গাজায় জাতিসংঘের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে নিন্দার মুখে ইসরায়েল

গত অক্টোবর ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর বারবার আক্রান্ত হয়েছে ইউএনআরডব্লিউএ ভবন। ফাইল ছবি: এএফপি
গত অক্টোবর ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর বারবার আক্রান্ত হয়েছে ইউএনআরডব্লিউএ ভবন। ফাইল ছবি: এএফপি

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে গতকাল সোমবার ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটে 'বিতর্কিত' বিল পাস হয়েছে। এই উদ্যোগের বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র 'নেতিবাচক পরিণামের' হুশিয়ারি দিয়েছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য মিত্ররা তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

আজ মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে জেরুজালেম পোস্ট ও রয়টার্স।

সোমবার রাতে নেসেটে দুইটি বিল পাস হওয়ার ফলে জেরুজালেম, গাজা ও পশ্চিম তীরে জাতিসংঘের এই সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ হতে চলেছে। এই সিদ্ধান্তের পরই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানায়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেন, 'এই আইন পাস হয়ে মার্কিন আইন ও নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।'

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার। ছবি: সংগৃহীত

তিনি উল্লেখ করেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইতোমধ্যে ইসরায়েলকে এ ধরনের উদ্যোগ না নেওয়া রজন্য চিঠি লিখে হুশিয়ারি দিয়েছেন। ওই চিঠিতে গাজার মানবিক পরিস্থিতির উন্নয়নে ইসরায়েলের কি কি করা উচিত, তার বিস্তারিত পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, পরিস্থিতির উন্নয়ন না হলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সামরিক সহায়তায় কমতে পারে, এমন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে চিঠিতে।

মিলার বলেন, 'এ মুহুর্তে গাজায় ইউএনয়ারডব্লিউর কোনো বিকল্প নেই। তারা ফ্রন্টলাইনে থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। চলমান সংকটের মাঝে তাদের বদলে অন্য কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা এই ভূমিকা পালন করতে সক্ষম নয়।'

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান জোসেপ বরেল বলেন, তিনি এই উদ্যোগে 'অত্যন্ত উদ্বিগ্ন'।

এ ধরনের উদ্যোগ 'আন্তর্জাতিক আইন ও প্রচলিত মানবিক নীতিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন।'

তিনি হুশিয়ারি দেন, ইতোমধ্যে গাজার মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ। এ সময় ইউএনআরডব্লিউর কার্যক্রম বন্ধ হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে, সংকট আরও ঘনীভূত হবে এবং এ অঞ্চলে খাদ্য, আশ্রয়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো জরুরি সেবাগুলো থেকে লাখো ফিলিস্তিনি শরণার্থী বঞ্চিত হবেন।

ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, ইউএনআরডব্লিউ বন্ধের সিদ্ধান্ত 'একেবারেই ভুল'।

'আন্তর্জাতিক অংশীদারদের পাশাপাশি, যুক্তরাজ্যও স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে বলছে, ইসরায়েলকে অবশ্যই এটা নিশ্চিত করতে হবে যাতে গাজার মানবিক সংকট নিরসনে ইউএনআরডব্লিউ দ্রুত এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে পারে', যোগ করেন তিনি।

ইসরায়েলি ডানপন্থীরা দীর্ঘদিন ধরে ইউএনআরডব্লিউর কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের অভিযোগ, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দেশটিতে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের হামলায় ইউএনআরডব্লিউএর অনেক কর্মী সরাসরি জড়িত। সংস্থাটির কর্মীদের মধ্যে কেউ কেউ হামাস ও অন্যান্য সশস্ত্র সংগঠনের সদস্য হিসেবেও কাজ করছে।

ইসরায়েলি হামলা ইউএনআরডব্লিউর একটি ত্রাণবাহী ট্রাক ধ্বংসের পর সেটাকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স (২৩ অক্টোবর, ২০২৪)
ইসরায়েলি হামলা ইউএনআরডব্লিউর একটি ত্রাণবাহী ট্রাক ধ্বংসের পর সেটাকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স (২৩ অক্টোবর, ২০২৪)

ইউএনআরডব্লিউএ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ম্যান্ডেট অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, স্লোভেনিয়া ও স্পেন একটি যৌথ বিবৃতি দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে।

বেলজিয়ামও প্রতিবাদ জানিয়েছে। পাশাপাশি কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাঝ্য একটি যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে ইউএনআরডব্লিউএর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনেহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ইসরায়েলের এই বিপদজনক আইনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ইউএনআরডব্লিউএর কর্মীরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত। তাদের এসব কর্মকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলের কাছে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।

ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ্পি লাজারিনি। ফাইল ছবি: রয়টার্স
ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ্পি লাজারিনি। ফাইল ছবি: রয়টার্স

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া একটি পোস্টে ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ্পি লাজারিনি বলেন, 'এই আইন পাসের ঘটনা জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এটা ইউএনআরডব্লিউএকে অপবাদ দেওয়ার জন্য চলমান প্রচার এবং ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের মানবিক উন্নয়নে সহায়তা ও সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সংস্থার ভূমিকাকে অবৈধ প্রমাণ করার সর্বশেষ নজির।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Crowd control: Police seek to stop use of lethal weapon

The police may stop using lethal weapons and lead pellets for crowd control as their widespread use during the July mass uprising led to massive casualties and global criticism.

9h ago