ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব: প্লাটিলেট কিট সংকটে ব্যাহত চিকিৎসা

স্টার ফাইল ফটো

ডেঙ্গু আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্লাটিলেট কিটের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এতে তাদের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে।

ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে যাদের শরীরে প্লাটিলেট কমে যায়, তাদের যত দ্রুত সম্ভব প্লাটিলেট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। অ্যাফেরেসিস মেশিন নামের একটি ডিভাইস ব্যবহার করে স্বাস্থ্যকর্মীরা রক্তদাতার রক্ত থেকে প্লাটিলেট সংগ্রহ করে থাকে, যা শিরার মাধ্যমে আক্রান্তদের শরীরে দেওয়া হয়। এই ডিভাইসের মাধ্যমে রক্তদাতার রক্ত থেকে প্লাটিলেট সংগ্রহ করার পর রক্ত পুনরায় দাতার শরীরে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি হাসপাতালের এক কর্মচারী বলেন, রক্তদাতার কাছ থেকে প্লাটিলেট সংগ্রহ করে তা রোগীর শরীরে দেওয়া পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার টাকা মূল্যের একক ব্যবহারযোগ্য আমদানিকৃত কিট প্রয়োজন। এই কাজটি করতে বেসরকারি হাসপাতালে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং সরকারি হাসপাতালে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়।

তবে, যেহেতু কিটের ঘাটতির কারণে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে প্রায়ই এই পরিষেবা স্থগিত রাখতে হয়, তাই প্লাটিলেট-সমৃদ্ধ প্লাজমা সংরক্ষণ করে রাখা হয়। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ৩-৪ জনের কাছ থেকে রক্ত নেওয়া হয় এবং এই পদ্ধতিতে প্লাটিলেট সংগ্রহের পর দাতাদের আর রক্ত ফেরত দেওয়া হয় না।

এই কারণে গুরুতর রোগীর জন্য পরিবারকে তাৎক্ষণিক একাধিক রক্তদাতা জোগাড় করতে হয়। পাশাপাশি এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে।

মে মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করায় জুলাইয়ের শেষের দিকে অ্যাফেরেসিস মেশিন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কিটের সংকট দেখা দেয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) প্লাটিলেট সংগ্রহের এই পরিষেবা এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছিল।

বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও এই ঘাটতি আরও তীব্র হয়েছে।

গ্রিন লাইফ হাসপাতালও গত সপ্তাহে প্লাটিলেট সংগ্রহের পরিষেবা স্থগিত করেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগস্টের শুরু থেকেই সেখানে কিট সংকট দেখা দেয়।

হাসপাতালটির টেকনোলজিস্ট আব্দুর রউফ বলেন, 'প্রাথমিকভাবে আমরা বহিরাগত রোগীদের সেবা দেওয়া স্থগিত করেছি। এখন আমাদের কাছে কোনো কিট মজুত নেই।'

বর্তমানে জাতীয় কার্ডিওভাসকুলার রোগ ইনস্টিটিউটে বহিরাগত রোগীদের পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ হেলথ রাইটস মুভমেন্টের সভাপতি অধ্যাপক রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, 'ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট যে হবে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। কিন্তু স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এই সংকট প্রতিরোধে উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। আমাদের সুসংগঠিত স্বাস্থ্যব্যবস্থা না থাকায় এমনটা হয়েছে।'

দ্য ডেইলি স্টার গত সপ্তাহে এক ডজন বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা জানান, তাদের হাসপাতালে কিট সংকট দেখা দিয়েছে।

ল্যাবএইড হাসপাতালের ব্লাড ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের প্রধান সৈয়দ মাহবুব করিম শামীম বলেন, চলতি মাসে প্লাটিলেট পরিষেবার চাহিদা ৫-৬ গুণ বেড়েছে।

তিনি জানান, ১-২৬ আগস্টের মধ্যে তারা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল থেকে এই পরিষেবা দেওয়ার অনুরোধ পেয়েছিলেন এবং ২০০ জন রোগীকে তারা এই পরিষেবা দিয়েছেন।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শ্যামলী ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ৬টি ব্লাড ব্যাংকের কর্মচারীরা জানান, গুরুতর রোগীর জন্য হন্যে হয়ে প্লাটিলেট খুঁজছেন, সংকটের কারণে এমন লোকদেরকেও ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।

চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কিট আমদানিকারকরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে পারেন বলেও জানান তারা।

রেড ক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংকের ইনচার্জ জাহিদুর রহমান বলেন, 'বিষয়টি আমাদের জন্যও বেদনাদায়ক। প্লাটিলেট সংগ্রহ পরিষেবা সেবা বন্ধের কথা জানালে মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়েন।'

কিট সরবরাহকারীদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরা এখন আর ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করতে পারছি না। তারা সবসময় বলে যে অভাব আছে। অথচ অতিরিক্ত অর্থ দিলে ঠিকই তারা কিটের ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা তাদের অতিরিক্ত অর্থ দিতে পারি না, যেহেতু আমরাও রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি নিতে পারি না।'

চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা জানান, তিনি আশা করছেন শিগগিরই এই সংকট কেটে যাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মুখপাত্র নুরুল আলম বলেন, 'আমাদের জানামতে প্লাটিলেট সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত কিটের কোনো সংকট নেই। আর আমরা আমদানিকারকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমদানির অনুমতি দিয়েছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Govt issues ordinance amending Anti-Terrorism Act

Activities of certain entities, and activities supporting them can now be banned

46m ago