জিল স্টেইন: ট্রাম্প নয়, এই তৃতীয় প্রার্থীর কাছে হারতে পারেন কমলা

ডোনাল্ড ট্রাম্প, কমলা হ্যারিস ও জিল স্টেইন। ছবি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিক সব সমীক্ষা বলছে, নির্বাচনে তার ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা মাত্র এক শতাংশ। কিন্তু নীল দলের ভয়, এ সামান্য ভোটই তাদের নির্বাচনে হারার জন্য যথেষ্ট হয়ে দাঁড়াতে পারে। ২০১৬ নির্বাচনে তারা এর চেয়েও কম ব্যবধানে হেরেছিল কি না!

বলা হচ্ছে মার্কিন গ্রিন পার্টির প্রার্থী জিল স্টেইনের কথা। ইসরায়েলের গণহত্যার বিরুদ্ধে অবস্থান, দেশে আর্থিক সমতা, সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির মতো উদারপন্থী সব নীতির ওপর দাঁড়ানো এই প্রার্থীর নির্বাচনে জেতার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কিন্তু তার এক শতাংশ ভোটই কমলার হোয়াইট হাউজের রাস্তা বন্ধ করে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সম্প্রতি এক রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনে সরাসরি স্টেইনকে আক্রমণ করেছে কমলার সমর্থকশিবির। বিজ্ঞাপনটিতে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির উপদেষ্টা রামসি রিড বলেন, '২০১৬ সালের মতো এবারও জিল স্টেইন প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। কিন্তু কে হবেন, সেটা নির্ধারণ করতে পারবেন। ভোটারদের জন্য এটা জানা জরুরি, কমলা হ্যারিস বাদে অন্য যে কাউকে ভোট দেওয়া মানে ট্রাম্পকেই ভোট দেওয়া।'

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিস এবারের মার্কিন নির্বাচনের প্রধান দুই প্রার্থীই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইসরায়েলের গণহত্যাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে এই গণহত্যায় বাইডেন প্রশাসনের দায় সরাসরি পড়ছে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলার ওপর। কিন্তু অপেক্ষাকৃত উদারপন্থীদের দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সিংহভাগ ভোটারই এই গণহত্যায় বাইডেন প্রশাসনের অবস্থানকে সমর্থন করেনি।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মে মাসে ডাটা ফর প্রোগ্রেসের সমীক্ষায় দেখা যায়, ৮৩ শতাংশ ডেমোক্র্যাট সমর্থক গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির পক্ষে। ৫৬ শতাংশ ডেমোক্র্যাট গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা বলে বিশ্বাস করে।

যেভাবে ব্যবধান গড়তে পারেন স্টেইন

গত জুলাইয়ে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কমলা প্রার্থিতা পাওয়ার পর নিরপেক্ষ সব সমীক্ষা তাকে ট্রাম্পের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে রেখেছে। কিন্তু সেই ব্যবধান সবসময়ই এক-দুই শতাংশের মতো।

গত সোমবার প্রকাশিত ওয়াশিংটন পোস্টের সর্বশেষ সমীক্ষায় দেখা যায়, দুই প্রার্থীর সমর্থনই ৪৭ শতাংশ। ফাইভথার্টিএইটের সর্বশেষ সমীক্ষায় দেখা যায়, কমলার সমর্থন ৪৮ দশমিক দুই শতাংশ এবং ট্রাম্পের ৪৬ দশমিক তিন শতাংশ। কিন্তু এসব সমীক্ষায় গ্রহণযোগ্য ভুলের মাত্রাই (মার্জিন অব এরর) দুই থেকে তিন শতাংশ। যার মানে জনপ্রিয়তায় দুই প্রার্থীর মাঝে ব্যবধান নেই বললেই চলে।

তবে এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সার্বিক জনপ্রিয়তার ওপর মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল নির্ভর করে না। 'ইলেকটোরাল কলেজ' পদ্ধতিতে সিংহভাগ অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনের ফলাফল প্রতিবার একই থাকে। যে কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের ফলাফল ঘনঘন বদলায়, সেগুলোকে বলা হয় দোদুল্যমান রাজ্য (সুইং স্টেট)। ফাইভথার্টিএইটের সর্বশেষ সমীক্ষায়, বড় চার দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যে (মিশিগান, পেনসিলভেনিয়া, উইসকনসিন, নর্থ ক্যারোলিনা) দুই প্রার্থীর ব্যবধান এক শতাংশের কম। এই চার অঙ্গরাজ্যেই ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন স্টেইন, বিশেষ করে মিশিগানে।

আরব আমেরিকান ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, জনসংখ্যার অনুপাতে মিশিগানে সবচেয়ে বেশি আরব বংশোদ্ভূত মার্কিনি বসবাস করেন। সেখানে মধ্যপ্রাচ্যে বাইডেন প্রশাসনের কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে মুসলিম মার্কিনিরা একটি সংগঠন তৈরি করেছেন, যার নাম 'অ্যাবানডন হ্যারিস'। সংগঠনটি স্টেইনকে সমর্থন দিয়েছে।

সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনসের (সিএআইআর) একটি জরিপে দেখা যায়, সার্বিকভাবে মুসলিম ভোটারদের মাঝে কমলা ও স্টেইনের সমর্থন প্রায় সমান (কমলা ২৯ দশমিক চার, স্টেইন ২৯ দশমিক এক শতাংশ)। তবে তিনটি অঙ্গরাজ্যে স্টেইন—অ্যারিজোনা (৩৫ শতাংশ), মিশিগান (৩৫ শতাংশ) ও উইসকনসিনে (৩৫ শতাংশ)—দুই প্রার্থীর চেয়েই এগিয়ে আছেন।

২০২০ মার্কিন নির্বাচনে ব্যবধান তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল মুসলিম ভোটাররা। ইকোনোমিক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেবার ৬৯ শতাংশ মুসলিম ভোটার বাইডেনকে বেছে নিয়েছেন, যেখানে ট্রাম্প পেয়েছেন মাত্র ১৭ শতাংশ মুসলিম ভোট। মিশিগানের মতো দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে এসব ভোটই ব্যবধান গড়ে দিয়েছিল বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক।

আগেও ব্যবধান গড়েছেন তৃতীয় প্রার্থীরা

২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনেও গ্রিন পার্টির প্রার্থী ছিলেন জিল স্টেইন। ডেমোক্র্যাটিক শিবির এখনো অভিযোগ করে থাকে, সেই নির্বাচনে স্টেইনের ব্যালটে পড়া ভোটগুলোর জন্যই হিলারি ক্লিনটনকে হারতে হয়েছে।

মার্কিন ম্যাগাজিন নিউজউইকের তথ্য অনুযায়ী, সেবার মিশিগানে ক্লিনটনকে প্রায় ১০ হাজার ভোটে হারায় ট্রাম্প, যেখানে স্টেইন পেয়েছিলেন ৫১ হাজার ভোট। পেনসিলভেনিয়ায় ক্লিনটনকে ৪৪ হাজার ভোটে হারিয়েছিলেন ট্রাম্প, যেখানে স্টেইনের ব্যালটে পড়েছিল প্রায় ৫০ হাজার ভোট। উইসকনসিনে ট্রাম্পের সঙ্গে হিলারির ব্যবধান ছিল প্রায় ২৩ হাজার ভোট। এই অঙ্গরাজ্যে স্টেইনের ভোট সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার।

২০০০ সালের মার্কিন নির্বাচনে ব্যবধান গড়ে দিয়েছিল ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্য, যেখানে মাত্র ৫৩৭ ভোটে জয় পেয়েছিলেন রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ ডব্লিউ বুশ। এই অঙ্গরাজ্যে গ্রিন পার্টির প্রার্থী রালফ নাদের ৯৭ হাজার ভোট পেয়েছিলেন।

নির্বাচন-পূর্ব সব সমীক্ষা বলছে, ২০০০, ২০১৬ ও ২০২০ মার্কিন নির্বাচনের মতোই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে এবারের নির্বাচনে।

Comments

The Daily Star  | English

UN eyes major overhaul amid funding crisis, internal memo shows

It terms "suggestions" that would consolidate dozens of UN agencies into four primary departments: peace and security, humanitarian affairs, sustainable development, and human rights.

1h ago