যুদ্ধের কারণে বিশ্বে রেকর্ড ১২ কোটি মানুষ ঘর ছেড়েছে: জাতিসংঘ

গাজার জাবালিয়া ক্যাম্পে খাওয়ার পানির জন্য লাইন ধরে অপেক্ষা করছেন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স
গাজার জাবালিয়া ক্যাম্পে খাওয়ার পানির জন্য লাইন ধরে অপেক্ষা করছেন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স

যুদ্ধ, সহিংসতা ও নির্যাতনের কারণে বিশ্বে ১২ কোটি মানুষ নিজের ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। এটাই বাস্তুচ্যুত মানুষের সর্বোচ্চ সংখ্যার রেকর্ড।

আজ বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, নিজ ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হওয়া মানুষের সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, গাজা, সুদান ও মিয়ানমারসহ বিশ্বের অনেক অঞ্চলে সংঘাতের কারণে মানুষ ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে। যার ফলে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা আবারও নতুন রেকর্ড গড়েছে।

ইউএনএইচসিআর এক বিবৃতিতে জানায়, বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা এখন জাপানের জনসংখ্যার সমান।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্দি বলেন, 'গণহারে মানুষকে ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য করার বড় কারণ সশস্ত্র সংঘাত।'

২০২৩ সালের শেষ নাগাদ ১১ কোটি ৭৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন।

এ বছরের এপ্রিলে সংখ্যাটি ১২ কোটি ছাড়িয়ে যায়।

হাইতির রাজধানীতে বাস্তুচ্যুত মানুষ। ফাইল ছবি: রয়টার্স
হাইতির রাজধানীতে বাস্তুচ্যুত মানুষ। ফাইল ছবি: রয়টার্স

২০২২ সালের শেষে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ছিল ১১ কোটি। টানা ১২ বছর ধরে সংখ্যাটি বাড়ছে এবং ২০১২ সালের পর এটি প্রায় তিন গুণ হয়েছে।

এর পেছনে মূলত দায়ী দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংঘাত ও নতুন সংঘাতের শুরু।

গ্রান্দি এএফপিকে জানান, তিনি আট বছর আগে এই পদে নিয়োগ পাওয়ার পর এসব তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে স্তম্ভিত হয়ে পড়েন।

'তারপর থেকে সংখ্যাটি দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে', যোগ করেন গ্রান্দি।

এ বিষয়টিকে তিনি 'চলমান বৈশ্বিক ভয়াবহ পরিস্থিতির একটি নিদর্শন' হিসেবেও অভিহিত করেন।

গ্রান্দি আরও উল্লেখ করেন, সংঘাতের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও অনেক মানুষ তাদের ঘর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

তিনি সাংবাদিকদের জানান, বাস্তুচ্যুতির কারণে গত বছর ইউএনএইচসিআর ২৯ দেশে ৪৩ বার জরুরি পরিস্থিতির ঘোষণা দেয়, যা কয়েক বছর আগের গড়ের চেয়ে চারগুণ বেশি।

গ্রান্দি উল্লেখ করেন, 'এখন সংঘাতগুলো আন্তর্জাতিক আইনকে তোয়াক্কা না করেই সংঘটিত হচ্ছে। প্রায়ই এসব সংঘাতের উদ্দেশ্য থাকে মানুষকে আতঙ্কিত করা।'

'নিঃসন্দেহে এসব সংঘাত মানুষকে ঘর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করার বড় কারণ', যোগ করেন তিনি।

গ্রান্দি স্বীকার করেন, আগামীতেও চলতি ধারার পরিবর্তন আসার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই।

'আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন না এলে এই সংখ্যা বাড়তেই থাকবে', যোগ করেন তিনি।

দারফুরের জমজম শরণার্থী শিবিরে বাস্তুচ্যুত মানুষ। ফাইল ছবি: রয়টার্স
দারফুরের জমজম শরণার্থী শিবিরে বাস্তুচ্যুত মানুষ। ফাইল ছবি: রয়টার্স

বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে বাস্তুচ্যুত ১১ কোটি ৭৩ লাখ মানুষের মধ্যে ছয় কোটি ৮৩ লাখ মানুষ নিজ দেশেই এক অংশ থেকে অন্য অংশে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

আন্তর্জাতিক শরণার্থী ও অন্যান্য কারণে নিজ দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হওয়া মানুষের সংখ্যা চার কোটি ৩৪ লাখ।

প্রতিবেদনে সুদান, কঙ্গো, মিয়ানমার, ইউক্রেন, গাজা উপত্যকা ও সিরিয়ার কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়।

সিরিয়ায় সর্বোচ্চ এক কোটি ৩৮ লাখ মানুষ ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। এর মধ্যে দেশের ভেতর ও বাইরে বাস্তুচ্যুত মানুষ অন্তর্ভুক্ত।

 

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

8h ago