মোদিকে নিয়ে তথ্যচিত্র

বিবিসির দিল্লি-মুম্বাই কার্যালয়ে রাতেও চলবে তল্লাশি

বিবিসির দিল্লি ও মুম্বাইয়ে কার্যালয়ে ভারতের কর কর্তৃপক্ষের তল্লাশি চলাকালে বাইরে সাংবাদিকদের ভিড়। ছবি: রয়টার্স

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে তথ্যচিত্র প্রকাশের কয়েক সপ্তাহ পর আজ মঙ্গলবার দিল্লি ও মুম্বাইয়ে বিবিসির কার্যালয়ে তল্লাশি শুরু করেছে ভারতের কর কর্তৃপক্ষ। 

রাতেও এ তল্লাশি চলবে এবং আগামীকাল পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মাসে বিবিসি প্রকাশিত একটি তথ্যচিত্রে ২০২২ সালে গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় মোদির ভূমিকা তুলে ধরা হয়, যা দেশটিতে 'বিতর্ক' সৃষ্টি করে। এর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আজ ভারতীয় কর কর্তৃপক্ষ বিবিসির নয়াদিল্লি এবং মুম্বাই অফিসে অভিযান চালায়।

কর্মকর্তারা বিবিসির দিল্লি-মুম্বাই অফিস সিল করে তল্লাশি চালাচ্ছে এবং সব ফোন, ল্যাপটপ এবং কাগজপত্র জব্দ করেছেন বলে জানা গেছে।

বিবিসির মুনাফা সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগে এ তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, কর কর্মকর্তারা বিবিসির ২০১২ সালের হিসাবের বিবরণী পরীক্ষা করছেন।

তল্লাশি শুরুর ছয় ঘণ্টা পর ল্যাপটপ পরীক্ষার পর কর্মীদের কার্যালয় ত্যাগের অনুমতি দেওয়া হয়।

বিবিসির এক সাংবাদিক এনডিটিভিকে বলেন, 'কর্মকর্তারা আমাদের কর্মীদের ডেস্কটপে লগ ইন করতে বলে এবং তারা "ট্যাক্স" শব্দ ব্যবহার করে তথ্য অনুসন্ধান করতে থাকেন।'

কর্মীদের মধ্যে যারা অফিসে নেই, তাদের দূরে থাকতে বলেছে বিবিসি এবং তল্লাশির বিষয়ে কর্মীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করতেও নিষেধ করেছে।

টুইটারে দেওয়া এক বিবৃতিতে বিবিসি জানায়, 'কর কর্তৃপক্ষ এখন নয়াদিল্লি ও মুম্বাইয়ের বিবিসি কার্যালয়ে আছে এবং আমরা সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছি।'

'আমরা আশা করছি যত দ্রুত সম্ভব এ পরিস্থিতির সমাধান হবে,' বিবৃতিতে বলা হয়।

কর কর্মকর্তারা অবশ্য জোর দিয়ে বলেছেন যে এটি 'তল্লাশি' নয় 'জরিপ' এবং ফোনগুলো ফেরত দেওয়া হবে।

কর কর্তৃপক্ষ সূত্র বলছে, 'আমাদের কিছু বিষয় স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন ছিল এবং এজন্য আমরা বিবিসি কার্যালয় পরিদর্শন করে একটি জরিপ চালাচ্ছি। আমাদের কর্মকর্তারা অ্যাকাউন্ট বই নীরিক্ষা করতে গেছেন, কিছু অনুসন্ধান করতে নয়।'

'কর্মকর্তারা ব্যালেন্স শিট এবং অ্যাকাউন্টের বিশদ বিবরণের জন্য বিবিসির অর্থ বিভাগকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে,' সূত্র জানায়।

ভারতের পার্লামেন্টের বিরোধী দল কংগ্রেস এ অভিযানের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, দেশে 'অঘোষিত জরুরি অবস্থা' চলছে।

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, মোদির শাসনামলে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এদিকে, ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এক মুখপাত্র বিবিসিকে 'ভারত-বিরোধী' প্রচারণার অভিযুক্ত করে বলেছেন, আইনগত প্রক্রিয়ায় এ অভিযান চালানো হচ্ছে এবং এ সময়ে যে অভিযান চালানো হচ্ছে, তার সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই।

গত মাসে বিবিসি দুই পর্বের একটি তথ্যচিত্র সম্প্রচার করে, যেখানে দেখানো হয়েছে যে ২০০২ সালে নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায় পুলিশকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় হামলা চালানোর নির্দেশ দিচ্ছেন।

ওই সহিংসতায় অন্তত এক হাজার মানুষ নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই সংখ্যালঘু মুসলিম।

তথ্যপ্রযুক্তি আইনের অধীনে জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করে ভারত সরকার তথ্যচিত্রটির লিঙ্ক শেয়ার করার ভিডিও এবং টুইট ব্লক করে।

সরকারের উপদেষ্টা কাঞ্চন গুপ্ত তথ্যচিত্রটিকে 'বিদ্বেষমূলক প্রচার এবং ভারত-বিরোধী আবর্জনা' বলে নিন্দা করেন।

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে তথ্যচিত্রটি দেখার আয়োজন করে।

জানুয়ারির শেষদিকে দিল্লি ইউনিভার্সিটিতে পুলিশ ওই তথ্যচিত্র প্রদর্শনী বন্ধ করে এবং বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে।

Comments

The Daily Star  | English

India, Pakistan agree ceasefire: Trump

US President Donald Trump on Saturday said that India and Pakistan have agreed to a "full and immediate ceasefire," amid both countries launching strikes and counter-strikes against each other's military installations

Now