আল জাজিরার বিশ্লেষণ

ভারত-পাকিস্তান কি পরমাণু বোমা ব্যবহার করতে পারে? রাষ্ট্রীয় নীতিতে যা আছে

পাকিস্তানের জাতীয় দিবস উপলক্ষে ইসলামাবাদে আয়োজিত সামরিক কুচকাওয়াজে স্বল্প-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হাতফ-২ প্রদর্শন করা হয়। ২৩ মার্চ, ২০০৭। ছবি: রয়টার্স

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা নতুন মোড় নিয়েছে। আজ শনিবার ভোরে পাকিস্তান জানায় তারা একাধিক ভারতীয় সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। এর আগে পাকিস্তান দাবি করে, ভারত তাদের তিনটি ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনাপ্রবাহ দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এবং তাদেরকে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে।

আজ ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক শোলা লাওয়াল সংবাদমাধ্যম আল জাজিরায় দুই দেশের পারমাণবিক অস্ত্র ও সেগুলোর ব্যবহার নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত ও পাকিস্তানের বৈরিতা দীর্ঘদিনের বিশেষ করে বিতর্কিত কাশ্মীর অঞ্চলকে কেন্দ্র করে। গত ২২ এপ্রিলে ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহালগামে প্রাণঘাতী হামলার পর এই বৈরিতা নতুন করে সহিংস রূপ নেয়। ওই হামলায় ২৫ পর্যটক ও এক স্থানীয় গাইড প্রাণ হারান। ভারত হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে, যদিও ইসলামাবাদ বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

এরপর থেকে দুই দেশ পরস্পরের বিরুদ্ধে একের পর এক পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে জড়িয়েছে। প্রাথমিকভাবে কূটনৈতিক পর্যায়ে লড়াই শুরু হলেও, তা দ্রুতই সামরিক সংঘাতের রূপ নেয়।

বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের ওপর গোলাবর্ষণ ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে। পরিস্থিতি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে। এই অবস্থায় প্রায় ১৬০ কোটির বেশি ভারতীয় ও পাকিস্তানির পাশাপাশি গোটা বিশ্ব এক বিপজ্জনক বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে। কারণ, যদি এই যুদ্ধ শুরু হয়, তবে তা হবে ইতিহাসে প্রথম যুদ্ধ যেখানে পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে লড়বে।

'দুই পক্ষের জন্যই পারমাণবিক হামলা চালানো বোকামি হবে। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা খুবই কম। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে তা অসম্ভব,' আল জাজিরাকে বলেন স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড্যান স্মিথ।

তাহলে পরিস্থিতি এত দূর পর্যন্ত কীভাবে পৌঁছাল? ভারত ও পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার কেমন? আর তাদের নিজস্ব নীতি অনুযায়ী কবে বা কোন পরিস্থিতিতে তারা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে?

২২ এপ্রিলের পর থেকে উত্তেজনা বাড়ছে যেভাবে

পেহালগাম হামলার দায় প্রথমে স্বীকার করলেও পরে সেই দায় থেকে সরে আসে সশস্ত্র সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)। ভারত দীর্ঘদিন ধরে টিআরএফকে পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়েবার (এলইটি) ছায়া সংগঠন বলে দাবি করে আসছে। এলইটি একাধিকবার ভারতে হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে আছে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলা। সেই হামলায় ১৬০ জনের বেশি মানুষ নিহত হন।

পেহেলগাম হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করেছে নয়াদিল্লি। তবে পাকিস্তান এতে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

পেহেলগাম হামলার পর ভারত দুই দেশের মধ্যে সই করা ঐতিহাসিক সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি থেকে সরে আসে। উভয় পক্ষই কূটনৈতিক মিশন কমিয়ে দেয় এবং নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরে যেতে বলে। পাকিস্তানও ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তিসহ আরও কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার হুমকি দেয়। শিমলা চুক্তির মাধ্যমেই বিতর্কিত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা বা লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) নির্ধারিত হয়েছে।

গত ৭ মে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত; দাবি করে তাদের হামলার লক্ষ্য ছিল 'সন্ত্রাসী অবকাঠামো' ধ্বংস করা। অন্যদিকে, পাকিস্তান জানায়, ভারতের হামলায় দুই শিশুসহ কমপক্ষে ৩১ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

পরদিন ৮ মে পাকিস্তানের প্রধান শহরগুলোয় ড্রোন পাঠায় ভারত। নয়াদিল্লির দাবি, এটি তাদের পাল্টা পদক্ষেপ। কারণ এর আগে পাকিস্তান তাদের লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছিল। এরপর, টানা দুই রাত ধরে ভারতের সীমান্ত শহর ও ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। ভারতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, পাকিস্তানের সব হামলাচেষ্টা ভারতীয় বাহিনী ব্যর্থ করে দিয়েছে।

গত ৮ ও ৯ মে ভারতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার কথা অস্বীকার করে পাকিস্তান। কিন্তু আজ ভোরেই পরিস্থিতি বদলে যায়। পাকিস্তান প্রথম দাবি করে যে ভারত তাদের তিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর পরপরই পাকিস্তান দাবি করে, তারা কমপক্ষে সাতটি ভারতীয় ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। ভারতীয় ঘাঁটিগুলোয় হামলার বিষয়ে পাকিস্তানের দাবি অথবা পাকিস্তানের সামরিক স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অভিযোগের বিষয়ে নয়াদিল্লি এখনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

ভারত ও পাকিস্তানের কাছে কত পরমাণু বোমা আছে?

১৯৭৪ সালের মে মাসে ভারত প্রথমবার পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছিল। এরপর ১৯৯৮ সালের মে মাসে আরও কিছু পরীক্ষার পর দেশটি নিজেদেরকে পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে।

ভারতের পরীক্ষার কয়েক দিনের মধ্যেই নাগরিকদের প্রবল চাপে পাকিস্তানও ছয়টি পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়। আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক শক্তিধর দেশের তালিকায় যুক্ত হয়।

সেই সময় থেকে উভয় দেশই একে অপরের চেয়ে পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এর পেছনে খরচ করছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার।

সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতের কাছে আনুমানিক ১৮০টির বেশি পারমাণবিক ওয়ারহেড বা অস্ত্র আছে। পরমাণু বোমা বহনে সক্ষম দীর্ঘ পাল্লার ও সহজে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেওয়া যাওয়ার জন্য মোবাইল ল্যান্ড বেজড মিসাইল তৈরি করেছে। এছাড়াও, তারা রাশিয়ার সহায়তায় জাহাজ ও সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রও তৈরি করছে।

এদিকে, পাকিস্তানের কাছে ১৭০টির বেশি পারমাণবিক অস্ত্র আছে বলে ধারণা করা হয়। আঞ্চলিক মিত্র চীনের কাছ থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা পায় দেশটি। তাদের অস্ত্রভাণ্ডারে মূলত সহজে সরানো যায় এমন ছোট ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র আছে। সেগুলো ভারতের যেকোনো প্রান্তে আঘাত হানতে সক্ষম।

ভারতীয় কুচকাওয়াজে অগ্নি–৫ ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করা হয় | এএফপির ফাইল ছবি

ভারতের পারমাণবিক নীতি কী?

ভারতের পরমাণু শক্তির প্রতি আগ্রহ প্রথম শুরু এবং প্রসারিত হয়েছিল এর প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর অধীনে। তিনি মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে এটি ব্যবহার করতে আগ্রহী ছিলেন। তবে, পরবর্তী দশকগুলোয় আঞ্চলিক বিরোধের কারণে প্রতিবেশী চীন ও পাকিস্তানকে নিবৃত্ত করার উদ্দেশ্যে দেশটি তার পারমাণবিক শক্তির অবস্থান আরও দৃঢ় করেছে।

নয়াদিল্লি প্রথম ও একমাত্র পারমাণবিক নীতিমালা প্রকাশ করে ২০০৩ সালে। আনুষ্ঠানিকভাবে তা আর সংশোধন করা হয়নি। এই নীতির স্থপতি ছিলেন কে সুব্রামানিয়াম। তিনি বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বাবা।

নিউক্লিয়ার কমান্ড অথরিটির রাজনৈতিক পরিষদের প্রধান হিসেবে শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীই পারমাণবিক হামলার অনুমোদন দিতে পারেন। ভারতের পারমাণবিক নীতি চারটি নীতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি—

ক) আগে ব্যবহার নয় (No First Use – NFU): এই নীতির অর্থ হলো ভারত তার শত্রুদের ওপর প্রথম পারমাণবিক হামলা চালাবে না। তাদের ওপর পারমাণবিক হামলা হলেই কেবল ভারত পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে পাল্টা জবাব দেবে। ভারতের নীতি অনুসারে, ভারতীয় ভূখণ্ডে সংঘটিত হামলার জবাবে বা বিদেশি ভূখণ্ডে তার বাহিনীর বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হলে ভারত পাল্টা হামলা চালাতে পারে। ভারত পারমাণবিক শক্তিধর নয় এমন দেশগুলোর বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।

খ) বিশ্বাসযোগ্য ন্যূনতম প্রতিরোধ: ভারতের পারমাণবিক নীতির কেন্দ্রে আছে প্রতিরোধ ব্যবস্থা। অর্থাৎ ভারতের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের মূল উদ্দেশ্য হলো অন্য দেশ যেন ভারতকে পারমাণবিক হামলা চালানোর সাহস না করে, অর্থাৎ আগ্রাসন প্রতিহত করা। ভারত পরমাণু অস্ত্রকে এক ধরনের 'বিমা' হিসেবে দেখে যা তাকে সম্ভাব্য হামলা থেকে সুরক্ষা দেয়। এ কারণেই ভারত পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপটি)-তে সই করেনি। নয়াদিল্লির অবস্থান হলো, যদি পারমাণবিক শক্তিধর সব দেশ একযোগে এবং সমানভাবে নিরস্ত্রীকরণ না করে, তাহলে ভারতের পক্ষে একা নিরস্ত্রীকরণ সম্ভব নয়।

গ) ব্যাপক প্রতিশোধ: ভারতের নীতি বলছে—যদি কোনো দেশ প্রথমে ভারতের ওপর পারমাণবিক হামলা চালায়, তবে এর পাল্টা জবাব হবে ব্যাপক। এই প্রতিশোধমূলক হামলা এতটাই ধ্বংসাত্মক হবে যে হামলাকারী দেশের সামরিক সক্ষমতা পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

ঘ) রাসায়নিক অস্ত্রের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম: 'আগে ব্যবহার না করার' নীতির একটি ব্যতিক্রম হলো, যদি কোনো দেশ ভারত বা বিদেশে অবস্থিত ভারতীয় সামরিক বাহিনীর ওপর জৈবিক বা রাসায়নিক অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়, তবে সেই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ভারত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে।

পাকিস্তানের পারমাণবিক নীতি কী?

ক) কৌশলগত অস্পষ্টতা: পাকিস্তান কখনোই তাদের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নীতিমালা প্রকাশ করেনি। এই অস্পষ্ট অবস্থান পাকিস্তানকে একটি সুবিধা দেয়—সংঘাতের যেকোনো পর্যায়েই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার সুযোগ থাকে। অতীতে তারা এমন হুমকিও দিয়েছিল। বিশ্লেষকদের মতে, শুরু থেকেই ইসলামাবাদের এই অস্বচ্ছতা ছিল কৌশল। এর উদ্দেশ্য ছিল ভারতের প্রচলিত সামরিক শক্তির মোকাবিলায় প্রতিরোধ গড়ে তোলা—শুধু ভারতের পারমাণবিক শক্তির বিরুদ্ধে নয়।

খ) চার 'ট্রিগার': ২০০১ সালে পাকিস্তানের পারমাণবিক নীতির সঙ্গে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ কৌশলবিদ ও পারমাণবিক কমান্ড এজেন্সির উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) খালিদ আহমেদ কিদওয়াই চারটি 'রেড লাইন' বা কারণের কথা বলেছিলেন। যেসব কারণে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের সম্ভাবনা আছে সেগুলো হলো:

ভৌগলিক সীমা—পাকিস্তানের একটি বড় অংশ যদি শত্রুর হাতে চলে যায়, তাহলে তা পারমাণবিক জবাবের কারণ হতে পারে। এই শর্তই মূলত ভারত-পাকিস্তান বিরোধের কেন্দ্রে আছে।

সামরিক সীমা—পাকিস্তানের আকাশ বা স্থলবাহিনীর বিশাল অংশ যদি ধ্বংস বা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় তাহলে তা পারমাণবিক জবাবের কারণ হতে পারে।

অর্থনৈতিক সীমা—আগ্রাসী শক্তির এমন কোনো পদক্ষেপ যা পাকিস্তানের অর্থনীতিকে অচল করে দিতে পারে, তাও পরমাণু হামলার একটি কারণ হতে পারে।

রাজনৈতিক সীমা—যে কার্যকলাপ দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করে বা বড় আকারের অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ সৃষ্টি করে, তাও একটি কারণ হতে পারে।

তবে পাকিস্তান কখনোই স্পষ্ট করে বলেনি—কতখানি ভূখণ্ড হারালে, কতটা সামরিক ক্ষতি হলে, বা অর্থনৈতিকভাবে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই 'রেড লাইনগুলো' কার্যকর হবে।

ভারতের পারমাণবিক অবস্থান কি বদলেছে?

যদিও ভারতের সরকারি নীতি একই রয়েছে, তবুও সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ভারতীয় রাজনীতিবিদরা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে 'আগে ব্যবহার না করার' (No First Use) নীতির ব্যাপারে আরও নমনীয় অবস্থান নেওয়ার চিন্তা চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, পাকিস্তানের অবস্থানের সঙ্গে ভারসাম্য রাখতেই এমন ভাবনার জন্ম।

২০১৬ সালে ভারতের তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর প্রশ্ন তোলেন যে, ভারতের কি এখনো 'নো ফার্স্ট ইউজ' (প্রথমে ব্যবহার নয়) নীতির মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রাখার প্রয়োজন আছে?

২০১৯ সালে বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছিলেন, ভারত এখনো পর্যন্ত এনএফইউ নীতি কঠোরভাবে মেনে আসছে। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতি এতে প্রভাব ফেলতে পারে।

'ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে,' বলেছিলেন তিনি।

ভারতের এমন কৌশল গ্রহণকে কেউ কেউ আনুপাতিক হিসাবে দেখলেও, অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন কৌশলগত অস্পষ্টতা এক ধরনের দ্বিমুখী অস্ত্র।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) এক প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞ লোরা সালমান বলেছিলেন, 'প্রতিপক্ষের সীমারেখা সম্পর্কে অস্পষ্টতা একদিকে অসাবধানতাবশত সীমা লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি করে, অন্যদিকে এটি কোনো দেশকে পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এমন কার্যকলাপ থেকে বিরতও রাখতে পারে।'

পাকিস্তানের পারমাণবিক অবস্থান কি বদলেছে?

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পাকিস্তান আগের অস্পষ্ট পারমাণবিক নীতিমালা থেকে এখন আরও স্পষ্ট অবস্থানে এসেছে—তারা এখন প্রকাশ্যে 'নো ফার্স্ট ইউজ' নীতি মানে না বলে জানাচ্ছে।

২০২৪ সালের মে মাসে পারমাণবিক কমান্ড এজেন্সির উপদেষ্টা খালিদ আহমেদ কিদওয়াই এক সেমিনারে বলেন, ইসলামাবাদ 'প্রথমে ব্যবহার না করার নীতি'তে নেই।

পাশাপাশি পাকিস্তান ২০১১ সাল থেকে তথাকথিত ট্যাকটিকাল নিউক্লিয়ার উইপনস (টিএনডব্লিউ) বা কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে। এগুলো স্বল্প-পাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র যা আরও নিয়ন্ত্রিত হামলার জন্য তৈরি ও ব্যাপক ধ্বংস না ঘটিয়ে বিরোধী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করার উপযোগী।

২০১৫ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব আইজাজ চৌধুরী নিশ্চিত করেছিলেন যে ভারতের সঙ্গে সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ সংঘাতে ট্যাকটিকাল নিউক্লিয়ার উইপনস ব্যবহার করা যেতে পারে।

তবে বাস্তবতা হলো, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে এই ওয়ারহেডগুলোরও বিস্ফোরক ক্ষমতা ৩০০ কিলোটন পর্যন্ত হতে পারে, যা হিরোশিমাকে ধ্বংসকারী পরমাণু বোমার প্রায় ২০ গুণ। তারা আরও বলছেন, এই ধরনের বিস্ফোরণ শুধু বিপর্যয়করই হবে না, এগুলো পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকার জনসংখ্যার ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English
Anti-Terrorism Act

Banning party activities: Govt amends anti-terror law

The interim government is set to bring the curtain down on the Awami League as a functioning political party.

8h ago