আকাশে জন্ম নেওয়া ৮২০ গ্রাম ওজনের শিশুর জীবন বাঁচালেন নার্স

কোলাজ ছবিতে নবজাতক শিশু ও তার জীবন রক্ষাকারী নার্স চেন শানশান। ছবি: সংগৃহীত
কোলাজ ছবিতে নবজাতক শিশু ও তার জীবন রক্ষাকারী নার্স চেন শানশান। ছবি: সংগৃহীত

ফ্লাইটে জন্ম নেওয়া প্রিম্যাচিউর শিশুর প্রাণ বাঁচিয়ে সবার প্রশংসা কুড়িয়েছেন চীনের এক নার্স। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, মাথা ঠান্ডা রেখে নার্স চেন শানশান দ্রুত জরুরি ব্যবস্থা নিয়েছিলেন বলেই শিশুটি প্রাণে বেঁচে যায়।

আজ সোমবার চীনের সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এ তথ্য জানায়।

সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে ওঠার সময় শিশুর মা ২৫ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। দেশটির দক্ষিণে হাইনান প্রদেশের হাইকোউ থেকে বেইজিং যাওয়ার সময় উড়োজাহাজের টয়লেটে শিশুটি জন্ম নেয়।

চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিসিটিভির প্রতিবেদন জানিয়েছে ঘটনাটি গত ৩ আগস্টের।

সেই নারীর সঙ্গে তার চার বছর বয়সী কন্যা সন্তানও ভ্রমণ করছিলেন। তিনি বেইজিংয়ে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন।

নবজাতক শিশুটি এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছে। ছবি: সংগৃহীত
নবজাতক শিশুটি এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছে। ছবি: সংগৃহীত

একই উড়োজাহাজে যাত্রী ছিলেন হাইনান প্রদেশের পিপলস হাসপাতালের নিওনেটাল (নবজাতক) পরিচর্যা ইউনিটের নার্স চেন শানশান। ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্টরা নবজাতক শিশুটির জন্য জরুরি চিকিৎসা দিতে পারেন এমন কাউকে খুঁজলে তিনি দ্রুত সাড়া দেন।

চেন সংবাদমাধ্যমকে জানান, তিনি এক নারীকে তালুর সমান শিশু হাতে নিয়ে বসে থাকতে দেখেন। শিশুটি তখনো তার মায়ের দেহের সঙ্গে সংযুক্ত।

একই হাসপাতালের অন্য বিভাগের দুই ডাক্তারের সহায়তায় গ্লাভস হাতে চেন শিশুটিকে মায়ের শরীর থেকে আলাদা করে তার শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যবস্থা করেন।

তারা শিশুটিকে অনেক বেশি ফ্যাকাসে দেখতে পান। সে কাঁদছিল না। শ্বাসও নিচ্ছিল না। তার পালসও খুঁজে পাননি চেন।

এই স্বাভাবিক আকারের চেয়ে অনেক ছোট মেয়ে শিশুটির জীবন বাঁচাতে নার্স চেন জরুরিভিত্তিতে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যবস্থা করেন। তিনি বলেন, 'এই ছোট, দুর্বল জীবন মহাবিপদে। তার জন্য প্রতি সেকেন্ড গুরুত্বপূর্ণ।'

তিনি শিশুর দেহের তাপমাত্রা স্থিতিশীল রাখতে কেবিন ক্রুদের কাছ থেকে গরম পানির ব্যাগ নেন।

কিছুক্ষণের মধ্যেই শিশুটি নিশ্বাস নিতে শুরু করলে তারা স্বস্তির সঙ্গে দেখেন তার হৃদযন্ত্র সচল আছে।

এই পরিস্থিতিতে নবজাতক ও তার মায়ের নিরাপত্তার জন্য পাইলট হুনান প্রদেশের চাংশায় জরুরি অবতরণ করেন।

চেন প্রায় ৯০ মিনিট শিশুর দেহের তাপমাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম হন। এরপর তাকে চাংশার হাসপাতালে পাঠানো হয়।

পিপলস হাসপাতালের নিওনেটাল বিভাগে কাজ করছেন চেন শানশান। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
পিপলস হাসপাতালের নিওনেটাল বিভাগে কাজ করছেন চেন শানশান। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

চেন আরও বলেন, 'যখন দেখলাম শিশুটিকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তখন টের পেলাম আমার হাত অসাড় হয়ে গেছে।'

ঝাংয়ের স্বামী তার ছোট মেয়ের জন্ম নেওয়ার সংবাদ পেয়ে দ্রুত চাংশা হাসপাতালে আসেন।

তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান, নবজাতকের ওজন মাত্র ৮২০ গ্রাম ছিল। পরে দুই সপ্তাহ হাসপাতালে থাকার পর তার ওজন ৫০ গ্রাম বেড়ে যায়।

চেনকে পাঠানো ভিডিও বার্তায় নবজাতকের বাবা বলেন, 'জরুরি মুহূর্তে আপনি সেখানে ছিলেন। এ জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমাদের সন্তানকে আপনার কথা জানাব। সে আপনাকে সারাজীবন মনে রাখবে।'

চেন জানান, সে সময় তিনি খুব বেশি কিছু ভাবার সময় পাননি। একমাত্র চিন্তা ছিল শিশুর জীবন রক্ষা করা। কেবিন ক্রু ও অন্য দুই ডাক্তারেরও ধন্যবাদ প্রাপ্য।

এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় চেনের এই সাহসী ও মানবিক উদ্যোগ বহুল প্রশংসা পেয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Govt publishes gazette of 1,558 injured July fighters

Of them, 210 have been enlisted in the critically injured "B" category, while the rest fall under the "C" category of injured fighters

7h ago