পশ্চিমবঙ্গে ১০ দিনের চেষ্টায় বন্দি হলো জিনাত

ঘুমপাড়ানি গুলি লাগার পর বাঘিনী জিনাতকে ধরা সম্ভব হয় বলে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বনবিভাগ । ছবি: সুশান্ত মাল/ডয়চে ভেলে
ঘুমপাড়ানি গুলি লাগার পর বাঘিনী জিনাতকে ধরা সম্ভব হয় বলে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বনবিভাগ । ছবি: সুশান্ত মাল/ডয়চে ভেলে

অবশেষে বন্দি হলো বাঘিনী জিনাত। বাঁকুড়ায় ঘুমপাড়ানি গুলিতে বাঘিনীকে কাবু করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বনবিভাগের কর্মীরা।

গত ২০ ডিসেম্বর ঝাড়খণ্ডের চিঁয়াবান্ধির জঙ্গল থেকে বাঘিনী জিনাত পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়গ্রামে ঢুকে যায়। তাকে প্রথম দেখা যায় বেলপাহাড়িতে। এরপর জিনাত সমানে জায়গা পরিবর্তন করতে থাকে।

২২ তারিখ সে ঢুকে পড়ে পুরুলিয়ার রাইকার জঙ্গলে। তারপর সেখান থেকে পাইসাগোড়া হয়ে সে চলে যায় ঝন্টিপাহাড়ির জঙ্গলে।

গত ২৮ ডিসেম্বর পুরুলিয়া ছেড়ে জিনাত ঢোকে বাঁকুড়ায় গোসাইডি জঙ্গলে।

সেখানেই রোববার জিনাত যেখানে ছিল, তার চারদিকে জাল দিয়ে ঘিরে বনকর্মীদের তিনটে দল সেখানে যায়। ঘুমপাড়ানি গুলি ছুঁড়ে তাকে ঘুম পাড়ানো হয়। খাঁচায় ভরে তাকে নিয়ে আসা হয় আলিপুর চিড়িয়াখানায় পশু চিকিৎসালয়ে।

বনবিভাগ যা জানিয়েছে

জিনাতকে খাঁচায় ভরে নিয়ে আসা হয় কলকাতায় আলিপুর চিড়িয়াখানায় পশু চিকিৎসালয়ে। ছবি: সুশান্ত মাল/ডয়চে ভেলে
জিনাতকে খাঁচায় ভরে নিয়ে আসা হয় কলকাতায় আলিপুর চিড়িয়াখানায় পশু চিকিৎসালয়ে। ছবি: সুশান্ত মাল/ডয়চে ভেলে

মুখ্য বনপাল (পশ্চিম) সিঙ্গরম কুন্দলাইভেল জানিয়েছেন, 'জিনাত এখন ভালো আছে। ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে তাকে ধরা হয়েছে। এখন সে আলিপুর চিড়িয়াখানায় পর্যবেক্ষণে থাকবে। তারপর সরকার যেখানে বলবে, সেখানে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে।'

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, 'এটা বনকর্মীদের টিমওয়ার্ক ও নিষ্ঠার একটা উদাহরণ। সবাই মিলে এই বাঘটিকে রক্ষা করেছেন। পরিবেশ রক্ষার গুরুত্বও শক্তিশালী হয়েছে।'

কেন এতদিন লাগল?

সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার পর বনকর্মীরা সমানে জিনাতকে ধরার চেষ্টা করেছেন। তারা ফাঁদ পেতেছেন। টোপ দিয়ে জিনাতকে ধরার চেষ্টা করেছেন। জঙ্গলে জাল দিয়ে ঘেরার চেষ্টা করে ঘুমপাড়ানি গুলি মেরেছেন। খাঁচাবন্দি করার চেষ্টা হয়েছে। আগুন জ্বালিয়ে, পটকা ফাটিয়েও তাকে কোণঠাসা করার চেষ্টা হয়। কিন্তু জিনাত সেইসব ফাঁদে পা দেয়নি।

পশ্চিমবঙ্গের বনকর্মীদের নাজেহাল করে দিয়ে সে এক জেলা থেকে অন্য জেলায়, এক জঙ্গল থেকে অন্য জঙ্গলে ঘুরে বেড়িয়েছে।

বনকর্মীরা বলেছেন, বড় জায়গায় ঘুরছিল বলে জিনাতকে তারা ধরতে পারছিলেন না। কিন্তু গোসাইডিতে তাকে এক একর জায়গায় মধ্যে ঘিরে ফেলা সম্ভব হয়। জিনাতও ক্রমাগত পালাতে পালাতে কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। ঘুমপাড়ানি গুলি তার পিছনের দিকে লাগে। জিনাত খুব জোরে ৪০ মিটার দৌড় দেয়। তারপর মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং গভীর ঘুমে চলে যায়। এর জন্য সুন্দরবনের ঘুমপাড়ানি গুলি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আসা হয়েছিল।

পশুচিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা করেন। এরপর স্ট্রেচারে করে তাকে খাঁচায় ভরে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়।

সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর জোন্স জাস্টিন আনন্দবাজারকে বলেছেন, 'সুন্দরবনেও এভাবেই বাঘকে হয় খাঁচায় বন্দি করা হয় বা ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়া হয়।'

সরকারিভাবে জানানো হয়েছে, পুলিশ, প্রশাসন, বনকর্মীরা সমন্বর করে কাজ করছিলেন। তারা নিয়মের মধ্যে ছিলেন। কারো প্রাণহানি হয়নি। বাঘও ঠিক আছে।

Comments

The Daily Star  | English

Killing of trader in old Dhaka: Protests erupt on campuses

Protests were held on campuses and in some districts last night demanding swift trial and exemplary punishment for those involved in the brutal murder of Lal Chand, alias Sohag, in Old Dhaka’s Mitford area.

3h ago