ইহুদি বসতকারীদের হাতে হেনস্তার পর নিখোঁজ অস্কারজয়ী ফিলিস্তিনি পরিচালক

অস্কার হাতে ফিলিস্তিনি পরিচালক হামদান বাল্লাল। ফাইল ছবি: এএফপি
অস্কার হাতে ফিলিস্তিনি পরিচালক হামদান বাল্লাল। ফাইল ছবি: এএফপি

অস্কারজয়ী তথ্যচিত্র 'নো আদার ল্যান্ড'র ফিলিস্তিনি সহ-পরিচালক হামদান বাল্লালকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে মারধর করেছেন ইহুদি অবৈধ বসতকারীরা। এরপর ইসরায়েলি সেনারা উল্টো তাকেই ধরে নিয়ে যান।

আজ মঙ্গলবার সহকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন।

মারধরের পর হামদানকে ধরে নিয়ে যায় আইডিএফ

হামদানের সহ-পরিচালক বাসেল আদরা সিএনএনকে জানান, গতকাল সোমবার বিপর্যস্ত অবস্থায় হামদান তাকে ফোন দেন। এরপর তিনি পশ্চিম তীরের সুসিয়া গ্রামে হামদানের বাড়ি আসেন। সেখানে এসে দেখেন হামদান ও অন্তত আরও একজনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

পশ্চিম তীরে আইডিএফের অভিযান। ফাইল ছবি: এএফপি
পশ্চিম তীরে আইডিএফের অভিযান। ফাইল ছবি: এএফপি

হামদানের বাড়ির বাইরে একদল অবৈধ বসতকারীকে দেখেন বাসেল। তারা হামদানের বাড়িতে পাথর মারছিল।

বাড়ির বাইরে ইসরায়েলি পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্য ছিলেন। কেউ বাড়ির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলেই সেনারা গুলি ছুঁড়তে শুরু করে বলে জানান বাসেল।

আইডিএফের ভাষ্য

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের 'মুখোমুখি সহিংস সংঘাতে' জড়িত থাকতে দেখতে পায়। দুই পক্ষ একে অপরের দিকে পাথর ছুঁড়ছিল। তারা জানায়, বেশ কয়েকজন 'জঙ্গি সদস্য ইসরায়েলি নাগরিকদের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারলে তাদের গাড়ির ক্ষতি হয়।'

এরপর দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে।

আইডিএফ আরও জানায়, 'একাধিক জঙ্গি' নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন ফিলিস্তিনি ও এক ইসরায়েলিকে আটক করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য

ওই তথ্যচিত্রের অপর সহ-পরিচালক ইউভাল আবরাহাম একজন ইসরায়েলি। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, হামদান মাথায় ও পেটে আঘাত পেয়েছেন। ওই ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ আছেন তিনি।

সেন্টার ফর জুইশ ননভায়োলেন্সের (সিজেএনভি) পাঁচ মার্কিন মানবাধিকারকর্মী ঘটনাস্থলে ছিলেন। তাদেরকেও মারধর করেন ইহুদি বসতকারীরা। মানবাধিকার কর্মীরা জানান, ১২ জনেরও বেশি অভিবাসী সেই গ্রামে হামলা চালায়। তাদের হাতে লাঠিসোটা, ছুরি ও অন্তত একটি অ্যাসল্ট রাইফেল ছিল।

এক ফিলিস্তিনির বাসার কাছে এক ইহুদি বসতকারীর ভেড়া চরানোর ঘটনা থেকেই সহিংসতার শুরু।

অধিকৃত পশ্চিম তীরে আইডিএফের টহল। ছবি: এএফপি
অধিকৃত পশ্চিম তীরে আইডিএফের টহল। ছবি: এএফপি

এক নারী মানবাধিকারকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ২০ জনের মতো মুখোশ পরা অভিবাসী তাদের ওপর হামলা চালায়। ওই রাতে তিনি ও তার সহকর্মীরা সুসিয়া গ্রামের দিকে যাচ্ছিলেন। তবে তারা হামদানের গ্রেপ্তারের সময় সেখানে ছিলেন না।

তিনি সিএনএনকে বলেন, 'গাড়িতে ফেরার চেষ্টা করি। কিন্তু তারা আমাদেরকে লাঠি দিয়ে পেটাতে শুরু করে।'

'অবৈধ বসতকারীরা বেশ কয়েকটি গাড়ির কাঁচ ভেঙে দিয়েছে। একটি চাকা ছুরি দিয়ে কেটে ফেলেছে।'

সিজেএনভি গাড়ির ড্যাশ ক্যামেরার ফুটেজ শেয়ার করেছে। সেখানে দেখা যায়, মুখোশ পরা এক ব্যক্তি সরাসরি গাড়ির উইন্ডশিল্ডে পাথর ছুঁড়ে মেরেছেন।

ওই দলে ছিলেন জশ কিমেলম্যান। তিনি জানান, ইসরায়েলি সেনারা পুরো ঘটনা চোখের সামনে ঘটতে দেখলেও তা প্রতিহত করার চেষ্টা করেনি।

আগেও হুমকি পেয়েছিলেন হামদান

চলতি মার্চের শুরুর দিকে হামদান, বাসেল ও আবরাহাম একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে সেরা তথ্যচিত্র বিভাগে অস্কার জেতেন।

ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত তথ্যচিত্রে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের নিজ নিজ বাড়ি থেকে উৎখাতের করুণ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

নিজ বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে সশস্ত্র ইহুদি অবৈধ বসতকারীর সঙ্গে তর্কে জড়িয়েছে এক ফিলিস্তিনি পরিবার। ফাইল ছবি: এএফপি
নিজ বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে সশস্ত্র ইহুদি অবৈধ বসতকারীর সঙ্গে তর্কে জড়িয়েছে এক ফিলিস্তিনি পরিবার। ফাইল ছবি: এএফপি

এর আগেও ইহুদি বসতকারীরা হামদানকে ভয় দেখায় ও হুমকি দেয়।

পেশায় খামারি হামদান সিএনএনকে একবার জানিয়েছিলেন, গত বছর তিনি ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় অবৈধ বসতকারীরা তার জমিতে নিজেদের গবাদি পশু চরাতে নিয়ে আসে।

তিনি বলেছিলেন, 'অবৈধ বসতকারীরা তার জমি ও খামার দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছিল।' গত ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর তার প্রতি বসতকারীদের আগ্রাসী আচরণের মাত্রা বেড়ে যায় বলেও দাবি করেন তিনি।

হামদান তথ্যচিত্রে ওই অবৈধ বসতকারীদের সঙ্গে তার কথোপকথন ও যোগাযোগের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। এক বসতকারী তাকে হামলার হুমকি দেন। দাবি করেন, 'ঈশ্বর তাকে হামদানের ভূখণ্ডের মালিকানা দিয়েছেন।'

হামদান জানান, তিনি পুলিশকে খবর দিলেও কোনো কাজ হয়নি।

নো আদার ল্যান্ড

'নো আদার ল্যান্ড' তথ্যচিত্রে পশ্চিম তীরের হেবরন পর্বতের কাছে মাসাফের ইয়াত্তা গ্রামে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের ধ্বংসযজ্ঞ তুলে ধরা হয়েছে। সেখানেই পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন বাসেল আদরা। তথ্যচিত্রে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জোর করে গ্রামবাসীদের উৎখাতের উদ্যোগ, স্থানীয় খেলার মাঠ ধ্বংস ও ইসরায়েলি সেনাদের হাতে আদরার ভাইয়ের মৃত্যুসহ আরও বেশকিছু মর্মান্তিক ঘটনা দেখিয়েছেন তিন পরিচালক।

তথ্যচিত্রে বাসেল ও আবরাহামের বন্ধুত্বের বিষয়টিও দেখানো হয়েছে।

তথ্যচিত্র নো আদার ল্যান্ডের পোষ্টার। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
তথ্যচিত্র নো আদার ল্যান্ডের পোষ্টার। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

যুদ্ধ শুরুর পর পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতকারীদের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সংঘাতের মাত্রা ৫০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে বলে জানিয়েছে দুই ইসরায়েলি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ।

পিস নাউ ও কেরেম নাভোত নামের ওই দুই সংস্থা বসতকারীদের কার্যক্রমের বিরোধিতা করে এবং এ সংক্রান্ত সব তথ্য নিরীক্ষা করে।

 

Comments

The Daily Star  | English
Prof Yunus in Time magazine's 100 list 2025

Prof Yunus named among Time’s 100 Most Influential People of 2025

A tribute article on Prof Yunus was written by Hillary Clinton for the magazine

4h ago