ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে সৌদিতে বৈঠকে বসবেন ট্রাম্প-পুতিন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি শিগগির রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সৌদি আরবে 'ইউক্রেন শান্তি আলোচনায়' অংশ নেবেন।
আজ বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।
গতকাল বুধবার পুতিন ও ট্রাম্প ফোনে কথা বলেন, যা বিশ্লেষকদের বিস্মিত করেছে। এই অবিস্মরণীয় ঘটনার সূত্রেই সৌদি আরবে বৈঠক চূড়ান্ত হয়েছে।
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের ফিরে আসার পর এটা ছিল দুই নেতার 'দ্বিতীয় আনুষ্ঠানিক ও স্বীকৃত' যোগাযোগের ঘটনা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, পুতিনের সঙ্গে তার দীর্ঘ ও ফলপ্রসূ ফোনালাপ হয়েছে।
শান্তি আলোচনার বৈঠকে নাও থাকতে পারে ইউক্রেন

তবে দুই নেতার এই আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ইউক্রেনের ভাগ্য নির্ধারণের আলোচনায় অংশ নেওয়ারই সুযোগ পাবে না কিয়েভ।
পাশাপাশি, ট্রাম্প জানিয়েছেন ন্যাটো জোটে কিয়েভের যোগদানের ইচ্ছা 'বাস্তবসম্মত' নয়। মস্কোও একই ধারণা পোষণ করে।
প্রায় তিন বছর ধরে চলমান এই যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিচ্ছেন ট্রাম্প।
তবে শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনকে বাদ রাখার বিষয়টি অস্বীকার করেন ট্রাম্প।
ওভাল অফিসে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, 'আমি আশা করছি তিনি এখানে (ওয়াশিংটনে) আসবেন, আমিও সেখানে (মস্কো) যাব—তবে খুব সম্ভবত সৌদি আরবে আমরা প্রথমবারের মতো বৈঠক করতে যাচ্ছি।'
ট্রাম্প জানান, 'খুব শিগগির' এই বৈঠকের আয়োজন করা হবে। তিনি আরও জানান, সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানও এই বৈঠকে যুক্ত থাকবেন।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, প্রায় ৯০ মিনিট কথা বলেছেন দুই নেতা। এই ফোনালাপে দুই নেতা একমত হয়ে বলেন, 'একত্রে কাজ করার এখুনি সময়' এবং পুতিন ট্রাম্পকে মস্কো সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
২০ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি '২৪ ঘণ্টার মধ্যে' ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করবেন।
জেলেনস্কিও শান্তি চান
এর আগে ট্রুথ সোশালে পোস্ট করে ফোন কলের বিষয়টি জানান ট্রাম্প।
তিনি জানান, 'রাশিয়া/ইউক্রেন যুদ্ধে লাখো মৃত্যু থামাতে আমরা দুইজন একমত হয়েছি'।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, তারা নিবিড়ভাবে কাজ করবেন এবং একে অপরের দেশে সফরে যাবেন।
'ইতোমধ্যে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ইউক্রেন বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে বলা হয়েছে', যোগ করেন ট্রাম্প।
পরবর্তীতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে কল করেন ট্রাম্প। আগের কলে জেলেনস্কিকে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
জেলেনস্কি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তার ফোন কলটি 'গুরুত্বপূর্ণ' ছিল। সেখানে ট্রাম্প তাকে পুতিনের সঙ্গে কি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তার বিস্তারিত জানিয়েছেন।
জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলে ট্রাম্প জানান, 'প্রেসিডেন্ট পুতিনের মতো জেলেনস্কিও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চান।'
শান্তি চুক্তির শর্ত নিয়ে কাজ শুরু

কিয়েভের প্রেসিডেন্সিয়াল অফিসের প্রধান আন্দ্রেই ইয়েরমাক জানান, জেলেনস্কি ও ট্রাম্প 'তাৎক্ষণিকভাবে' শান্তি চুক্তির শর্ত নিয়ে কাজ করার জন্য উভয় পক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।
জেলেনস্কি ও তার কর্মকর্তারা মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক দিন পরেই মিউনিখের নিরাপত্তা সম্মেলনে দেখা করবেন। দলগুলো 'শিগগির দৈনিক কার্যক্রমভিত্তিক প্রক্রিয়া' চালু করবে।
পুতিনের শর্তেই রাজি হবেন ট্রাম্প?
ট্রাম্পের সঙ্গে ফোন কলের প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত পুতিনের দেওয়া শর্তের ভিত্তিতে এই আলোচনাকে এগিয়ে নেবে।
পেন্টাগনের প্রধান পিট হেগসেথ বুধবার জানান, ২০১৪ সালের পূর্ববর্তী সীমান্ত ফিরে পাওয়ার ইউক্রেনীয় স্বপ্ন এক 'অলীক কল্পনা' এবং কিয়েভের ন্যাটো সদস্যপদ চাওয়া 'বাস্তবসম্মত নয়'।
বলাই বাহুল্য, পুতিনের মুখ থেকে বহু আগেই এই দুই দাবির কথা শুনেছে বিশ্ববাসী।
Comments