ডেঙ্গু কি একাধিকবার হতে পারে, জ্বর ছাড়াও কী উপসর্গ দেখা যাচ্ছে এবার

dengue
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। অনেক গবেষক ও চিকিৎসকরা বলছেন, এবার ডেঙ্গুর উপসর্গে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে।

এ বিষয়টিসহ ডেঙ্গু সংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে নিয়ে আমরা কথা বলেছি ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. তানজীর ইসলাম অদ্বিতের সঙ্গে।

তিনি বলেন, 'ডেঙ্গুর উপসর্গ আগের মতোই আছে। তবে কিছুটা পরিবর্তনও এসেছে। আগে যেমন শুধু জ্বর নিয়ে রোগীরা হাসপাতালে আসত, এখন দেখা যাচ্ছে যে ডায়রিয়া দিয়েও ডেঙ্গুর লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে।

আগে দেখা যেত জ্বর শুরু হওয়ার ৫-৬ দিন পর রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হতো। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে ১ বা ২ দিনের জ্বরের পরেই রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটছে। এখানে একটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।'

তিনি জানান, একজন ব্যক্তির সারাজীবনে মোট ৪ বার ডেঙ্গু রোগ হতে পারে। কারণ ডেঙ্গু যে ভাইরাসের মাধ্যমে হয় তার ৪টি ধরন হয়ে থাকে। একবার একজন ব্যক্তি এক ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হলে দ্বিতীয় বার আর সেই ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন না।

বাংলাদেশে অনেক বছর ধরেই ডেঙ্গুর প্রকোপ। অনেকেরই হয়তো ১ বা ২ বার ডেঙ্গু হয়েছে, কিন্তু তারা বুঝতেও পারেনি। তবে ডেঙ্গু রোগ যখন কারো তৃতীয় বা চতুর্থ বার হয় তখন সেটি আরও ভয়াবহভাবে আক্রান্ত করে বা আরও মারাত্মক রূপ ধারণ করে।

বর্তমানে যারা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ১ বা ২ দিনের মাথায়ই সংকটাপন্ন অবস্থায় চলে যাচ্ছেন, তারা সম্ভবত দ্বিতীয় বা তৃতীয় বারের মতো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন।

শিশু ও বড়দের মধ্যে পার্থক্যের কথা যদি বলা হয় তাহলে দেখা যাচ্ছে, ডেঙ্গু হলে শিশুদের মাল্টিপল অর্গান ফেইলিউর একটু বেশি দেখা যাচ্ছে প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায়৷ ডেঙ্গু হলে যে শুধু জ্বর বা ডায়রিয়া হচ্ছে তা নয়। ডেঙ্গু লিভার ও কিডনিকেও আক্রান্ত করে৷ এজন্য শিশুদের মধ্যে মাল্টি অর্গান ফেইলিউর বেশি দেখা যাচ্ছে।

ডেঙ্গু জ্বর হলে এখন প্লাটিলেট কাউন্টের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় রক্তের হেমাটোক্রিট লেভেলের ওপর। হেমাটোক্রিট লেভেলের মাধ্যমে রক্তে লোহিত রক্তকণিকার অনুপাত কত আছে তা জানা যায়। ডেঙ্গু হলে প্লাটিলেট কাউন্টের সঙ্গে হেমাটোক্রিট লেভেলও জানা গুরুত্বপূর্ণ। হেমাটোক্রিট বেড়ে যাওয়া বা অতিরিক্ত কমে যাওয়া রোগের ভয়াবহতা তৈরি করতে পারে। এজন্য এখন চিকিৎসকরা রক্তে হেমাটোক্রিট লেভেলের দিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

এখন ডেঙ্গুর যে ধরন সেটি দেখে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, জ্বর শুরু হওয়ার ১ বা ২ দিনের মধ্যেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে এবং শুরু থেকেই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নিতে। রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে ডাক্তার পরামর্শ দিতে পারবেন রোগীকে কখন হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে বা বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিতে পারবেন কি না।

প্লাটিলেট কাউন্ট সাধারণ দেড় লাখের ওপর থাকলে সেটিকে স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়। ডেঙ্গু হলে সেটি ২০ হাজার পর্যন্ত নেমে যেতে পারে। তবে যদি শরীরে কোনো রক্তক্ষরণ না হয় বা ইন্টার্নাল রক্তক্ষরণ না হয় তাহলে প্লাটিলেট লেভেল ২০ হাজারে নেমে আসলেও অতটা উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। প্লাটিলেট আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করলেই ধরে নেওয়া যায়, রোগীর অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।'

ডা. তানজীর ইসলাম অদ্বিত আরও জানান, 'পেঁপে পাতার রস খেলে প্লাটিলেট লেভেল দ্রুত বাড়ে এরকম একটা কথা প্রচলিত থাকলেও এর কোনো নির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এখনো নেই। ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত রক্তের প্লাটিলেট দ্রুত ভাঙতে শুরু করে। রক্তে প্লাটিলেটের ভাঙন রোধ করা প্লাটিলেট দ্রুত বাড়ানোর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই পেঁপে পাতার রসে প্লাটিলেট কাউন্ট বাড়লেও এসে প্লাটিলেটের ভাঙন কমে না। ফলে এটি রোগীর খুব একটা উপকারে আসে বলেও ধারণা করা যায়। কারণ ডেঙ্গু ভাইরাস যতক্ষণ শরীরে থাকবে ততক্ষণ প্লাটিলেট ভাঙতেই থাকবে।

সুতরাং পেঁপে পাতার রস খেলে প্লাটিলেট বাড়ে এই তথ্য নিয়ে কিছুটা দ্বিমত আছে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া পেঁপে পাতার রস খাওয়া খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।'

Comments

The Daily Star  | English

Record toll collection on Padma and Jamuna bridges

Padma Bridge generated a record toll revenue of Tk 54.32 crore, while Jamuna Tk 41.81 crore

2h ago