পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার

নার্সিসিস্ট চেনার ৫ উপায়

নার্সিসিস্ট চেনার ৫ উপায়
ছবি: ডয়েচে ভেলে

বন্ধুত্ব, প্রেম বা যেকোনো ধরনের সম্পর্কই হোক না কেন, তাতে উভয় পক্ষে ভারসাম্য বজায় থাকাটা জরুরি। কেউ একজন সব সময় চেষ্টা করেই যাচ্ছে আর অন্য পক্ষ শুধু তা গ্রহণ করেই সন্তুষ্ট– এমনটা হলে তালগোল পাকিয়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আর এমনটা হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে, যদি সম্পর্কের একজন নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের শিকার হন। 

এই ডিজঅর্ডারে মানুষ সব ক্ষেত্রে নিজের গুরুত্বকে অতিমাত্রায় বাড়িয়ে ভাবে এবং সে অনুযায়ী আচরণ করে থাকে। নিজের সম্পর্কে অবাস্তব এমন উঁচু ধারণা প্রায় সময়ই অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই একজন নার্সিসিস্ট ব্যক্তিকে চিহ্নিত করাটা নিজের এবং সেই ব্যক্তি, উভয়ের জন্যই আবশ্যক। আজকের এ লেখায় নার্সিসিস্টদের চরিত্রের বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হবে– 

নিজেকে বিশেষ মনে করা

একজন নার্সিসিস্ট কখনোই নিজেকে 'আর ১০টা মানুষের মতো' মনে করেন না। তার কাছে সব সময়ই নিজেকে অন্যদের চেয়ে আলাদা মনে হবে। নিজের আচরণ, মতাদর্শ, জীবনযাপনের ধরন– সব কিছুকে সাধারণের সীমানার বাইরে ধরে নিয়ে তিনি চলবেন। এই বিশেষ মনে করার বিষয়টি তাকে এতটাই গ্রাস করবে যে মানবীয় সম্পর্ক গড়তে গিয়ে কাউকে তার নিজের যোগ্য মনে না হওয়াটাও নার্সিসিস্টের জীবনে খুব স্বাভাবিক চিত্র। এমনকি তারা সম্পর্কে জড়াবার পরও, বাইরে প্রকাশ না করলেও মনে মনে অন্তত অপর ব্যক্তিটিকে তার চেয়ে কম বিশেষ বা অতি সাধারণ মনে করেন। 

নিজেকে জাহির করা

নিজেকে বিশেষ মনে করার অন্যতম বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আসে এই বৈশিষ্ট্যটি। আমাদের আশেপাশে এমন অনেকেই রয়েছেন, যাদের পছন্দের কাজ হলো সব সময় নিজের বড়াই করা। কোনো কাজে তারা দক্ষ হোন বা না হোন, অভিজ্ঞতা থাকুক চাই না থাকুক– তা নিয়ে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে গল্প রচনা করে নিজেদের জাহির করাটাই থাকে তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। বেশিরভাগ সময় এই আত্মম্ভরী স্বভাবের মানুষগুলোর এহেন আচরণ সহ্য করা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। এবং খুব সম্ভব এই ব্যক্তিরা নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের শিকার। হয়তো তারা নিজেও তা জানেন না। 

অন্যকে ছোট করা 

শুধু নিজেকে বড় করাই নয়, এমন ব্যক্তিদের পছন্দের তালিকায় থাকে অন্যকে ছোট করার স্বভাবও। বিভিন্ন ধরনের শোষণমূলক আচরণের মধ্য দিয়ে তারা জীবনে থাকা মানুষগুলোর আত্মবিশ্বাস গুঁড়িয়ে দিতে চেষ্টা চালিয়ে যান। যেন অন্যের ব্যর্থতাই হয়ে দাঁড়ায় তাদের নিজস্ব সাফল্যের মাপকাঠি। এমন লোকেরা ব্যক্তিজীবন ও কর্মক্ষেত্র– উভয় স্থানেই অন্যকে অহেতুক অপমান করা থেকে পিছু হটেন না এবং তা নিয়ে তাদের মধ্যে তেমন একটা অনুতাপও লক্ষ করা যায় না। 

সহমর্মিতার অভাব

অন্যকে অপমান করা যাদের পছন্দের কাজ, তাদের মধ্যে সহমর্মিতা না থাকাটাই হয়তো স্বাভাবিক। অর্থাৎ এই অস্বাভাবিক আচরণটিই স্বাভাবিক হয়ে ওঠে নার্সিসিস্টদের কাছে। তাদের কাছে কেউ কোনো সমস্যা বা মন খারাপ নিয়ে গেলে তারা খুব সহজে 'এ আর এমন কী!' বলে নিজেদের ঝাঁপি খুলে বসেন। এ ধরনের ব্যক্তিরা তেমন একটা ভালো শ্রোতা হন না, বরং এদের আলাপের মূল উদ্দেশ্য থাকে নিজের কথা বলা।

মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা

অন্যের সঙ্গে অসংবেদনশীল আচরণের অর্থ একেবারেই এই নয় যে নার্সিসিস্টরা চাইলেই সব সময় একা থাকতে চান বা পারেন। কেন না তাদের প্রয়োজন হয় নিরবচ্ছিন্ন মনোযোগ। এবং এ প্রয়োজন স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেকগুণে বেশি। তারা চান সকলের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকতে। তারা কারও কাছে মনোযোগ চাচ্ছেন কিন্তু পাচ্ছে না, এমনটা মেনে নেওয়া এ ধরনের ব্যক্তিদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। একজন নার্সিসিস্ট তাই এমন সব মানুষকেই কাছেপিঠে রাখতে পছন্দ করেন, যারা তাকে তোয়াজ করে চলবেন এবং প্রতিটি কাজের পর প্রশংসায় ভাসিয়ে দেবেন। গঠনমূলক সমালোচনা নেওয়াটা নার্সিসিস্টদের কম্মো নয়। এতে তারা ক্ষেপে ওঠেন। আর ক্রোধ সরাসরি প্রকাশ যদিবা নাও করেন, তবু মনে মনে ফুঁসতে থাকেন আর সমালোচনাকারী ব্যক্তিটিকে দূরে সরিয়ে রাখতেই আরাম বোধ করেন। 

নার্সিসিস্ট চেনার ৫ উপায়
নার্সিসাস। ছবি: সংগৃহীত

এই ডিজঅর্ডারটির নামকরণ করা হয় এক গ্রিক পুরাণের এক শিকারী চরিত্রের নামে। নিজের রূপে সর্বক্ষণ অহঙ্কারে পা পড়তো না তার। তাই দেখে প্রতিশোধের দেবী নেমেসিস তাকে অভিশাপ দেন, যেন সে একদিন নিজের প্রেমে ডুবে নিঃশেষ হয়ে যাবার। আমাদের সকলের মাঝেই জীবনে টিকে থাকার জন্য হলেও কিছু পরিমাণে আত্মপ্রেম থাকে। নিজেকে পছন্দ না করলে জগতে পছন্দের কিছু খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, একথাও ভুল নয়। কিন্তু অন্য যেকোনো বিষয়ের মতো পরিমিত পরিমাণ ছাড়িয়ে গেলে আত্মপ্রেমও হতে পারে আত্মঘাতী, ঠিক সেই অভাগা নার্সিসাসের মতো। তাই নিজেকে কিংবা সঙ্গীকে এই অদৃশ্য ফাঁদ থেকে ছাড়িয়ে আনতে ঠিক সময়ে মনোবিদের সাহায্য নেয়াটা জরুরি। 

 

তথ্যসূত্র: সাইকসেন্ট্রাল.কম, মায়োক্লিনিক, সাইকোলোজিডুডে

গ্রন্থনা: অনিন্দিতা চৌধুরী
 

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

13h ago