ননস্টিক হাঁড়ি-পাতিল ব্যবহার ও যত্নের ১০টি টিপস

আপনি কি রান্নার জন্য ননস্টিক হাঁড়ি-পাতিল অনেক পছন্দ করেন? কিন্তু খুব জলদি নষ্ট হয়ে যায় বলে সেগুলো বেশি ব্যবহার করতে চান না? তবে আপনার জন্য আজ থাকছে কিছু বিশেষ টিপস, যেগুলো অনুসরণ করলে সহজে নষ্ট হওয়ার দুশ্চিন্তা ছাড়াই ননস্টিক হাঁড়ি-পাতিল ব্যবহার করতে পারবেন।
ছবি: সংগৃহীত

আপনি কি রান্নার জন্য ননস্টিক হাঁড়ি-পাতিল অনেক পছন্দ করেন? কিন্তু খুব জলদি নষ্ট হয়ে যায় বলে সেগুলো বেশি ব্যবহার করতে চান না? তবে আপনার জন্য আজ থাকছে কিছু বিশেষ টিপস, যেগুলো অনুসরণ করলে সহজে নষ্ট হওয়ার দুশ্চিন্তা ছাড়াই ননস্টিক হাঁড়ি-পাতিল ব্যবহার করতে পারবেন।

ননস্টিক হাঁড়ি-পাতিল ঠিক কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে সেটি কত দাম দিয়ে সেগুলো কিনেছেন তার ওপর নির্ভর করে না। যতটা যত্ন করে ব্যবহার করা যাবে এই ননস্টিকের পাতিলগুলো হবে ঠিক ততটাই দীর্ঘস্থায়ী।

কখন বুঝবেন যে আপনার পাতিলটি আর ব্যবহার করার উপযোগী নয়? যখন দেখবেন ননস্টিক প্যানের তলানিতে কোনো শাইন নেই এবং সেটির প্রলেপ সম্পূর্ণ উঠে গিয়েছে। যখন দেখবেন পাতিলের তলায় খাবার লেগে যাচ্ছে, সহজে উঠে আসছে না।

এরকম হলেই বুঝতে হবে ননস্টিক হাঁড়ি-পাতিল নষ্ট হয়ে গেছে। এমনটা যেন না হয় সেজন্য মেনে চলতে হবে কিছু সহজ নিয়ম। চলুন জেনে নিই সেগুলো।

প্রথম ব্যবহারের আগেই প্রি সিজন করে নেওয়া

একটি নতুন ননস্টিক কুকওয়্যার কেনার পরে সেটিকে প্রি সিজন করে নিলে দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়। প্রথমে নতুন থাকা অবস্থায় ফোম দিয়ে হালকা হাতে এর ধুলোময়লা সব পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপর কিছুটা তেল লাগিয়ে সেটিকে ওভেনে দিয়ে কিছু সময় তাপ দিয়ে সিজন করতে হবে। এই তাপের পরিমাণ ও সময় ননস্টিক প্যানের ওপরই নির্ভর করে। এর পরে সিজন শেষে এটি ঠাণ্ডা করে বাড়তি তেল মুছে নিতে হবে।

তবে সব ধরনের ননস্টিক প্যানে এই সিজনিং করা যাবে না। পাত্রের সঙ্গে থাকা ম্যানুয়াল আগে পড়ে নিতে হবে। যেসব পাত্র ওভেনে গরম করা যাবে না সেগুলোতে তেল লাগিয়ে কয়েক মিনিট চুলায় তাপ দিতে হবে। এরপর ধুয়ে নিলেই তা ব্যবহার করার জন্য তৈরি হয়ে যাবে। মনে রাখবেন নতুন অবস্থায় কোনোভাবেই সরাসরি রান্নার কাজে ননস্টিক ব্যবহার করা যাবে না।

ননস্টিকে কুকিং স্প্রে ব্যবহার না করা

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রান্নার সময় কুকিং স্প্রে ব্যবহার করলে সেই তেল প্যানের পাশ দিয়ে লেগে প্যানকে স্টিকি করে তুলবে, যা দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহারের জন্য ঠিক নয়।

যতবার স্প্রে ব্যবহার করা হবে ঠিক ততবারই ননস্টিক প্যানটি ভালো করে ধুতে হবে, যেন সেটি স্টিকি না হয়। স্টিকি ফ্রাইপ্যানে খাবার ঠিকভাবে রান্না করা যায় না এবং নিচে লেগেও যায়। 

খালি ননস্টিক হাঁড়ি-পাতিল চুলায় তাপে না দেওয়া

তেল ছাড়া ননস্টিক হাঁড়ি-পাতিল কখনোই চুলাতে বেশি সময় তাপে দেওয়া যাবে না। তেল দিয়ে তাপ দিলে যেমন ফ্রাইপ্যান দীর্ঘস্থায়ী হয়, তেমনি তেল ছাড়া তাপ দিলে তা ননস্টিক প্যানের কোটিংয়ের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। তাই চুলা কিংবা ওভেনে দেওয়ার আগেই পাত্রে তেল বা অন্যকিছু দিতে হবে।

মৃদু ও অল্প আঁচে রান্না করা

বেশি সময় উচ্চতাপে রান্না ননস্টিক পাত্রের জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে ধীরে ধীরে কোটিং নষ্ট হয়ে যায়। তবে টাইটেনিয়াম কোটিংয়ের প্যানগুলো অনেক বেশি হিট দিয়ে রান্না করলেও দীর্ঘস্থায়ী থাকে। যদিও বাংলাদেশে টাইটেনিয়াম কোটিংয়ের পাত্র খুব বেশি পাওয়া যায় না।

অন্যান্য প্যানগুলোতে বেশি তাপে রান্না করা উচিত নয়। বেশি তাপ বলতে এখানে ৫০০ ফারেনহাইট বা ২৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রান্না করা বোঝানো হয়েছে। এই তাপে ননস্টিক প্যানের কোটিং থেকে কেমিক্যাল রিলিজ হয় এবং তা নষ্ট হতে থাকে। ননস্টিক প্যান এমনিতে খুব সহজেই গরম হয়ে যায়। তাই কম তাপেও এগুলোতে ভালো রান্না হয়।

রান্নায় কম তেল ব্যবহার করা

ননস্টিক পাতিলে কম তেলেই রান্না করা সম্ভব। কম তেলে রান্না করার জন্যই এই পাত্রগুলোকে ব্যবহার করা হয়। অতিরিক্ত তেলে রান্না করা হলে সহজেই ননস্টিকের হাঁড়ি-পাতিল আঠালো হয়ে যেতে পারে। তাই অবশ্যই কম তেলে রান্না করতে হবে।

সঠিক কাঠি ও চামচ ব্যবহার করা

ননস্টিক হাঁড়ি-পাতিলে সিলিকন ও কাঠের তৈরি কাঠি চামচ ও স্প্যাচুলা ব্যবহার করতে হবে। স্টিল কিংবা লোহার তৈরি জিনিস যেমন চামচ, ছুরি, খুন্তি, হুইস্ক ইত্যাদি ব্যবহার করা উচিত না। এগুলো ব্যবহার করলে কোটিং নষ্ট হয়ে যায় দ্রুতই।

কাঠের ও সিলিকনের তৈরি গোল চামচ ও স্প্যাচুলা ব্যবহার করলে ভালো। সেগুলো কোটিংয়ের ক্ষতি করে না।

অনেক সময় মাংস রান্নার সময় মাংসের হাড়, যেমন নেহারি কিংবা পায়ের হাড়গুলো ননস্টিক প্যানে চুলের মতো চিকন দাগ তৈরি করে। তাই হাড়যুক্ত বা শক্ত কোনো কিছু রান্নার ক্ষেত্রে ননস্টিক না ব্যবহার করাই ভালো। সেক্ষেত্রে কাস্ট আয়রন বা স্টেইনলেস স্টিলের পাতিল ব্যবহার করতে পারেন।

গরম অবস্থায় ধোয়া যাবে না

গরম অবস্থায় ননস্টিক হাঁড়ি না ধোয়াই ভালো। হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তন হলে ননস্টিক হাঁড়ি-পাতিলের ওপরের স্তরটি নষ্ট হয়ে যায়। তখন রান্না করলে সহজেই তা নিচে লেগে যায়। আবার সবদিকে সমানভাবে রান্নাও হয় না।

নিম্নমানের ননস্টিক হাঁড়ি-পাতিলে এই সমস্যা বেশি হয়। তুলনামূলকভাবে উন্নত ধরনের পাত্রগুলোর তাপমাত্রার পরিবর্তন সহ্য করার সক্ষমতা বেশি থাকে।

হাত দিয়ে ধুয়ে শুকিয়ে নেওয়া

অনেকেই সময় স্বল্পতার জন্য ডিশ ওয়াশিং মেশিনে ননস্টিক প্যান ধুয়ে নিতে পছন্দ করেন। কিন্তু এই পদ্ধতিতে উচ্চ তাপ ও কেমিক্যাল ডিটারজেন্ট কোটিং অনেকটা নষ্ট করে ফেলে। তাই কষ্ট হলেও হাতের সাহায্যে এই প্যান ধোয়া বেশি ভালো। আর এই পাত্র ধোয়ার সময় মাইল্ড বা কেমিক্যালমুক্ত ডিটারজেন্ট বা লিকুইড ব্যবহার করতে হবে।

আর অবশ্যই ধোয়ার সময় পাতিলের নিচের তলানিসহ পরিষ্কার করতে হবে। তা না হলে ধীরে ধীরে পাত্রের নিচে তেলের আবরণে সেটি নষ্ট হয়ে যাবে। পরে পরিষ্কার কর‍তে অনেক বেশি ঘষামাজা করতে হবে।

ননস্টিকে খাবার সংরক্ষণ না করা

ননস্টিক পাত্রে খাবার সংরক্ষণ না করাই ভালো। অনেক খাবার ননস্টিক হাঁড়ি-পাতিলের তলানিতে এক রকমের কঠিন আবরণ তৈরি করে, যা পরে পরিষ্কার করতে অনেক বেশি কষ্ট হয়। এই পাত্রে খাবার ফ্রিজে রাখলে খাদ্যগুণও ঠিক থাকে না। তাই খাবার রান্নার পর খাবার ফ্রিজে রাখার জন্য অন্য পাত্র ব্যবহার করা উচিত।

সঠিকভাবে ননস্টিক হাঁড়ি-পাতিল সংরক্ষণ করা

এই হাঁড়ি-পাতিলগুলোর একটি থেকে আরেকটিকে যথেষ্ট দূরত্বে সংরক্ষণ করতে হবে। যদি একসঙ্গে রাখতেই হয় কিংবা যদি একটির ওপর আরেকটি পাত্র রাখতে হয় তাহলে অবশ্যই প্রতিটি পাত্রের মাঝখানে একটি করে তোয়ালে ব্যবহার করতে হবে। তাহলে একটি পাত্রের তলানি থেকে অন্য পাত্রে দাগ লেগে যাবে না কিংবা স্ক্র্যাচ পড়বে না।

ননস্টিক হাঁড়ি-পাতিল রান্নার জন্য অনেক উপযোগী। তবে ভুলভাল ব্যবহারের ফলে সেগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহার করা সম্ভব হয়ে উঠে না। যদি ওপরের পদ্ধতিগুলো মেনে চলা যায় তাহলে ননস্টিক পাত্র দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যাবে এবং সেগুলো ভালোও থাকবে। সহজেই নষ্ট হয়ে যাবে না।

Comments