ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী ‘বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের অবস্থান শনাক্ত’

প্রেসিডেন্ট রাইসি এবং তার সফর সঙ্গীদের নিয়ে বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের অবস্থান শনাক্তের পর উদ্ধারকারী দলগুলো সেদিকে এগোচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী 'বিধ্বস্ত' হেলিকপ্টারের অবস্থান শনাক্ত হয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএর বরাত দিয়ে রোববার রাতে সিএনএন এ তথ্য জানিয়েছে।

পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের কমান্ডার বলেছেন, প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি যেখানে বিধ্বস্ত হয়েছিল সামরিক বাহিনী সেদিকে যাচ্ছে।

দুর্ঘটনাস্থল থেকে ইরানের সামরিক বাহিনী সিগন্যাল পেয়েছে বলেও আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। 

রোববার প্রেসিডেন্ট রাইসি আজারবাইজান-ইরান সীমান্তে একটি বাঁধ উদ্বোধন শেষে ফেরার পথে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ভারজাকান অঞ্চলে তাকে বহনকারী হেলিকপ্টার জরুরি অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়।

প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ঘটনাস্থল শনাক্ত করা চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়ে এবং হেলিকপ্টার বা প্রেসিডেন্টের কোনো সফরসঙ্গীর সঙ্গে দীর্ঘসময় যোগাযোগ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

পরে রাতে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) কমান্ডার আসগর আব্বাসগোলিজাদেহ তাসনিম নিউজ এজেন্সিকে জানান, হেলিকপ্টার ও ফ্লাইট ক্রুদের একজনের মোবাইল ফোনের সিগন্যাল শনাক্ত করেছে সামরিক বাহিনী।

তিনি বলেন, 'আমরা এখন ওই এলাকার দিকে এগোচ্ছি এবং আশা করি সুসংবাদ দিতে পারব।'

এদিকে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সফরসঙ্গীর দুই সদস্য উদ্ধারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলে আইআরএনএ জানিয়েছে।

ইরানের ডেপুটি প্রেসিডেন্ট ফর এক্সিকিউটিভ অ্যাফেয়ার্স মোহসেন মনসুরির বরাত দিয়ে আইআরএনএ জানায়, বাঁধ উদ্বোধন শেষে ফেরার পথে প্রেসিডেন্ট রাইসির হেলিকপ্টারটি আধ ঘণ্টার মধ্যে অপর দুই হেলিকপ্টারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে। 

মোহসেন মনসুরি বলেন, 'প্রেসিডেন্টের দুই সফরসঙ্গী উদ্ধারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।'

আরেকটি আশার খবর হলো, ইরানের যোগাযোগ মন্ত্রণালয় দুর্ঘটনাস্থলের দুই কিলোমিটার ব্যাসার্ধ চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে।

রাতে উদ্ধার অভিযান চলছে, 'সম্ভাব্য ঘটনাস্থলের দিকে যাচ্ছে উদ্ধারকারী দলগুলো। ছবি: রয়টার্স

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মকর্তা রাজি আলিশভান্দি জানান, চারটি উদ্ধারকারী দল দুর্ঘটনাস্থলের কাছাকাছি পৌঁছেছে। তবে বৃষ্টি, ঠাণ্ডা আবহাওয়া এবং পাহাড়ি এলাকার কারণে উদ্ধারাভিযান সময়সাপেক্ষ হতে পারে।

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির উদ্ধার অভিযান পরিচালনাকারী দলের প্রধান বাবাক মাহমুদি জানিয়েছেন, উদ্ধারকারীরা 'সম্ভাব্য' ঘটনাস্থলের কাছাকাছি পৌঁছেছে।

যে হেলিকপ্টারে ছিলেন প্রেসিডেন্ট রাইসি

ইরানের প্রেসিডেন্টকে বহনকারী নিখোঁজ হেলিকপ্টার ছবি ও ভিডিও দেখে আল-জাজিরা নিশ্চিত হয়েছে যে, ইব্রাহিম রাইসি ও তার সঙ্গীরা যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত বেল ২১২ হেলিকপ্টারে ছিলেন।

দুই ব্লেডের মাঝারি আকারের হেলিকপ্টারটির আসন ১৫টি। অর্থাৎ, একজন পাইলট ও ১৪ জন আরোহী এতে চড়তে পারেন।

তবে আজ ওই হেলিকপ্টারে ক্রুসহ মোট কতজন ছিলেন, তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে প্রেসিডেন্ট রাইসিসহ বিদ্ধস্ত হেলিকপ্টার উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।

ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান হামিদ মনজেম আল-জাজিরাকে জানিয়েছেন, উদ্ধারকারী দল শিগগির ঘটানাস্থলে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, 'সশস্ত্র বাহিনীও উদ্ধারকাজে যোগ দেবে এবং ওই এলাকায় তিনটি ড্রোন ইউনিট আছে। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে তারা কাজ করতে পারছে না।'

তাসনিম নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, 'সশস্ত্র বাহিনী, সেনাবাহিনী, আইআরজিসি এবং পুলিশ প্রথম থেকেই ওই এলাকায় অবস্থান নিয়েছে।'

এদিকে প্রথম ভাইস-প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার ঘটনাস্থলের দিকে যাচ্ছেন বলে সরকারের মুখপাত্র আলী বাহাদোরি জাহরোমির বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানিয়েছে।

জাহরোমি বলেন, 'নিখোঁজ হেলিকপ্টার সম্পর্কে সর্বশেষ প্রতিবেদন উপস্থাপন করে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়েছে।'

ইব্রাহিম রাইসি ২০২১ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করে ইরানের নির্বাচিত হন। ৬৩ বছর বয়সী কট্টরপন্থী রাইসি এর আগে দেশের বিচার বিভাগের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে দেখা হয় তাকেই। তার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাও আরোপ আছে। 

রাইসির শাসনামলে ইরান পর্যাপ্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ হয়েছে যার মাধ্যমে নিউক্লিয়ার অস্ত্র তৈরি করা সম্ভব।

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ইরান রাশিয়াকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে বলেও ধারণা করা হয়। পাশাপাশি চলমান গাজা সংকটের মধ্যেই খুব সম্প্রতি ইসরায়েলের ওপর ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান।

ইয়েমেনের সশস্ত্র সংগঠন হুতি বিদ্রোহীদের এবং লেবাননের হিজবুল্লাহকে অস্ত্র সরবরাহ করছে ইরান।

২০২২ সালে নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে মাশা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় ইরানজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়।

রাইসিকে খামেনির উত্তরসূরি হিসেবে অভিহিত করেছেন কাতার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাহজুব জুইরি। তার মতে, রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ রাইসি ইরানের রাজনীতিতে একজন 'হেভিওয়েট' নেতা।

এ অবস্থায় ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যু হলে প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে পারেন বলে আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।

ইরানের সংবিধান অনুযায়ী, প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার সর্বোচ্চ নেতার অনুমোদন নিয়ে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

ইরানের রাষ্ট্রীয় পদক্রম অনুসারে, রাষ্ট্রের প্রধান সুপ্রিম লিডার আলি খামেনি এবং প্রেসিডেন্ট সরকার প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড।

সেকেন্ড-ইন-কমান্ড মারা গেলে প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট তাৎক্ষণিক দায়িত্ব গ্রহণ করবেন এবং ৫০ দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দেবেন।

Comments

The Daily Star  | English
US attack on Iran nuclear sites

Iran’s Araghchi says US attack will have ‘everlasting consequences’

Iran says 'no signs of contamination' after US attacks on key nuclear sites

2h ago