১৮ সাঁতারুকে ডলফিনের কামড়, জাপান সৈকতে সতর্কতা জারি

প্রশান্ত মহাসাগরে বটলনেক ডলফিন। প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত
প্রশান্ত মহাসাগরে বটলনেক ডলফিন। প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত

জাপানে মধ্যাঞ্চলের ফুকুই উপকূলীয় এলাকার সমুদ্র সৈকতে হঠাত করেই সাঁতারুদের ওপর হামলা চালাচ্ছে ডলফিন। একটি নিঃসঙ্গ ও হতাশাগ্রস্ত ডলফিনকে এর জন্য দায় দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

আজ মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি ও বিবিসি।

একটি হতাশ ও নিঃসঙ্গ বটলনেক প্রজাতির ডলফিন ফুকুই প্রিফ্যাকচারের মিহামা শহরের সৈকতগুলোতে এ বছর ১৮ বার হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সুরুগা কোস্টগার্ডের বরাত দিয়ে এএফপি জানিয়েছে, এর আগের দুই বছর এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা হাতে গোনা। 

বিবিসি জানিয়েছে, মিহামার কাছে ২০২৩ সালে ছয় ব্যক্তি ডলফিনের কামড়ে আহত হন। এক জনের পাঁজরের হাড় ভেঙে যায়। ২০২২ সালে এক ব্যক্তি আহত হয়েছিলেন।

ডলফিনের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার হুশিয়ারি দিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। সাম্প্রতিক সময়ে অপ্রত্যাশিতভাবে ডলফিনের কামড়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এই উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আক্রান্ত সাঁতারু কোনো গুরুতর আঘাত পায়নি। চামড়া ছড়ে গেছে বা সামান্য আঁচড় খেয়েছেন তারা।

প্রশান্ত মহাসাগরে বটলনেক ডলফিন। প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত
প্রশান্ত মহাসাগরে বটলনেক ডলফিন। প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত

তবে সম্প্রতি এক স্কুলগামী শিশুকে ২০-৩০টি স্টিচ দিতে হয়েছে। কোস্টগার্ড কর্মকর্তা শৌচি তাকেউচি এএফপিকে এ কথা জানান।

সুইশোহামা সৈকতে (ডায়মন্ড বিচ নামেও পরিচিত) এক স্থানীয় পর্যটন সংস্থা সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছে। তারা তাদের ওয়েবসাইটে ও কাগজে ছাপিয়ে ডলফিনের কাছে না যাওয়ার বা তাদেরকে স্পর্শ না করার সতর্কবার্তা প্রচার করছে।

সংস্থাটি হুশিয়ারি দিয়ে বলেছে, 'ডলফিনরা সাধারণত শান্তশিষ্ট। তবে তাদের ধারালো দাঁতের কামড়ে রক্তাক্ত হতে পারে যে কেউ। তারা চাইলে আপনাকে টেনে পানিতে নামিয়ে নিতে পারে এবং সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে জীবন সংশয়ও দেখা দিতে পারে।'

কোস্টগার্ড জানিয়েছে, একটি ডলফিনই সবগুলো ঘটনার জন্য দায়ী কী না, সেটা এখনো নিশ্চিত নয়।

তবে মাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেটোলজি (জলজ প্রাণী) বিষয়ের অধ্যাপক তাদামিচি মোরিসাকা বলেন, 'সম্ভবত একই ডলফিন সবগুলো ঘটনার জন্য দায়ী।'

মিহামার পাশের শহর সুরাগায় গত বছর এক ব্যক্তির আঙ্গুলের আঘাত থেকে পাওয়া 'ডরসাল ফিনের' সঙ্গে গত বছর ফুকুই প্রদেশের তীরে আড়াই মিটার লম্বা ডলফিনের ডরসাল ফিন মিলে যায়।

ডরসাল ফিন হচ্ছে ডলফিনের আঙুলের ছাপের মতো। প্রতিটি ডলফিনের দাঁতের কামড় থেকে পাওয়া এই চিহ্নটি অনন্য।  

প্রশান্ত মহাসাগরে বটলনেক ডলফিন। প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত
প্রশান্ত মহাসাগরে বটলনেক ডলফিন। প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত

'তবে আমার ধারণা, সে মানুষকে আহত করতে চাচ্ছে না। অন্যান্য ডলফিনের সঙ্গে যেভাবে যোগাযোগ করে, সেভাবে সে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে', যোগ করেন তিনি।

শার্ক বে ডলফিন রিসার্চ প্রজেক্টের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর ও জীবতত্ত্ববিদ ড. সায়মন অ্যালেন বলেন, 'বটলনেক ডলফিন খুবই সামাজিক প্রাণী এবং তারা শারীরীক সংস্পর্শের মাধ্যমে তাদের এই মনোভাব প্রকাশের চেষ্টা চালায়।'

'খুব সম্ভবত এই ডলফিনটিকে তার সম্প্রদায় থেকে একঘরে করা হয়েছে। এ জন্য সে মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করছে', যোগ করেন তিনি।

সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. ম্যাথিয়াস হফমান-কুন্ট বলেন, ডলটিনটি হয়তো আত্মরক্ষার চেষ্টা করছে।

'হয়তাও আগে মানুষের সঙ্গে তার কোনো খারাপ স্মৃতি রয়েছে। এ কারণে সে এরকম আগ্রাসী মনোভাব দেখাচ্ছে', বলেন ড. ম্যাথিয়াস।

তিনি আরও বলেন, 'হাতির মতো, ডলফিনের স্মৃতিশক্তিও খুব ভালো। কেউ তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলে তারা তা মনে রাখে এবং সে অনুযায়ী আচরণ করে।'

Comments

The Daily Star  | English
compensation for uprising martyrs families

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

6h ago