মেহেদি ব্যবহারে যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকবেন

ছবি: সংগৃহীত

চাঁদরাতে মেহেদি না পরলে যেন উৎসবের আমেজ আসে না। মেহেদি পরা নিয়ে ছোট ভাইবোনদের ছোটাছুটি, কার মেহেদির রং কত বেশি গাঢ় হলো তা নিয়ে প্রতিযোগিতা, মেহেদির কড়া গন্ধ -এসবই যেন মধুর শৈশবের কথা মনে করিয়ে দেয়।

বাজারে নানা ধরনের মেহেদি আছে। এতসব মেহেদির মধ্যে কোনটি আসল আর কোনটি নকল তা যাচাই-বাছাই করে কেনা বেশ কঠিন। যাচাই-বাছাই করে মেহেদি কেনা হলে রংও যেমন ভালো আসবে, তেমনি তা ত্বকেরও কোনো ক্ষতি করবে না।

মেহেদি কেনার আগে

মেহেদি কেনার আগে অবশ্যই মোড়কে লেখা উপাদান ও ব্যবহারবিধি পড়ে নেবেন। উপাদান নিয়ে কোনো সন্দেহ বা দ্বিধা থাকলে সে মেহেদি না কেনাই ভালো হবে। তাছাড়া উৎপাদন ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ না দেখে কখনোই মেহেদি কিনবেন না। 'ইনস্ট্যান্ট কালার' বা '৫ মিনিটে রং দেয়' এমন মেহেদি কেনা থেকে বিরত থাকুন। কারণ এগুলোতে প্রচুর কেমিক্যাল দেওয়া থাকে, যা ত্বকে এলার্জি, র‍্যাশ, চুলকানি এমনকি চামড়া পুড়িয়ে ফেলার মত ক্ষতি করে থাকে।

এ বিষয়ে আমরিন হেনাস্টিকের সত্ত্বাধিকারী মেহেদি আর্টিস্ট আলিফ আমরিন বলেন, 'ত্বকে ব্যবহারের জন্য কেমিক্যালযুক্ত মেহেদি ব্যবহার না করে অর্গানিক মেহেদি ব্যবহার করাই উত্তম। অর্গানিক মেহেদির বিশেষত্ব হলো এর সব উপাদানই প্রাকৃতিক, কোনো প্রিজারভেটিভ থাকে না। রাসায়নিক সার ছাড়া প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মেহেদি পাতার গুঁড়া, লেবুর রস, এসেনশিয়াল ওয়েল ব্যবহৃত হয় এটি তৈরিতে। অর্গানিক মেহেদিতে গাঢ় রং আসতে কিছুটা সময় লাগলেও এটি ত্বকের ক্ষতি করে না। হাতের রংও বেশিদিন স্থায়ী হয়।'

মেহেদি ব্যবহারের সময়

মেহেদির গাঢ় রং পেতে হলে কিছু বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন। হাতে বেশ কিছুটা সময় নিয়ে মেহেদি দিতে বসুন। পুরোপুরি রং পেতে ৮-১০ ঘণ্টা সময় লাগে। তাই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মেহেদি দেওয়াই ভালো। মেহেদি ব্যবহারের আগে অল্প পরিমাণ হাতে অথবা কানের পেছনে ব্যবহার করে দেখতে পারেন এটি আপনার ত্বকের জন্য মানানসই কি না। এতে যদি আপনার অ্যালার্জি সমস্যা বা চুলকানি হয় তবে বুঝবেন এই মেহেদি আপনার ব্যবহারের উপযোগী নয়।

ফ্রিজে রাখা মেহেদি ব্যবহার করতে চাইলে আগে অবশ্যই কিছুক্ষণ স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রেখে দিতে হবে। এতে গাঢ় রং পাওয়া যায়। মেহেদি দেবেন উজ্জ্বল আলোতে। আবছা আলোতে মেহেদি দিলে ডিজাইন ভালো হয় না। মেহেদি সবসময় চিকন টিউব বা চিকন কোনে দিতে চেষ্টা করবেন। এতে ডিজাইন সুন্দর হয়।

মেহেদি দেওয়ার আগে ওয়াক্সিং করা উচিত হবে না। কারণ ওয়াক্সিং করার ফলে ত্বক মসৃণ হয়ে যায়। সেখানে মেহেদি রং ভালোভাবে বসে না এবং রং গাঢ় হয় না। শিশুর জন্য হাতে বাজারে কেনা মেহেদি না দেওয়াই ভালো। বাচ্চাদের কোমল ত্বক সুরক্ষিত রাখতে গাছের মেহেদি পাতা বেটে তা হাতে ব্যবহার করুন।  

মেহেদি যত ভালো মানেরই হোক না কেন তা হাতে লাগানোর পর যদি অস্বস্তি শুরু হয়, তবে দেরি না করে তখনই ধুয়ে ফেলুন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।

মেহেদি ব্যবহারের পর

মেহেদি ব্যবহারের পর কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে মনের মতো রং পাওয়া সম্ভব। ভালো রং পেতে মেহেদি তোলার পর কমপক্ষে ৩-৪ ঘণ্টা পানি থেকে দূরে থাকুন। এতে রং আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠে। অনেকে মেহেদি ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে থাকেন, যা একেবারেই উচিত নয়। কারণ সাবানের ক্ষারীয় উপাদান মেহেদির রং ফিকে করে ফেলে।

অনেকে মেহেদি শুকাতে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করেন, যা ডিজাইন নষ্ট করে ফেলতে পারে। মেহেদি প্রাকৃতিকভাবেই শুকাতে দেওয়া ভালো। মনে রাখবেন, যত বেশি সময় মেহেদি হাতে রাখবেন এর রং তত বেশি গাঢ় হবে। মেহেদি যত তাড়াতাড়ি শুকাবে, রং তত তাড়াতাড়ি বসবে এমন ধারণা করা ভুল।

মেহেদি শুকাতে শুরু করলে চিনি, লেবুর পানি হাতের উপর স্প্রে করতে পারেন। এতে মেহেদি ভালোভাবে হাতের উপর বসবে, রং গাঢ় হবে। মেহেদি উঠানোর পর হাতে সরিষার তেলও মাখতে পারেন।

অনেকে মেহেদির গাঢ় রং পেতে মেহেদি তেল ব্যবহার করেন। এটি মেহেদি লাগানোর আগে হাতে মেখে নিতে হয়। মেহেদি তেল কেনার আগে এর মেয়াদ এবং উপাদান দেখে নেওয়া উচিত।

পুরোপুরি প্রাকৃতিক বা অর্গানিক মেহেদির বাইরেও আজকাল বিভিন্ন ভালো মানের মেহেদি পাওয়া যাচ্ছে। একটি অর্গানিক মেহেদি কিনতে যেখানে ১০০-১৫০ টাকা খরচ হয়, সেখানে এগুলো পাওয়া যায় মাত্র ৪০-৫০ টাকার মধ্যেই। বিভিন্ন অনলাইন পেজে নিজ হাতে তৈরি অর্গানিক মেহেদি বিক্রি করছেন কেউ কেউ। এগুলো দামে একটু বেশি হলেও মানের দিকে বেশ ভালো।

তথ্যসূত্র: মিহেনা, হেনা কারাভান

Comments

The Daily Star  | English

India restricts land port imports of Bangladesh’s RMG, food

India has imposed new restrictions on the imports of key goods from Bangladesh, including garments and agro-processed food, through land ports, a move expected to disrupt trade flows and add logistical hurdles for exporters..According to a notification issued today by India’s Directorate G

1h ago