কয়েকদিনের মধ্যেই সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া বৈঠক, আমন্ত্রণ পায়নি কিয়েভ

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ছবি: রয়টার্স
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ছবি: রয়টার্স

খুব শিগগির সৌদি আরবে বৈঠক করবেন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তারা। এই আলোচনার‍ মূল উদ্দেশ্য প্রায় তিন বছর ধরে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানো।

গতকাল শনিবার এক মার্কিন আইনপ্রণেতা ও এ বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক সূত্রের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

এই আলোচনায় যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পায়নি ইউক্রেন। এমনটাই জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি আরও জানান, কৌশলগত অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা না করে কিয়েভ রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় যাবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলে থাকছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালজ ও হোয়াইট হাউসের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ। তারা সবাই শিগগির সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা হবেন। মার্কিন আইনপ্রণেতা মাইকেল ম্যাককল এ বিষয়টি রয়টার্সকে জানিয়েছেন।

তবে রাশিয়া থেকে কারা এই বৈঠকে যোগ দেবেন, তা এখনো জানা যায়নি।

মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের সাইডলাইনে ম্যাককল জানান, এই আলোচনার উদ্দেশ্য হলো ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভ্লাদিমির পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে একটি বৈঠকের আয়োজন করা, যাতে 'শান্তি প্রতিষ্ঠা হয় এবং এই সংঘাতের অবসান ঘটে।'

এই পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট এক সূত্র সৌদি আরবে মার্কিন ও রুশ কর্মকর্তাদের এই আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে রয়টার্স যোগাযোগ করলেও তারা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।

রুশ নেতা ভ্লাদিমির পুতিন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। কোলাজ: এএফপি
রুশ নেতা ভ্লাদিমির পুতিন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। কোলাজ: এএফপি

২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের আগে থেকেই ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত বন্ধে একাধিকবার অঙ্গীকার করেছেন ট্রাম্প। বুধবার তিনি পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে আলাদা আলাদা করে কথা বলেন।

ট্রাম্পের এই উদ্যোগে ওয়াশিংটনের ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে আশঙ্কা দেখা দেয় যে তারা হয়তো শান্তি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে না।

শনিবার ট্রাম্পের ইউক্রেন প্রতিনিধি জানান, ইউরোপের অন্য কোনো দেশকে সৌদি আরবের আলোচনায় ডাকা হবে না।

খনিজ পদার্থ চুক্তি

শনিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে আলোচনা করেন। তারা নিয়মিত যোগাযোগের বিষয়ে একমত হন এবং পুতিন-ট্রাম্পের বৈঠক আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে সম্মত হন। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানিয়েছে।

জেলেনস্কি শুক্রবার জানান, তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও তুরস্ক সফর করবেন। তবে সময়কাল জানাননি তিনি। তবে ইউক্রেনের নেতা নিশ্চিত করেন, এই সফরে রুশ বা মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করার কোনো পরিকল্পনা নেই তার।

এ মুহূর্তে ইউক্রেনের ২০ শতাংশ ভূখণ্ডের দখল রাশিয়ার হাতে রয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনী ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বেশ কয়েক মাস ধরে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী লোকবল সংকটে জর্জরিত। পশ্চিম রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ছোট একটি এলাকা দখলে রেখেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী।

কোনো ধরনের শান্তি চুক্তির ক্ষেত্রে রাশিয়ার শর্ত হলো, কিয়েভকে এই ভূখণ্ডের দাবি ছেড়ে দিতে হবে এবং স্থায়ীভাবে 'নিরপেক্ষ' থাকতে হবে। নিরপেক্ষতার নিদর্শন হিসেবে ন্যাটো জোটে যোগ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে কিয়েভকে। তবেই অবসান হবে যুদ্ধের।

অপরদিকে ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়া অধিকৃত ভূখণ্ড ছেড়ে দেবে এবং তাদেরকে ন্যাটো সদস্যপদ দিতে হবে বা অন্য কোনো ধরনের স্থায়ী নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে হবে। ভবিষ্যতে রাশিয়া যাতে কোনো হামলা চালাতে না পারে মূলত সে কারণেই এই শর্ত দিয়েছে কিয়েভ।

এই যুদ্ধ শুরুর পর থেকে জো বাইডেনের প্রশাসন ও ইউরোপের মিত্ররা ইউক্রেনকে সামরিক ত্রাণ বাবদ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। ট্রাম্প জানিয়েছেন তিনি ইউক্রেনের পাশেই আছেন, তবে তিনি কিয়েভে মার্কিন বিনিয়োগকে ফলপ্রসূ দেখতে চান। 

ট্রাম্পের এই চাহিদার সূত্র ধরে ওয়াশিংটন-কিয়েভ এখন ইউক্রেনের প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। এই চুক্তি হলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইউক্রেনের প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ আহরণ সহজ হতে পারে। তিনটি সূত্র জানায়, নিরাপত্তা দেওয়ার বিনিময়ে ইউক্রেনের ৫০ শতাংশ খনিজ সম্পদের মালিকানা চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

জেলেনস্কি শনিবার জানান, এই খসড়া চুক্তির আওতায় কিয়েভের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

Thousands of crores of taka of citizens wasted on unnecessary projects: commerce adviser

The adviser, however, added that liabilities of foreign-funded projects should still be repaid

37m ago