ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধ: ক্ষতির আশঙ্কা ৪ দেশের
জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর চীন, কানাডা ও মেক্সিকোর আমদানি পণ্যের বিরুদ্ধে নতুন করে শুল্ক আরোপের অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এই 'হুমকির' জবাবে ওই তিন দেশ জানিয়েছে, এতে কেউই লাভবান হবে না।
আজ বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
এ বিষয়ে কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের কর্মকর্তারা একই সুরে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ট্রাম্পকে হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এ ধরনের উদ্যোগে চার দেশের অর্থনীতিতেই নেমে আসবে বিপর্যয়।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেনবম বলেন, 'এক শুল্কের জবাবে আরেক শুল্ক আসবে এবং উভয় পক্ষের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে না দেওয়া পর্যন্ত এই ধারা চলতে থাকবে।'
সোমবার ট্রাম্প মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আমদানি হয়ে আসা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং চীনের পণ্যের বিরুদ্ধে বিদ্যমান শুল্কের সঙ্গে আরও বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক যোগ করার হুমকি দেন। তিনি জানান, অবৈধ অভিবাসন ও মাদকের অবাধ চোরাকারবার ঠেকাতে এই উদ্যোগ নিচ্ছেন তিনি।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানান, তিনি ট্রাম্পের এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই তার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। এ বিষয়ে সুষ্ঠু প্রতিক্রিয়া জানাতে আজ বুধবার তিনি প্রাদেশিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন।
ওয়াশিংটনে নিযুক্ত চীনের দূতাবাসের এক মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, 'এই বাণিজ্য যুদ্ধ বা শুল্ক যুদ্ধে কেউই জিতবে না।'
এক দিন আগেই ট্রাম্প ট্রুথ সোশালে পোস্ট করে জানান, ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণ করেই তিনি এসব উদ্যোগ নেবেন। এর পর থেকেই আন্তর্জাতিক মহলে বয়ে গেছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
ট্রুডো জানান, তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে 'গঠনমূলক উপায়ে' কাজ করতে আগ্রহী।
'এই সম্পর্ক (মার্কিন-কানাডা) বজায় রাখার জন্য উভয় পক্ষকেই কাজ করতে হয় এবং আমরা ঠিক সেটাই করব', সাংবাদিকদের জানান ট্রুডো।
ট্রাম্পের সঙ্গে ফোন কলে বাণিজ্য ও সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে আলাপ করেছেন বলে উল্লেখ করেন ট্রুডো।
তিনি মন্তব্য করেন, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তের তুলনায় কানাডা যুক্তরাষ্ট্র সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অভিবাসী প্রবেশের সংখ্যা খুবই কম।
ট্রাম্পের কার্যালয় এই ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করতে অস্বীকার করেছে।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া সাংবাদিকদের বলেন, হুমকি বা শুল্কের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে 'অভিবাসন সমস্যা' বা মাদকের বিষয়গুলোর সুরাহা হবে না।
তিনি হুশিয়ারি দেন, প্রয়োজনে মেক্সিকোও মার্কিন পণ্যের ওপর কর ও শুল্ক আরোপ করে প্রতিশোধ নেবে।
তবে এতে 'উভয় দেশেই ব্যবসা করে এমন প্রতিষ্ঠানগুলো হুমকির মুখে পড়ে যাবে',
তিনি জানান, মেক্সিকো অবৈধ অভিবাসন ঠেকানোর জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে।
মাদকের ব্যাপারে তিনি বলেন, 'এটা আপনাদের (মার্কিনীদের) জনস্বাস্থ্য ও (মাদক ব্যবহারের) অভ্যাসজনিত সমস্যা'।
চীনের দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেংইউ বিবিসিকে বলেন, 'স্বভাবগত ভাবে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উভয় দেশের উপকারে আসে'।
ফেনটানিল এবং অন্যান্য মাদক ও মাদক উৎপাদনের কাঁচামাল অবাধে যুক্তরাষ্ট্রে আসতে দেয় চীন—এই দাবি অস্বীকার করেন তিনি।
'চীন যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে এ বিষয়ে তদন্ত পরিচালনা করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছে', যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'চীন জ্ঞাতসারে যুক্তরাষ্ট্রে ফেনটানিল প্রবেশ করতে দেয়, এমন দাবির সঙ্গে প্রকৃত সত্য ও বাস্তবতার কোনো যোগসূত্র নেই।'
বর্তমানে, দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি পণ্য শুল্কের ভারে জর্জরিত। চীনে আমদানি হওয়া মার্কিন পণ্যে ৬৬ দশমিক চার শতাংশ ও যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া পণ্যে ৫৮ দশমিক তিন শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে।
এর সঙ্গে হয়তো জানুয়ারিতে উভয় পক্ষই আরও শুল্ক আরোপ করতে চলেছে, যা প্রকারান্তরে দুই দেশের নাগরিকদেরই ক্ষতির কারণ হবে।
অপরদিকে, কানাডার মোট রপ্তানির ৭৫ শতাংশই যায় যুক্তরাষ্ট্রে। এ ক্ষেতের এক শতাংশ নতুন শুল্কও দেশটির অর্থনীতিতে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
ইতোমধ্যে ট্রাম্পের হুমকির পর মার্কিন ডলারের বিপরীতে কানাডার ডলারের মূল্য বেশ খানিকটা কমেছে।
২০২০ সালের পর এত নিচে নামেনি কানাডার ডলারের মূল্য।
একইভাবে, মেক্সিকোর পেসোও এ বছরের সবচেয়ে কম বিনিময় হারে পৌঁছেছে।
Comments