নেতানিয়াহু গাজায় যুদ্ধবিরতি ‘বানচাল’ করতে চান: হামাস

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের ব্রিফিং দিচ্ছেন নেতানিয়াহু। ছবি: রয়টার্স
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের ব্রিফিং দিচ্ছেন নেতানিয়াহু। ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জেনেবুঝে গাজায় যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ 'বানচাল' করতে চাইছেন। এমন অভিযোগ এনেছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস।

আজ বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

অপরদিকে, নেতানিয়াহুর দাবি, হামাস দরকষাকষির সময় 'সব প্রস্তাব নাকচ করেছে'।

এমন সময় এই পাল্টাপাল্টি দোষারোপ এলো, যখন গাজায় আটকে থাকা বাকি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করার জন্য প্রচণ্ড চাপের মুখে আছেন নেতানিয়াহু। আপাতঃদৃষ্টিতে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করা ছাড়া জিম্মিদের জীবিত ফিরে পাওয়ার অন্য কোনো সমাধান দেখছেন না বিশ্লেষকরা।

রোববার রাফার এক সুড়ঙ্গ থেকে ছয় জিম্মির মরদেহ উদ্ধারের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে ইসরায়েলের জনগণ। 

জেরুজালেমে বিক্ষোভের সময় এক বিক্ষোভকারীকে আটক করে পুলিশ। ছবি: রয়টার্স
জেরুজালেমে বিক্ষোভের সময় এক বিক্ষোভকারীকে আটক করে পুলিশ। ছবি: রয়টার্স

বুধবার নেতানিয়াহু বলেন, 'আমরা দরকষাকষির অংশ হিসেবে দুই পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি অবস্থানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলাম।

'কিন্তু তারা (হামাস) এতে রাজি হচ্ছে না। তারা আলোচনা করতে চায় না', যোগ করেন তিনি।

নেতানিয়াহুর সর্বশেষ শর্ত হল মিসর-গাজা সীমান্তের ফিলাডেলফি করিডরের নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতে থাকবে। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, এই সীমান্ত দিয়ে হামাস গাজায় অস্ত্র পাচার করতে পারে। যার ফলে, আবারও ৭ অক্টোবরের মতো হামলা আসতে পারে।

কিন্তু হামাস চায় এই অঞ্চল থেকে স্থায়ীভাবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রত্যাহার।

আজ বৃহস্পতিবার হামাস জানিয়েছে, সীমান্ত এলাকা কুক্ষিগত রাখার দাবি জানানোর উদ্দেশ্য একটাই, আর তা হলো, 'চুক্তি বানচাল করা'।

হামাস বলছে, নতুন চুক্তি, বা চুক্তিতে নতুন শর্ত দেওয়া অপ্রয়োজনীয়, কারণ তারা ইতোমধ্যে কয়েক মাস আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপস্থাপন করা চুক্তি মেনে নিয়েছে।

হামাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে জানিয়েছে, 'আমাদের নতুন কোনো প্রস্তাবের প্রয়োজন নেই।'

'আমরা নেতানিয়াহু ও তার কলা-কৌশলের ফাঁদে পড়ার বিষয়ে হুশিয়ার করছি। তিনি দরকষাকষি দীর্ঘায়িত করে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছেন' , হামাসের বিবৃতিতে আরও জানানো হয়।

এ সপ্তাহে ইসরায়েলের একাধিক শহরে নেতানিয়াহুর সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলমান রয়েছে। নেতানিয়াহুর বাসভবনের সামনে খালি কফিনে ইসরায়েলি পতাকা জড়িয়ে বিক্ষোভ করেছেন দেশটির জনগণ। পাশাপাশি, শ্রমিকদের আহ্বানে ২৪ ঘণ্টা ধর্মঘট পালনসহ অন্যান্য বিক্ষোভ কর্মসূচি চলমান রয়েছে।

জেরুজালেমে বিক্ষোভের সময় এক বিক্ষোভকারীকে আটক করে পুলিশ। ছবি: রয়টার্স
জেরুজালেমে বিক্ষোভের সময় এক বিক্ষোভকারীকে আটক করে পুলিশ। ছবি: রয়টার্স

সমালোচকরা জিম্মিদের মৃত্যুর জন্য তাকে দায় দিয়ে বলেছেন, তিনি যুদ্ধবিরতি চুক্তি সফল করার জন্য যথেষ্ঠ উদ্যোগ নেননি।

মধ্যস্থতাকারীদের অন্যতম, কাতার মঙ্গলবার জানিয়েছে,  যুদ্ধবিরতির আলোচনায় 'তথ্য বিকৃত করে ও বারবার মিথ্যে বলে বৈশ্বিক জনমতকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা' চালাচ্ছে ইসরায়েল।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এ ধরনের কৌশলে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ব্যর্থ হবে।

৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে অপ্রত্যাশিত হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ২০৫ ব্যক্তি নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক মানুষ। সঙ্গে হামাসের হাতে জিম্মি হন ২৫১ জন।

জিম্মিদের মধ্যে ৯৭ জন এখনো গাজায় আছেন। তবে, তাদের মধ্যে ৩৩ জন ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন। বাকিরা গত নভেম্বরে এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির সময় বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় মুক্তি পান।

সংখ্যার এই হিসাব ইসরায়েলের দেওয়া।

সুযোগ পেলেই মিথ্যে বলে বৈশ্বিক জনমতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন নেতানিয়াহু, এমন দাবি করেছে কাতার। ছবি: রয়টার্স
সুযোগ পেলেই মিথ্যে বলে বৈশ্বিক জনমতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন নেতানিয়াহু, এমন দাবি করেছে কাতার। ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ সেদিন থেকেই শুরু হয়। গত ১১ মাসে এসব হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৪০ হাজার ৮৬১ জন। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

এই তথ্য জানিয়েছে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যকে বিশ্বাসযোগ্য বলে অভিহিত করেছে।

Comments

The Daily Star  | English

What's causing the unrest among factory workers?

Kalpona Akter, labour rights activist and president of Bangladesh Garment and Industrial Workers Federation, talks to Monorom Polok of The Daily Star about the recent ready-made garments (RMG) workers’ unrest.

8h ago