সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প-কমলা প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে ভরাডুবি হয় জো বাইডেনের। যার ফলে নির্বাচনী দৌড় থেকে নিজের নাম সরিয়ে নিতে বাধ্য হন তিনি। এবার নতুন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের সঙ্গে ডিবেটে অংশ নেবেন ট্রাম্প। তবে সেই ডিবেট নিয়ে চলছে দুই প্রার্থীর দ্বন্দ্ব।
আজ রোববার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।
এর আগে ট্রাম্প ১০ সেপ্টেম্বর এবিসি চ্যানেলে কমলার সঙ্গে ডিবেটে মত দিয়েছিলেন। গতকাল আবার তিনি জানান, ৪ সেপ্টেম্বর ফক্স নিউজ নেটওয়ার্কে কমলার সঙ্গে ডিবেট করবেন।
মত বদলানোর কথা জানানোর পর কমলা হ্যারিসের প্রচারণা দলের পক্ষ থেকে শনিবার বলা হয়, 'ভয় পেয়েছেন' ট্রাম্প।
এবিসির বদলে ফক্স নিউজে বিতর্কের প্রস্তাব দিয়ে ট্রাম্প তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশালে পোস্ট করেন। এরপর তিনি আটলান্টার ফ্লাইটে চেপে বসেন।
আটলান্টায় যে সভাস্থলে মঙ্গলবার কমলা হ্যারিস ১০ হাজার উজ্জীবিত মানুষের সামনে বক্তব্য রাখেন, সেখানেই ট্রাম্প বক্তব্য দেন।
ট্রাম্প তার বক্তব্যে বারবার কমলাকে আক্রমণ করেন। তিনি অবৈধ অভিবাসন নিয়ে কথা বলেন। দাবি করেন, বিশ্বের নানা জায়গা থেকে 'খুনিরা' এসে যুক্তরাষ্ট্রে ভিড় করছে। তিনি আলাদা করে 'কঙ্গোর' কথা উল্লেখ করে বলেন, কমলা হ্যারিস এসব মানুষকে যুক্তরাষ্ট্রে আসার সুযোগ দিয়ে 'আমাদের দেশকে ধ্বংস করেছে'।
৯২ মিনিটের বক্তব্যে ট্রাম্প আবারও দাবি তোলেন, ২০২০ সালের নির্বাচনে 'কারচুপি' করেছিল ডেমোক্র্যাটরা।
কমলার সঙ্গে ডিবেট প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, তিনি ফক্স নিউজের সঙ্গে 'একমত' হয়েছেন। তিনি আরও জানান, এই ডিবেট পেনসিলভ্যানিয়ায় দর্শকদের সামনে 'লাইভ' সম্প্রচার করা হবে।
আটলান্টায় সমবেত রিপাবলিকান ভক্তদের সামনে বলেন, 'আমরা ফক্সে একটি বিতর্কে অংশ নিতে যাচ্ছি। তবে এটা সম্ভব হবে যদি তিনি (কমলা) সময়মতো হাজির হন।'
কিন্তু কমলা হ্যারিসের প্রচারণা দলের পক্ষ থেকে ট্রাম্পের এই প্রস্তাবকে নাকচ করা হয়।
কমলা হ্যারিসের নির্বাচনী প্রচারণা পরিচালক মাইকেল টাইলার এক বিবৃতিতে বলেন, 'ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন ভয় পেয়ে ছুটাছুটি করছেন। তিনি আগেই যে বিতর্কে অংশ নিতে সম্মত হয়েছেন, তা থেকে পালিয়ে সোজা ফক্স নিউজের নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটে যাচ্ছেন।'
'তার উচিৎ হবে ১০ সেপ্টেম্বরের বিতর্কে উপস্থিত হওয়া, যে বিতর্কে অংশ নিতে তিনি ইতোমধ্যে সম্মতি দিয়েছেন', যোগ করেন টাইলার।
বিশ্লেষকদের মতে, ফক্স নিউজ দীর্ঘ সময় ধরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ট্রাম্পকে সমর্থন জানিয়েছে এসেছে। তারা আরও মত দেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ট্রাম্পের 'খেই হারানো' প্রচারণাকে সঠিক পথে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন তিনি।
ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার প্রধান কৌশল ছিল 'বুড়ো' বাইডেনের প্রতি আক্রমণ। তার সব বক্তব্যের মূল সূর ছিল বাইডেন দেশও চালাতে শারীরিক ও মানসিকভাবে সক্ষম নন।
কিন্তু দৃশ্যপটে অপেক্ষাকৃত কমবয়সী কমলার (৫৯) আগমনে তার এই কৌশল মুখ থুবড়ে পড়েছে।
কমলা হ্যারিস এক সপ্তাহের ব্যবধানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহ করেছেন, বারাক ওবামাকে দুইবার নির্বাচনে জেতানো প্রচারণা দলের সদস্যদের নিয়োগ দিয়েছেন এবং জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে ট্রাম্পের (৭৮) সঙ্গে ব্যবধান অনেকটাই কমিয়ে এনেছেন। তরুণ প্রজন্ম তাকে পছন্দের প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছে।
শুক্রবার ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্যদের সর্বসম্মতিতে দলটির প্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন কমলা হ্যারিস।
শিগগির ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য তার রানিং মেটের নাম জানাবেন কমলা। বিশ্লেষকদের মতে, এই পদের সম্ভাব্য প্রার্থী গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য পেনসিলভ্যানিয়ার জনপ্রিয় গভর্নর জশ শাপিরো। মঙ্গলবার রানিং মেটকে নিয়ে দেশব্যাপী প্রচারণা শুরু করবেন কমলা।
কমলার জনপ্রিয়তায় রাশ টেনে ধরতে তার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ শুরু করেছেন ট্রাম্প। কমলাকে 'পাগল', 'মার্কসবাদী কৌঁসুলি' এবং 'উগ্র বামপন্থি' হিসেবে অভিহিত করে ট্রাম্প বলেন, তিনি নির্বাচিত হলে অর্থনীতি ধসে পড়বে।
ট্রাম্পবাহিনীর নানা তৎপরতা সত্ত্বেও অবিশ্বাস্য দ্রুততায় জনপ্রিয়তা বাড়ছে কমলার। সাম্প্রতিক জনমত জরিপগুলোতে ট্রাম্পের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে
অপরদিকে, বাইডেনের বিদায়ে ট্রাম্প নিজেই এখন মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সী সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতে পরিণত হয়েছেন।
Comments