বিয়ের শাড়ি

বিয়েতে পরতে পারেন যেসব শাড়ি
ছবি: সাজ্জাদ ইবনে সাঈদ

আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিয়ের আয়োজন, সাজসজ্জা আর পোশাকে অনেক পরিবর্তন এসেছে। বিয়েতে কনেরা পরছেন লেহেঙ্গা, কেউ গাউন, ছেলেরা শেরওয়ানি বা পাঞ্জাবি ছেড়ে বেছে নিচ্ছেন ওয়েস্টার্ন আউটফিট। কিন্তু এত পরিবর্তনের মধ্যেও বিয়েতে শাড়ির আবেদন কখনোই ফিকে হয়ে যায়নি।

বিয়ের শাড়িতে বউ, এ যেন বাঙালির যুগ যুগ ধরে বহমান ঐতিহ্যের অংশ। আজকের আয়োজন থাকছে বিয়েতে কনের শাড়ি নিয়ে।

বেনারসি

কনের জন্য সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হলো বেনারসি শাড়ি। ভারতের বেনারসে এই শাড়ির উৎপত্তি, আর সেখান থেকেই শাড়ির এই নাম। বেনারসির খ্যাতি বিশ্বজোড়া। শুধু বাংলাদেশ নয় ভারতেও বিয়ের অনুষ্ঠানে কনেকে বেনারসি শাড়িতে সাজানো হয়। লাল বা অন্যান্য গাঢ় রঙে সোনালি রুপালি জরির ভারী কাজ এই শাড়িকে জমকালো করে দেয়।

জামদানি

বর্তমানে বেনারসির পরেই জামদানি শাড়ি হয়ে উঠেছে কনেদের প্রথম পছন্দ৷ বিয়ের পোশাক হিসেবে জামদানির আবেদন কিছুটা আলাদা। কারণ জামদানি সম্পূর্ণ দেশীয় শাড়ি। জামদানি শাড়ি তৈরিতে খুবই মিহি সুতো ব্যবহার করা হয়। হালকা ও আরামদায়ক হওয়ায় সারাদিন জামদানি পড়ে থাকলেও অস্বস্তি লাগার সুযোগ নেই। আজকাল নারীরা সৌন্দর্যের চেয়েও আরামদায়ক পোশাককে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। হারিয়ে যাওয়া মসলিন কাপড়ের পুরোনো গৌরব ফিরছে জামদানি শাড়ির হাত ধরে।

বর্তমান ফ্যাশনে গাঢ় রঙের চেয়ে হালকা রঙের জামদানির চাহিদা বেড়েছে। মিহি সুতোর শাড়িতে জরি সুতোর কাজ সত্যিই মনোমুগ্ধকর। সুতার কাউন্টভেদে একটি জামদানি শাড়ির দাম হাজার টাকা থেকে শুরু করে লাখ টাকা পর্যন্তও হতে পারে।

কাঞ্চিপুরাম

এই শাড়ির উৎপত্তি ভারতের দক্ষিণে তামিলনাড়ুর কাঞ্চিপুরাম অঞ্চলে। জায়গার নাম থেকেই শাড়ির নাম রাখা হয়েছে কাঞ্চিপুরাম। বর্তমানে অনেকেই বিয়েতে কনের সাজে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের সাজসজ্জা অনুসরণ করছেন। চওড়া জরির পাড় ও ভেতরে জরির কাজ করা উজ্জ্বল, ভারি ও আকর্ষণীয় এই শাড়িগুলো দেশে আজকাল খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

শাড়িগুলো কিছুটা ভারী হলেও বেনারসির চেয়ে হালকা। উজ্জ্বল রঙ এবং উন্নতমানের সিল্কের জন্য কাঞ্চিপুরাম শাড়ি বিয়েতে পড়ার জন্য খুবই আদর্শ। এই শাড়ির সিল্ক বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত করা হয়, তাই অন্যান্য শাড়ির থেকে এটি বেশি উজ্জ্বল হয়ে থাকে।

কাঞ্চিপুরাম শাড়ি কিনতে আপনার খরচ পড়তে পারে ২ হাজার থেকে ২০ হাজার বা মান অনুযায়ী আরও বেশি।

কাতান শাড়ি

বিয়েতে অনেকে কাতান শাড়ি পরে থাকেন। এই শাড়ির সবথেকে বড় সুবিধা হচ্ছে, বিয়ে ছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এটি পরা যায়। অপেরা কাতান, সাউথ কাতান, ইন্ডিয়ান কাতান, সিল্ক কাতান, বেনারসি কাতান, স্বর্ণ কাতান ইত্যাদি ছাড়াও অন্তত আরও ২০ রকমের কাতান শাড়ি বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। প্রতি বিভাগের শাড়িতেই রয়েছে ভিন্ন বৈশিষ্ট্য এবং নিজস্ব ডিজাইন। নিজের বাজেট অনুযায়ী সস্তা থেকে দামি, সবরকম কাতানই মার্কেটে পাবেন। তবে কম দামি কাতান শাড়ি উপর দিয়ে দেখতে ভালো হলেও এটির কাপড় হবে খসখসে। তাই কাতান কেনার সময় ভালোমতো বুঝেশুনে কেনা উচিত।

বালুচরি, স্বর্ণচরি

বর্তমানে বালুচরি সিল্ক শাড়ির চাহিদা তুঙ্গে আছে। শাড়ির পাড় আর জমিনে ছবি, কল্কা, পাড় ও বুটির কাজ এই শাড়িকে অনন্য করে তুলেছে। ভারতীয় এই শাড়ির ঐতিহ্য বেশ পুরোনো।

বালুচরি শাড়ির আঁচলে সুতার নকশায় ফুটিয়ে তোলা হয় নানা কাহিনী, চিত্র বা প্রাকৃতিক দৃশ্য। এই শাড়ির দাম ১৫ থেকে ২০ হাজার বা তার বেশিও হতে পারে।

বালুচরি ও স্বর্ণচরি শাড়ি প্রায় একই পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়। মূল পার্থক্য হলো সুতার কাজে। বালুচরিতে সুতার কাজ থাকে আর স্বর্ণচরিতে সোনালি জরির কাজ বেশি থাকে।

নকশাভেদে স্বর্ণচরির শাড়ির মূল্য ১০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠতে পারে।

অরগানজা

হালের অরগানজা পোশাকের চাহিদা এখন অনেক বেশি। কিছুদিন আগেও বিয়েতে অরগানজা শাড়ির চল ছিল না। সম্প্রতি বলিউডের অনেক সেলিব্রিটি অরগানজা লেহেঙ্গা বা শাড়ি পরার কারণে অনেকেই বিয়েতে অরগানজা পড়ছেন।

বিয়ের সাজে যারা একটু বৈচিত্র্য আনতে চান বা জাঁকজকমতার আড়ালে নিজেকে স্নিগ্ধভাবে ফুটিয়ে তুলতে চান, তাদের জন্য অরগানজা শাড়ি হতে পারে সেরা।

জর্জেট

কয়েক বছর আগেও বিয়েতে জর্জেটের ওপর ভারী জরির কাজের শাড়ি পড়তো কনেরা। কিন্তু বর্তমানে জর্জেট শাড়ির আবেদন কিছুটা কমে গেছে। তবে বিয়েতে আজকাল অনেকেই জর্জেটের লেহেঙ্গা পড়ছেন। জর্জেট খুবই হালকা আর আরামদায়ক হওয়ার কারণে বিয়ের মূল অনুষ্ঠানে না হলেও এনগেজমেন্ট অথবা বৌ-ভাতে পরার জন্য অনেকেই জর্জেটের শাড়ি পরে থাকেন। তাছাড়া জর্জেটের শাড়ির দামও মোটামুটি হাতের নাগালে।

এই শাড়িগুলো ছাড়াও শিফন, সিল্ক, রেশমি ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের শাড়ি বিয়ের অনুষ্ঠানে কনেদের পরতে দেখা যায়।  

Comments

The Daily Star  | English

BNP struggles to rein in the rogues

Over the past 11 months, 349 incidents of political violence took place across the country, BNP and its affiliated organisations were linked to 323 of these

9h ago