ট্রাম্প-শুল্কে টালমাটাল বিশ্ব, আলোচনায় আগ্রহী ৫০টিরও বেশি দেশ

শুল্ক ঘোষণার সময় এই নথি উঁচিয়ে ধরেন ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
শুল্ক ঘোষণার সময় এই নথি উঁচিয়ে ধরেন ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আরোপ করা শুল্কে বিচলিত হয়ে পড়েছে গোটা বিশ্ব। ইতোমধ্যে ধস নেমেছে বেশ কয়েকটি দেশের পুঁজিবাজারে। এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় পাল্টা শুল্ক আরোপের বদলে অনেক দেশই আলোচনার পথে হাঁটছে। 

ট্রাম্পের এক শীর্ষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে ৫০টি দেশ বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার জন্য হোয়াইট হাউসে ধর্না দিয়েছে।

আজ রোববার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ—অযাচিত শুল্ক আরোপ করে আর্থিক বাজারগুলোতে ধস নামাতে চাইছেন তিনি। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভকে সুদের হার কমাতে বাধ্য করবেন।

তবে এই অভিযোগকে অমূলক বলে উড়িয়ে দিয়েছেন মার্কিন অর্থনীতি কাউন্সিলের পরিচালক কেভিন হ্যাসেট।

এবিসি নিউজের 'দিস উইক' অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ বিষয়টি স্পষ্ট করেন। 

তিনি জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর কোনো 'রাজনৈতিক জোর' খাটানো হবে না।

শুক্রবার ট্রুথ সোশালে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প একটি ভিডিও শেয়ার করেন, যা থেকে (শুল্ক আরোপ করে) পুঁজিবাজারে ধস নামিয়ে সুদের হার কমানোর উদ্যোগের আভাস পাওয়া গিয়েছিল। 

এনবিসি নিউজের মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এক পৃথক সাক্ষাৎকারে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট পুঁজিবাজারের দরপতনের বিষয়টিকে 'তেমন উল্লেখযোগ্য নয়' বলে অভিহিত করেন এবং জানান, শুধু শুল্ক আরোপের কারণে অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেওয়ার 'কোনো কারণ নেই'। 

বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া পণ্যে বড় আকারে শুল্ক আরোপ করে অসংখ্য দেশের অর্থনীতিকে টালমাটাল অবস্থায় নিয়ে গেছেন ট্রাম্প। চীনসহ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে, যা একটি বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধ ও মন্দার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

আজ রোববার সকালের টক শোগুলোতে ট্রাম্পের শীর্ষ কর্মকর্তারা ওই শুল্ককে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংক্রান্ত অবস্থানের পরিবর্তন হিসেবে তুলে ধরেন এবং দাবি করেন, অর্থনীতিতে সাময়িকভাবে কিছু বাধা-বিঘ্ন দেখা দিলেও এর প্রভাব হবে স্বল্প মেয়াদী।

মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট (বাঁয়ে) ও অর্থনীতি কাউন্সিলের পরিচালক কেভিন হ্যাসেট (ডানে)। ফাইল ছবি: এএফপি
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট (বাঁয়ে) ও অর্থনীতি কাউন্সিলের পরিচালক কেভিন হ্যাসেট (ডানে)। ফাইল ছবি: এএফপি

ট্রাম্প-শুল্ক আরোপের পর প্রথম দুই দিনে মার্কিন পুঁজিবাজারে ১০ শতাংশ দরপতন হয়েছে।

বাজার বিশ্লেষক ও বড় বড় বিনিয়োগকারীরা দরপতনের জন্য ট্রাম্পের অতিরিক্ত আগ্রাসী শুল্ক কৌশলকে দায় দিয়েছেন।

বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদ ও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান মত দিয়েছেন, এতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

হ্যাসেট এবিসি নিউজকে জানান, ট্রাম্প শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর এখন পর্যন্ত '৫০টিরও বেশি' দেশ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার জন্য হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শুরুর উপলক্ষ তৈরি করতে স্বশাসিত দ্বীপরাষ্ট্র তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে আজ রোববার সকল মার্কিন পণ্য আমদানিকে শুল্কমুক্ত করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তিনি প্রতিশোধমূলক পাল্টা শুল্ক আরোপের পরিবর্তে আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার অঙ্গীকার করেছেন। তাইওয়ানের প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ বাড়াবে বলে তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন।

হ্যাসেট জানান, ভোক্তারা এই শুল্ক-যুদ্ধে তেমন একটা প্রভাবিত হনে না কারণ তিনি ধারণা করছেন রপ্তানিকারকরা পণ্যের দাম কমিয়ে দেবে।

অপরদিকে অর্থমন্ত্রী বেসেন্ট এনবিসি নিউজকে জানান, তিনি মনে করেন না শুল্ক আরোপের ফলে অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেবে। তিনি উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার পূর্বাভাসের চেয়ে দ্রুত কমেছে। 

'আমরা শুক্রবার নতুন নিয়োগ পরিস্থিতি দেখেছে, যা প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। মন্দা দেখা দেওয়ার কোনো কারণ দেখছি না', যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Hasnat calls for mass rally after Juma prayers demanding AL ban

The announcement came during an ongoing protest programme that began last night in front of Jamuna.

3h ago