আদানির শেয়ারের দাম কমছেই, লোকসান বেড়ে ৬৫ বিলিয়ন ডলার
আদানি গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর পতনের ধারা অব্যাহত আছে। শেয়ারের মূল্য পড়ে যাওয়ায় গত তিন দিনে আদানি গ্রুপের মূলধন কমেছে ৬৫ বিলিয়ন ডলার।
রয়টার্সের খবরে জানানো হয়, রোববার হিনডেনবার্গ রিসার্চের বিভিন্ন অভিযোগের জবাব দিয়েছে আদানি গ্রুপ। এর পরও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরেনি।
আদানি গ্রুপের দেওয়া ৪১৩ পৃষ্ঠার জবাবের ব্যাপারে হিনডেনবার্গ বলেছে, তাদের তোলা ৮৮টি প্রশ্নের মধ্যে ৬২টি প্রশ্নের কোনো সুনির্দিষ্ট জবাব দেওয়া হয়নি। এর মাধ্যমে আদানি গ্রুপ এসব অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছে অথবা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে বলে ধরে নেওয়া যায়।
সোমবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার পর আদানি ট্রান্সমিশন, আদানি টোটাল গ্যাস, আদানি গ্রিন এনার্জি, আদানি পাওয়ার ও আদানি উইলমারের শেয়ার দর ৫-২০ শতাংশ পড়ে যায়। আদানি গ্রুপের শেয়ারের উত্থান-পতনের মধ্যে আদানি এন্টারপ্রাইজের এফপিওর দাম ৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। তবে এর দাম এখনো প্রস্তাবিত দামের চেয়ে কম।
২৫০ কোটি ডলারের এই এফপিওর লেনদেন আজ দ্বিতীয় কার্যদিবসে গড়িয়েছে। সকালে এই শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে ২ হাজার ৮৪৮ রুপিতে। অথচ এর প্রস্তাবিত দর ছিল ৩ হাজার ১১২ থেকে ৩ হাজার ২৭৬ রুপি।
স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, আদানি এন্টারপ্রাইজ ৪৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন শেয়ার ছাড়লেও এখন পর্যন্ত ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার শেয়ারের চাহিদা পেয়েছে। আগামী মঙ্গলবার এফপিও বিক্রি বন্ধ হবে। দেশি বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হয়েছে আদানি এন্টারপ্রাইজের এসব শেয়ার।
অবশ্য আবুধাবিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং কোম্পানি সোমবার বলেছে, তারা আদানি এন্টারপ্রাইজে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন দিরহাম বিনিয়োগ করবে।
হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদানি গ্রুপ স্টক ও হিসাবের জালিয়াতি করে সম্পদের পরিমাণ ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখিয়েছে। গত বুধবার এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর হু হু করে আদানি গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর কমে গেছে।
আদানি গ্রুপের কর্ণধার ষাট বছর বয়সী গৌতম আদানি এশিয়ার শীর্ষ ধনী। হিনডেনবার্গের প্রতিবেদন প্রকাশের আগে তিনি বিশ্বজুড়ে তিনি তৃতীয় সর্বোচ্চ ধনী ছিলেন। ফোর্বস জানিয়েছে এর মধ্যেই তিনি সপ্তম অবস্থানে নেমে গেছেন।
হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, আদানি গ্রুপ স্টক ও হিসাবে জালিয়াতি করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ভুল তথ্য দিয়ে বাজারকে প্রভাবিত করেছে। এভাবে আদানি গ্রুপ তার শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে। গত এক দশক ধরে আদানি গ্রুপ এই জালিয়াতি করছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, আদানি গ্রুপ মৌরিতাস ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে অফশোর কোম্পানি খুলে অনৈতিকভাবে কর অবকাশ সুবিধা নিয়েছে। এই গ্রুপের তালিকাভুক্ত প্রধান কোম্পানিগুলোর বিপুল দেনা আছে। এর ফলে সম্পূর্ণ গ্রুপটির আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে।
এর প্রতিক্রিয়ায় আদানি গ্রুপের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতিবেদনটি 'ভুল তথ্যে ভরা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত'। প্রতিকারের জন্য তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতীয় আইন অনুযায়ী হিনডেনবার্গ রিসার্চের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ব্যবস্থা নেওয়ার পথে এগোচ্ছে।
এর মধ্যেই হিনডেনবার্গের অভিযোগের জবাবে জাতীয়তাবাদের আশ্রয় নিয়েছে বিজেপি সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এই গ্রুপটি। তারা বলেছে, আদানির ওপর আক্রমণ ভারতের ওপর আক্রমণের নামান্তর।
এক প্রতিক্রিয়ায় আদানি গ্রুপ বলেছে, 'এটা শুধু নির্দিষ্ট একটি কোম্পানির ওপর অনাকাঙ্ক্ষিত আক্রমণ নয়, এটা ভারতের স্বাধীনতা, অখণ্ডতা ও ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষার ওপর সুচিন্তিত আক্রমণ।'
Comments