্প পরিমাণ নারকেল দুধ দিতে হবে। গুড়ের ক্ষেত্রে সেই অনুযায়ী মিষ্টির পরিমাণ ঠিক করে নিন। গোল নাড়ু না হওয়া পর্যন্ত মাখতে হবে। তারপর ফ্রিজে রাখুন।

পূজার খাবারে পারিবারিক চর্চা প্রসঙ্গে জয়াদ্রিতা রাগবেন্দ্র চ্যাটার্জি বলেন, 'অন্যান্য পরিবারের মতোই ষষ্ঠীতে আমাদের দুর্গাপূজা উদযাপন শুরু হয়। সন্তানের কল্যাণদাতা ও রক্ষাকারী দেবী ষষ্ঠীর সম্মানে বিবাহিত নারীদের সারাদিন উপবাসের রীতি রয়েছে আমার বাবার পরিবারে। তাই মা, ঠাকুমা ও  কাকিমা শুধু তরল খাবার খেয়েই সন্ধ্যা পর্যন্ত উপবাস করতেন। সন্ধ্যায় লুচি, আলুর দম ও হালুয়ার মতো পেঁয়াজ-রসুন ছাড়া খাবার (সাত্ত্বিক) খেতেন।'

'পুরুষরাও প্রথমে সাত্ত্বিক খেয়ে ভাত, ডাল ও অন্যান্য নিরামিষ খেতে পারেন। আমার মায়ের পরিবারে আবার মাছের ঝোল আর ভাত খাওয়ার চল আছে। তবে উভয় পরিবারে সপ্তমী মানেই প্যান্ডেলে ঘুরে বেড়ানো এবং চাট, রোল, চুরমুড়ি খাওয়া।'

'অষ্টমীতে আমার বাবার পরিবারে নারীরা সন্ধ্যা পর্যন্ত উপবাস করতেন আর সাত্ত্বিক খাবার খেয়ে উপবাস ভাঙতেন। আর মায়ের পরিবারে মাংসের ঝোল আর ভাত খাওয়ার ঐতিহ্য।'

'মা দুর্গাকে বিদায় জানানোর সময় ঘনিয়ে এলে অর্থাৎ নবমীতে আনন্দঘন পরিবেশ তৈরিতে জলখাবারে সবার পছন্দের লুচি, সাদা আলুর তরকারি ও রসগোল্লা দেওয়া হতো। দুপুরের মেনুতে রাখা হতো ভাত ও পাঠার মাংস। দশমীতে মা দুর্গার বিদায়ী অনুষ্ঠানের প্রতীক হিসেবে খাবার রান্না করা হতো আমার মায়ের বাড়িতে।'

'দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জনের পর ছোটরা বড়দের পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ চাইত আর পেটপুরে মিষ্টি খেত। এপার বা ওপার বাংলা উভয় পরিবারেই এই প্রথা অনুসরণ করা হতো,' বলেন জয়াদ্রিতা রাগবেন্দ্র চ্যাটার্জি। 

অনুবাদ করেছেন আসরিফা সুলতানা রিয়া 

ইনস্টাগ্রামে জয়াদ্রিতাকে অনুসরণ করতে: https://www.instagram.com/foodofjoyflavoursofbengal/?hl=en

Comments

The Daily Star  | English
Polytechnic students protest Bangladesh 2025

Polytechnic students issue 48-hr ultimatum over six-point demand

Threaten a long march to Dhaka if govt doesn't respond to demands

2h ago