‘আমেরিকান বন্ধুদের দৃশ্যপটে আসা ইসরায়েলের দুর্বলতা ও অপারগতা প্রকাশ করেছে’

বক্তব্য রাখছেন আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ছবি: এএফপি
বক্তব্য রাখছেন আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ছবি: এএফপি

সব ধরনের জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে ইরানের তিন পরমাণু স্থাপনায় সপ্তাহান্তে বাঙ্কার বাস্টার বোমা ব্যবহার করে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ইতোমধ্যে পাল্টা হামলা চালানোর অঙ্গীকার করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খামেনি। দৃশ্যপটে আমেরিকার আবির্ভাবকে ইসরায়েলের দুর্বলতা হিসেবেও অভিহিত করেন তিনি।

আজ সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, ওই হামলায় ইরানের পরমাণু সক্ষমতা 'নিশ্চিহ্ন' হয়েছে। তবে অন্যান্য কর্মকর্তারা জানান, এখনো তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি ঠিক কতটুকু ক্ষতির শিকার হয়েছে, তা নির্ধারণ করার সময় আসেনি।

মার্কিন হামলার পর থেকেই গোটা বিশ্ব ইরানের জবাবের অপেক্ষায় উদ্বেগ-আশংকায় দিন কাটাচ্ছে। 

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি সামাজিক মাধ্যম এক্সের পোস্টে হুশিয়ার করে বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন শুরু করে 'বড় ভুল' করেছে ইসরায়েল। 

তিনি বলেন, 'জায়নবাদি শত্রু একটি বড় ভুল ও গুরুতর অপরাধ করেছে, এবং অবশ্যই এ কারণে তাদেরকে শাস্তি দিতে হবে।'

'জায়নবাদি শত্রুকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। এই মুহূর্তে তারা শাস্তি পাচ্ছে', অপর এক বার্তায় উল্লেখ করেন খামেনি।

মার্কিন হামলার দিকে ইঙ্গিত করে খামেনি বলেন, 'জায়নবাদি শাসকদের আমেরিকান বন্ধুরা দৃশ্যপটে এসেছে এবং তারা নানা কথা বলছে, যা ওই শাসকগোষ্ঠীর দুর্বলতা ও অপারগতা প্রকাশ করছে'

আজ সোমবারও ইরান-ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি বিমান হামলায় অব্যাহত ছিল।

ইসরায়েলি সেনা জানিয়েছে, তারা ইরান থেকে আসা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহত করতে ব্যস্ত ছিল।

অপরদিকে, ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম ফারস জানায়, তাদের আকাশ হামলা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইসরায়েলের ড্রোন হামলা ঠেকাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় মধ্যপ্রাচ্যের সব মার্কিন সামরিক ঘাঁটি সতর্ক অবস্থায় আছে। তেহরানের প্রতিশোধমূলক হামলার আশঙ্কায় দেশের বাইরে থাকা সব মার্কিন নাগরিককে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে ওয়াশিংটন।

'ইসরায়েল-ইরানের সংঘাতে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ভ্রমণ বিঘ্নিত হচ্ছে এবং সময়ে সময়ে বিভিন্ন দেশের আকাশসীমা বন্ধ থাকছে। ওই অঞ্চলে মার্কিন নাগরিক ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট স্থাপনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচি হতে পারে', নিরাপত্তা অ্যালার্টে উল্লেখ করা হয়।

তবে ফোরদো, ইসফাহান ও নাতাঞ্জের পরমাণু স্থাপনায় মার্কিন হামলার বিষয়ে অ্যালার্টে কিছু বলা হয়নি।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, মার্কিন হামলায় প্রমাণ হয়েছে, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের 'নেপথ্যে'  থেকে ওয়াশিংটনই কলকাঠি নাড়ছে। তিনি উচিত জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।

খামেনির ছবি হাতে এক ইরানি নারী। ছবি: এএফপি
খামেনির ছবি হাতে এক ইরানি নারী। ছবি: এএফপি

পেন্টাগনের পক্ষ থেকে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ নিশ্চিত করেন, ইরানের শাসক পরিবর্তনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালায়নি—হামলার উদ্দেশ্য ছিল দেশটির পরমাণু সক্ষমতা ধ্বংস করা।

তবে এর কয়েক ঘণ্টা পর, ট্রাম্প বিষয়টিকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশালে রসিকতা করেন।

তিনি লেখেন, 'হয়তো "শাসক পরিবর্তন" কথাটা লেখা রাজনৈতিক দৃষ্টিতে সঠিক নয়।'

'তবে ইরানের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী যদি ইরানকে আবারও সেরা বানাতে না পারে (মেইক ইরান গ্রেট এগেইন), তাহলে কেন সেখানে শাসকের পরিবর্তন হবে না???'

এরপর তিনি তার নিজের রাজনৈতিক স্লোগান মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইনের মতো করে লেখেন 'মিগা!!!' (মেইক ইরান গ্রেট এগেইন)।

মার্কিন হামলার পর থেকেই ইরানের সেনাবাহিনী ইসরায়েলি শহরগুলোতে হামলার মাত্রা বাড়িয়েছে।

তেল আবিবের কাছে অবস্থিত বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরসহ অন্যান্য এলাকায় পরিচালিত এসব হামলায় অন্তত ২৩ জন আহত হয়েছেন।

ইরানের মধ্যাঞ্চলে রোববার ইসরায়েলি হামলায় বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর নয় সদস্য নিহত হন। পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্সে হামলায় অপর তিন জন নিহত হন।

ইরানে হামলা চালিয়ে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে কূটনীতিক প্রক্রিয়া 'উড়িয়ে দিয়েছে' যুক্তরাষ্ট্র—এমন অভিযোগ করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি।  

রোববার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করতে মস্কো গেছেন তিনি।

রোববার রাশিয়া, চীন ও পাকিস্তান জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের অন্যান্য সদস্যদের সংগে ইরানে 'অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির' একটি প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করেছে।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

1h ago