গণমাধ্যমের মুখ বন্ধে গৌতম আদানির হাতিয়ার মামলা

দিন ভালো যাচ্ছে না গৌতম আদানির, এক সপ্তাহের মাঝে তিনি ৭৪ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছেন। ছবি: রয়টার্স
গৌতম আদানি। ছবি: রয়টার্স

ভারতীয় সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতার বিরুদ্ধে গৌতম আদানির ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে ৬টি ভিন্ন আদালতে মামলা করা হয়েছে এবং তাকে গৌতম আদানি বা তার কোনো প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না।

এএফপির একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আদানির বিরুদ্ধে একাধিক প্রতিবেদন করার পর ৬৭ বছর বয়সী ঠাকুরতার বিরুদ্ধে ৬টি মানহানির মামলা করা হয়েছে।

এসব মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তার কারাদণ্ড হতে পারে এবং তাকে গৌতম আদানি ও আদানি গ্রুপ সম্পর্কে লিখতে বা বলতে আদালত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।

তিনি এএফপিকে বলেন, 'আমাকে একটি আদেশ দেওয়া হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে যেন গৌতম আদানি ও তার কর্পোরেট সংস্থার কার্যক্রম সম্পর্কে মন্তব্য না করি। তাই আমি আদালত অবমাননা করতে চাই না।'

গুহ ঠাকুরতার সহকর্মী আবির দাশগুপ্ত বলেছেন, আইনি খরচ ও ৩টি রাজ্যে শুনানিতে উপস্থিত হতে 'আমরা শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।'

আবির দাশগুপ্তও এসব মামলার মধ্যে ৩টি মামলায় আসামি।

একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে আদানি গ্রুপের শেয়ারের দামে ধ্বস নামিয়ে দেওয়া ইউএস ইনভেস্টমেন্ট ফার্ম হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ বলছে, প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরেই তদন্ত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে মামলার হুমকি দিয়ে থাকে।

আদানি গ্রুপকে জালিয়াতি ও শেয়ারের দামে কারসাজি করার দায়ে অভিযুক্ত করে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ বলছে, 'বিনিয়োগকারী, সাংবাদিক, সাধারণ নাগরিক, এমনকি রাজনীতিবিদরাও তাদের প্রতিশোধের ভয়ে কথা বলতে ভয় পান।'

হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনের পর এশিয়া ও বিশ্বের সবচেয়ে ধনীর তালিকায় অনেক নিচে নেমে গেছেন গৌতম আদানি।

এই প্রতিবেদনে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে হিন্ডেনবার্গের বিরুদ্ধে মামলা করারও হুমকি দিয়েছে আদানি গ্রুপ।

শুধু তাই নয়, আদানির কয়লা খনির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ কর্মী বেন পেনিংসের বিরুদ্ধেও মামলা করেছে আদানি গ্রুপ।

সিএসবিসি টিভি১৮ এর ২ সাংবাদিকের বিরুদ্ধেও অপরাধমূলক মানহানির মামলা করেছে আদানি গ্রুপ। তাদের বিরুদ্ধে 'মানহানিকর ও মিথ্যা' প্রতিবেদন তৈরির অভিযোগ আনা হয়েছে।

এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আদানি গ্রুপের মুখপাত্র এএফপিকে বলেছে, 'আদানি গ্রুপ দৃঢ়ভাবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে এবং বাকি সব প্রতিষ্ঠানের মতোই মানহানিকর, বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা বিবৃতির বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার রাখে।'

তিনি আরও বলেছেন, 'আগেও আদানি গ্রুপ সেই অধিকার প্রয়োগ করেছে। আমাদের প্রতিষ্ঠান সব সময় আইন মেনে কাজ করে।'

আদানি গ্রুপের দাবি, হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদনটি 'ভারতের ওপর আক্রমণ'।

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে গৌতম আদানির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং দেশটির বিরোধী সংসদ সদস্যরা বলছেন, তারা উভয়েই পারস্পরিক সম্পর্ক থেকে উপকৃত হয়েছেন।

নিউজলন্ড্রির সাংবাদিক মনীষা পাণ্ডে মনে করেন, 'হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টকে শুধু একটি করপোরেট হাউসের ওপর আক্রমণ নয়, বরং মোদি, তার সিদ্ধান্ত, তার মেয়াদের ওপর আক্রমণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।'

আদানি গ্রুপ গত ডিসেম্বরে এনডিটিভির মালিকানায় আসে। এই টেলিভিশনটি নরেন্দ্র মোদির কার্যক্রমের সমালোচনা করতো।

আদানি গ্রুপ এনডিটিভি কিনে নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই টেলিভিশনটির অন্যতম জনপ্রিয় উপস্থাপক রবীশ কুমার পদত্যাগ করেন। তিনি পরবর্তীতে বলেন, তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে, ভিন্নমত দমনের জন্যই এনডিটিভি কিনে নিয়েছে আদানি গ্রুপ।

দ্য ওয়্যারকে তিনি বলেন, 'আদানি কোনোভাবেই প্রশ্ন বা সমালোচনা প্রচার করে না।'

গুহ ঠাকুরতা এএফপিকে বলেছেন, অসংখ্য ভারতীয় ব্যবসায়ী মিডিয়া হাউসের অংশ হয়েছেন বা তৈরি করেছেন যেন 'তাদের বিপক্ষের মতামত ও তথ্য বন্ধ করা যায়'।

তিনি বলেন, 'এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে ভারতে গণমাধ্যমের একটি বড় অংশ বড় ব্যবসায়ীদের স্বার্থের প্রতি অনুগত থাকবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Budget fails to reflect spirit of discrimination-free society: Nahid Islam

The NCP leader slates lack of vision on inequality, jobs and education

59m ago